নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১২ ফেব্রুয়ারি ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ী ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে প্রভাবশালীরা অবাধে পাথর উত্তোলন করছে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদরের টংকাবতি, রোয়াংছড়ির নোয়াপতং, লামা উপজেলার লাইনঝিরি, কাঁকড়া ঝিরি, হরিণ ঝিরি, টাকের পানছড়ি মৌজা, শীলের তোয়া, কাঁঠালছড়া, নন্দির বিল, ফাঁসিয়াখালী, রুমা, থানচি, আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করছে পাচারকারীরা। দীর্ঘদিন ধরে অবাধে পাথর উত্তোলন করার ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে জেলার পাহাড়ী-ঝিরি ও ঝর্ণা। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা সদরের টংকাবতী ইউনিয়নে মকবুল উকিল, কালু মেম্বার, আবদুর রহিম, রোয়াংছড়ি উপজেলায় আবুল বশর ড্রাইভার, থানচি উপজেলায় মং থোয়াই ম্যা রনি, আলীকদম উপজেলায় মোঃ আবুল কালাম বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের বাজালিয়া এলাকার জিয়া থানচির বিভিন্ন ঝিরি থেকে ভাসমান পাথর সংগ্রহের কথা বলে থাইক্ষ্যং ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন করে মেনরোওয়া পাড়া এলাকায় মজুদ করে রেখেছে। টংকাবতী ইউনিয়নের সারিংপাড়ার কারবারী পারিং ম্রো বলেন, পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পাশাপাশি পাহাড় মানুষের বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে।
আরও জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিভিন্ন ঝিরি থেকে ভাসমান পাথর সংগ্রহের কথা বলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাথর উত্তোলন করছে। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের পানির উৎস ঝিরিগুলো মরা ঝিরিতে পরিণত হচ্ছে। আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে মাংগু, তৈনফা মৌজা ও পামিয়া পাড়ার আশপাশের ঝিরি ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। পাথর উত্তোলনের ফলে পাহাড়ের ঝিরি ঝর্ণা শুকিয়ে যাওয়ায় পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে গত ৩১ জানুয়ারি জেলা সদরের টংকাবতী ইউনিয়নের তিনটি মৌজায় বসবাসকারীরা পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং মারমা জানান, অবৈধভাবে পাথর আহরণ বন্ধ না করলে পাহাড়ী ঝিরি ও ছড়ার পানি শুকিয়ে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী পানি সঙ্কটে ভোগবে। আরও জানা গেছে, জেলায় নির্দিষ্ট মেয়াদ এবং কি পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা যাবে তা নির্দিষ্ট করে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করা হয়। অনেকে মেয়াদ অমান্য ও পরিমাণের দশগুণ বেশি পাথর উত্তোলন করছে। অন্যদিকে অনুমোদন ছাড়া পাথর আহরণ নিষিদ্ধ হলেও ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর ঠিকাদার জেলা প্রশাসক থেকে কোন মতে একটি ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে এলাকার সব ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে। বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অপর্ণা বৈদ্য জানান, টংকাবতীতে আব্দুর রহিমকে এক মাসের জন্য ১৭ হাজার ঘন ফুটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, ৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ। আর কেউ যদি অনুমতি ছাড়া পাথর উত্তোলন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ বিপর্যয় ॥ শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণা
বান্দরবানে অবাধে পাথর উত্তোলন
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: