ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চবির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

চবির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তন আজ

রহমান শোয়েব, চবি ॥ সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন। দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। আর গ্রাজুয়েটদের বরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট আলোকসজ্জা করা হয়েছে। রংবেরঙের পতাকা দিয়ে সাজান হয়েছে রাস্তার দু’ধার। রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে লাগান হয়েছে দিকনির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড। অনুষ্ঠানস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বানান হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। মাঠের পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয়েছে হ্যালিপ্যাড। যেখানে রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করবে। এছাড়া আইন অনুষদের সামনে বসান হয়েছে প্রায় ৭০টি বুথ। যেখান থেকে আজ সমাবর্তনের দিনও গ্র্যাজুয়েটরা তাদের সমাবর্তন গাউন ও খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি বেলা আড়াইটায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হবে। এর আগে বেলা ২টায় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ আসন গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করার পর হবে শোভাযাত্রা। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। তারপর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণার পরই স্বাগত বক্তব্য রাখবেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। উপাচার্যের স্বাগত বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি তিনজনকে ডিগ্রি প্রদান করবেন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। এরপর রাষ্ট্রপতি ও উপাচার্য পরস্পর ক্রেস্ট বিনিময় করবেন এবং তারপর রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখবেন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। এদিকে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানস্থল ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশে উপস্থিত থাকবেন। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড টিমসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা শনিবার অনুষ্ঠানস্থলে মহড়া দিয়েছেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য পৃথক কয়েকটি গেট করা হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানস্থলের পূর্ব পাশের গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। অন্যদিকে সাধারণ গ্র্যাজুয়েটরা অনুষ্ঠানস্থলের উত্তর পাশের গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। এদিকে গত শুক্রবার থেকেই গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তন গাউন বিতরণ শুরু হয়েছে। শনিবারও গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে সমাবর্তন গাউন সংগ্রহ করেন। তবে আজ অনুষ্ঠানের দিনও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তন গাউন সংগ্রহ করতে পারবেন। আজ রবিবার সকাল দশটা থেকেই আইন অনুষদ সংলগ্ন বুথসমূহ থেকে গাউন ও খাবার বিতরণ করা হবে। গ্র্যাজুয়েটরা নিজেদের গাউন ও খাবার সংগ্রহ করে বেলা ১টার মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করবেন। অনুষ্ঠান শেষে সমাবর্তন গাউন ফেরত দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন গ্র্যাজুয়েটরা। তবে যথাসময়ে গাউন ফেরত না দিলে পরবর্তীতে বিলম্ব মাসুল দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হবে। এছাড়া ৪র্থ সামবর্তন অনুষ্ঠানকে ঘিরে শনিবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবের শুরু হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটরা সমবার্তন গাউন সংগ্রহ করে তা গায়ে চাপিয়ে ফটো সেশনে মেতে উঠেছেন। দলবেঁধে ঘুরেফিরে করছেন হইহুল্লোর। সাথে সেলফি তো থাকছেই। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে এসে পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলিত হতে পেরে যেন তাদের আনন্দ বাঁধ ভেঙেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়িগুলোতে চায়ের টেবিলে সাবই মিলে যেন ঝড় তুলেছেন। একে অপরের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি চলছে পারস্পরিক খুনসুটি। এমনটি চলবে আজ সমাবর্তনের দিন পর্যন্ত। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বদ্যিালয়ের কলা অনুষদের ঝুপড়ি ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে চবি প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে শুধুমাত্র কলা অনুষদের ঝুপড়ি খোলা থাকবে।’ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সকল মন্ত্রী, এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান ও সাবেক মেয়র, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের উপাচার্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন প্রক্টর। তবে সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের ক্যাপ না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্র্যাজুয়েটরা। একাধিক গ্র্যাজুয়েট এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের জন্য একটি আনন্দের ও স্মরণীয় বিষয়। কিন্তু সামবর্তন গাউনের সঙ্গে ক্যাপ না দেয়ায় সে আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েটদের ক্যাপ দেয়া হলেও চবিতে তা দেয়া হয়নি।’ ক্যাপ টাই না দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে চবি রেজিস্ট্র্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সমাবর্তনের সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল হুদা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না থাকায় আমরা ক্যাপ দিচ্ছি না। ভবিষ্যতেও ক্যাপ দিতে হলে তা আগে সিনেটে পাস করিয়ে নিয়ম করে নিতে হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘কনভোকিদের জন্য আমরা সুভ্যেনিয়র, স্পেশাল সার্টিফিকেট ব্যাগ এবং কোট পিনের ব্যবস্থা করেছি। যা সার্টিফিকেট নেয়ার সময় কনভোকিদের দেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে আমরা আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
×