ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অদ্ভুত রোগ ট্রি-ম্যানে আক্রান্ত আবুলের হাত-পা দিয়ে গাছপালা গজিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

অদ্ভুত রোগ ট্রি-ম্যানে আক্রান্ত আবুলের হাত-পা দিয়ে গাছপালা গজিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে এই প্রথম ট্রি-ম্যান রোগী ধরা পড়ল। খুলনার পাইকগাছা থানার সরলবাতিখালী গ্রামের মানিক বাজনাদারের ছেলে আবুল হোসেন (২৬) এ রোগ নিয়ে শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসকরা এ রোগ দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। জীবনে এ ধরনের রোগী কখনও তারা দেখেননি। হাসপাতালে অনেক চিকিৎসক এ রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগী আবুল হোসেনের হাত ও পায়ের ভেতর দিয়ে যেন গাছের ডালপালা সদৃশ কিছু বেরিয়েছে। কারও কারও কাছে মনে হয় টুকরো টুকরো পাথর খ- বেরিয়েছে। হাতে যেন শেওলা গজিয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডাঃ সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশে এ রোগ প্রথম দেখলাম আমরা। এ রোগে আক্রান্ত আর কোন রোগী আছে কিনা, তা জানা নেই। তিনি জানান, ইন্টারনেট ঘেঁটে আমরা জানতে পেরেছি এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ট্রি-ম্যান বলা হয়। এ রোগ হিউম্যান প্যাপেরাস ভাইরাসজনিত কারণে হতে পারে। আবার অন্য কারণেও হতে পারে। ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, পৃথিবীতে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে এখন পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকজনকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়া, রোমানিয়া এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে দেখা গেল এ রোগটি। মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে আবুল হোসেনের চিকিৎসা সেবাও দেয়া হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, খুলনার পাইকগাছার সরলবাতিখালী গ্রামের মানিক বাজনাদারের ছেলে আবুল হোসেন আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। ঘরে রয়েছে তাহেরা নামে এক কন্যাসন্তান। বিরল এক রোগে আক্রান্ত আবুল হোসেনকে শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান তার মা আমেনা ও বড় বোন আদুরি। রোগী আবুল হোসেন জানান, ‘প্রায় দশ বছর আগে আমার শরীরে আঁচিল ওঠে। পরবর্তীতে আঁচিলগুলো হাতে উঠতে থাকে। এ সময় আমি হোমিওপ্যাথি খাইতাম। আবুল হোসেন আরও জানান, তখন ভ্যানগাড়ি চালাইতাম। পরে আঁচিলগুলো বড় হতে থাকে। হাতের আঙ্গুলগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকলে পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। সে সময় চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেন, যা আমি নিয়মিত খেতে থাকি।’ আবুল হোসেন আরও জানান, ‘এক সময় আমার হাতের আঙ্গুল দিয়ে গাছের শেকড়ের মতো বের হতে থাকে। যেন শেওলার মতো। তখন থেকে নিজের কাজ করতে পারি না। এমনকি টয়লেটে গেলেও স্ত্রী বা মায়ের সাহায্য নিতে হয় আমাকে।’ তিনি জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে চিকিৎসা নিতে কলকাতা যান। এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার কলকাতায় গেছেন। ভিক্ষা করে কলকাতা যাওয়ার খরচ যোগাড় করেন তিনি। রোগী আবুল হোসেন জানান, ‘আমি কলকাতায় একটি হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে জানান ওষুধে কাজ হবে না; সার্জারি প্রয়োজন।’ পরে খুলনার চিকিৎসকদের উদ্যোগে তার মা ও বোন তাকে ঢামেকে ভর্তি করিয়েছেন।
×