ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশেই ধরা পড়েছেন ৩ যাত্রী

সোনা চোরাচালান রোধে অভিনব কৌশল রিজেন্ট এয়ারের

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

সোনা চোরাচালান রোধে অভিনব কৌশল রিজেন্ট এয়ারের

আজাদ সুলায়মান ॥ সোনা চোরাচালানে জড়িত যাত্রীদের অফলোড করছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এজন্য সোনার উৎস দেশগুলোর এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ চিঠি পাঠিয়ে এ ধরনের যাত্রীকে অফলোড করার অনুরোধ জানিয়েছে রিজেন্ট। এতে সিঙ্গাপুর, কলকাতা ও কুয়ালালামপুরে তিন যাত্রীকে সোনাসহ অফলোড করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেখানে সোনা চোরাচালান ঠেকাতে পারছে না, সেখানে রিজেন্টের এ অভিনব কৌশল মোক্ষম হাতিয়ারের মতো বিবেচিত হচ্ছে। এতে সোনার চালান ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে। সম্প্রতি রিজেন্টের উড়োজাহাজে কয়েকটা চালান ধরা পড়ায় ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার কারণে এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হয়। রিজেন্ট সূত্র জানায়, মূলত সোনার বড় বড় চালান আসে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হংকং ও ব্যাঙ্কক হয়ে। মাঝে মধ্যে এসব দেশ থেকে রওনা হয়ে অন্য দেশের ট্রানজিট যাত্রী সেজেও সোনার চালান আনা হয়। এ নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে- কিভাবে ওই সব দেশ থেকে এত বড় বড় চালান নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠার সুযোগ পায় যাত্রীরা। রিজেন্টের দুটো ফ্লাইটে সম্প্রতি দুটো চালান ধরা পড়ে। এসব চালানের দায়ভার রিজেন্টের ওপর চাপানোর চেষ্টা চালায় কাস্টমসসহ মিডিয়া। এরপরই ব্যবসায়িক ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে রিজেন্ট নিজেই এ উদ্যোগ নেয়। সোনার চালান নিয়ে যাতে কোন যাত্রী রিজেন্টের ফ্লাইটে ওঠতে না পারে সেজন্য চিঠি দেয়া হয় কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- ঢাকামুখী কোন যাত্রীর কাছে যদি সোনার চালান থাকে সেটা বৈধ হলেও, রশিদ থাকলেও তাকে যেন অফলোড (আটকে দেয়া) করা হয়। এ চিঠি পাওয়ার পর গত ২৬ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে সোনাসহ ধরা হয় আব্দুল গফুর এরফানুল (পাসপোর্ট নং এএফ-৮০৫৭৭৬৬) নামের ঢাকা অভিমুখী এক যাত্রীকে। তিনি চেক-ইন ক্রস করে যখন বোর্ডিং ব্রিজের কাছে ফাইনাল স্ক্যানিং করতে যানÑ তখনই তার লাগেজে ধরা পড়ে সোনার চালান। এ চালানে ছিল ১০ কেজি সোনা। তাকে আটকের পর সিঙ্গাপুর কাস্টমস তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, এটা বৈধভাবে কেনা। তিনি এর সপক্ষে রশিদও দেখান। তখন তাকে জানানো হয়, এত সোনা নিয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজে যাওয়া যাবে না। সেখানে বাধা পেয়ে গফুর এ সোনা নিয়ে কিছুতেই রিজেন্ট এয়ারওয়েজে ঢাকায় আসতে পারেননি। একইভাবে কলকাতা এয়ারপোর্টেও ধরা পড়েন দীপক ম-ল (পাসপোর্ট নং এডি-৫০৫৬৯৩১) নামের এক যাত্রী। তিনি গত ১০ নবেম্বর দ্রুক এয়ারলাইন্সে সিঙ্গাপুর থেকে কলকাতায় আসেন। সেখান থেকে এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় রওনা হন। কলকাতায়ও চেক-ইন করার পর বোর্ডিং ব্রিজের কাছে ফাইনাল স্ক্যানিং করার সময় তার লাগেজে ধরা পড়ে আড়াই কেজি ওজনের সোনা। তখন তাকেও আটকে দেয়া হয়। এ সময় দীপক প্রতিবাদ করেন- এ সোনা বৈধ ও কেনার রশিদ আছে। কেন তাকে অফলোড করা হলো। প্রতি উত্তরে তাকে সেখানকার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সোনার চালানসহ কোন যাত্রীকেই রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বহন করবে না। এ সম্পর্কে রিজেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, কলকাতার ঘটনা আরও বিস্ময়কর। দুপুরের দিকে রিজেন্ট ওই যাত্রীকে অফলোড করে তার সোনার চালান জিপলক করা হয়। যাতে এ সোনা নিয়ে দীপক অন্যকোন এয়ারলাইন্সে না যেতে পারে। সেখানে তখন বিমানের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে কলকাতা এয়ারপোর্টে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। কিন্তু পরে দেখা গেছে- সন্ধ্যা ছয়টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে দীপক ঢাকায় রওনা হন। এদিকে তার সম্পর্কে ঢাকার শুল্ক গোয়েন্দাকে খবর দেয়া হলে তারা ওই ফ্লাইট অবতরণের পরপরই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে দীপকের দেহ ও লাগেজ তল্লাশি করে। কিন্তু তার কাছে সোনা পাওয়া যায়নি। অথচ কলকাতা থেকে জানানো হয়েছে দীপক ওই চালান নিয়েই বিমানের ফ্লাইটে ওঠেছিলেন। প্রশ্ন ওঠেÑ তাহলে সোনার চালান গেল কোথায়? হতে পারে দীপক ফ্লাইটের ভেতর তার পরিচিত কোন সহযাত্রীর কাছে তা হস্তান্তর করেছেন। কাস্টমস যদি ওই ফ্লাইটের সব যাত্রীকে তল্লাশি করত তাহলেই ধরা পড়ত। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে সোনার চালান নিয়ে ঢাকায় আসার সময় ওখানকার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস শুধু দেখতে চায় এগুলো বৈধভাবে কেনার কাগজপত্র আছে কিনা। যে কারণে তারা তাতে বাধা দেয় না। কিন্তু রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক রুটের কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক ও কলকাতা এয়ারপোর্টে এ ধরনের যাত্রীকে উড়োজাহাজে ওঠার ক্লিয়ারেন্স না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখে। তারা তাতে সাড়া দেয়ায় এ দুজন যাত্রী ধরা পড়েছে। তবে ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্টে সেটা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ সেখানকার চেকিং সিস্টেম ভিন্ন। আশীষ রায় চৌধুরী জানান, রিজেন্ট নিজস্ব উদ্যোগে ঢাকাতেও দুটো চালান ধরিয়েছে। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পরপর দুটো সোনার চালান আটকে দিয়ে কাস্টমসকে খবর দেয়ার পর সেটা জব্দ করা হয়। অথচ কাস্টমস উল্টো রিজেন্টকেই সন্দেহের বশে দোষারোপ করার চেষ্টা চালায়। তিনি মনে করেন, সব এয়ারলাইন্স যদি রিজেন্টের মতো এ পদ্বতিতে চোরাচালানিদের অফলোড বা বর্জন করে- তাহলেই কেবল সম্ভব চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনা।
×