ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৪-১৫ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব দিয়েছে সরকার। এ হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব থেকে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা প্রাথমিক হিসাবে ছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। এটি এ যাবতকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হার। এর আগে দেশের ইতিহাসে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে হয়েছিল সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। সে সময় এ হার ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, গত অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ ছিল না। ফলে প্রবৃদ্ধি ঠিকই হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক হরতাল অবরোধ চলাকালীন সময়ে রাজধানীতে কোন পণ্যের অভাব হয়নি। কিন্তু সে অর্থে কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। তিনি জানান, ওই সময়ে দেশের রফতানি কার্যক্রম সচল ছিল। বিদেশী অর্ডার কমলেও কোন অর্ডার বাতিলের ঘটনা ঘটেনি। কিছুটা খরচ বেশি হলেও সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল বলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি স্বাভাবিক ছিল। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের যে পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, তা ঠিক নয়। কেননা এক মাস আগেই তো বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলেছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সুতরাং এক মাসের মধ্যে কি এমন ঘটনা ঘটল যে প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছয় দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় দশমিক শূন্য এক শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তার আগে ২০০১-০২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল তিন দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প ও সেবা খাতে আর কিছুটা কমেছে কৃষি খাতে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল আট দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল নয় দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল নয় দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেবা খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৫৮ শতাংশ। কৃষি খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল চার দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল দুই দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল তিন দশমিক শূন্য এক শতাংশ। সূত্র জানায়, এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নানা বাধা সত্ত্বেও গত ৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত) অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রাজস্ব আয়, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, বাজেট বরাদ্দ, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, দারিদ্র্যের হার এবং অতি দারিদ্র্যের হারসহ আরও বিভিন্ন সূচকে সাফল্য এসেছে। গত ৫ বছরে অতিদারিদ্র্যের হার ২৪.২ থেকে কমে ১০.৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরের তুলনামূলক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয় এ সময়কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝেও অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের দক্ষ সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে উর্ধগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা রজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রতিবেশী ও সমমানের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশেল ভাবমূতি উজ্জ্বল করেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সরকার দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যা গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। বর্তমানে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। সরকার পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে। সরকারের পূর্ব ও বর্তমান মেয়াদকালে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরের মেয়াদকাল এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময়কালের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিশ্ব মন্দার মধ্যেও সরকারের বিচক্ষণ নীতি ও দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদকালে গড়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয় ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ হারে। অপর দিকে তার আগের পাঁচ বছরে সময়কালে প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল পাঁচ দশমিক ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে চলতি মূল্যে জিডিপি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল চার লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে ড. আলম বলেন, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ২০০১ থেকে ০৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল স্বাভাবিক। এ সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশ। অথচ ওই সময়ে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হয় পাঁচ দশমিক চার শতাংশ। অপর দিকে ২০০৯ থেকে ১৪ সময়কালে বিশ্ব মন্দা বজায় থাকায় উন্নয়নশীল অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ।
×