ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিনে তথ্য

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজই দেশসেরা সরকারী হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজই দেশসেরা সরকারী হাসপাতাল

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সেরা সরকারী হাসপাতালের মান অক্ষুণœ রেখেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ ছাড়া শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। জেলা পর্যায়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থায়ন, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সরবরাহ; স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা সর্বোপরি নেতৃত্ব ও সুশাসনের ভিত্তিতে দেশের সরকারী হাসপাতালের একটি র‌্যাঙ্কিং করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিনে (২০১৫) এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারী হাসপাতালগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এটি করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায়, যাতে সহায়তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ কার্যালয়। ছয়টি মানদ-ের ভিত্তিতে তিনটি পৃথক শ্রেণীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ১৪৫ হাসপাতাল তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টারশিয়ারি ১৫, জেলা পর্যায়ের ২৫ ও উপজেলা পর্যায়ের ১০৫ হাসপাতাল। সেবার মানে দেশের সেরা টারশিয়ারি (তৃতীয় পর্যায়ভুক্ত) হাসপাতালের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় টপ-৫ তালিকায় রয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা ৫০০ বেড জেনারেল হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আর তৃতীয় টপ-৫ তালিকায় স্থান পেয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এ্যান্ড ইউরোলজি, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। জেলা পর্যায়ের টপ-১০ ॥ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর মধ্যে টপ-১০ এ স্থান পেয়েছে কুষ্টিয়া জেলা হাসপাতাল, নরসিংদী জেলা হাসপাতাল, ঝিনাইদহ জেলা হাসপাতাল, গাজীপুর জেলা হাসপাতাল, জয়পুরহাট জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল, পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল, লালমনিরহাট জেলা হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল। আর দ্বিতীয় টপ-১০ এর তালিকায় রয়েছে লক্ষ্মীপুর, নাটোর, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, নড়াইল, নীলফামারী, পঞ্চগড়, মেহেরপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা হাসপাতাল। উপজেলা পর্যায়ের টপ-১০ ॥ উপজেলা পর্যায়ের টপ-১০ তালিকায় রয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী ও সাঁথিয়া, জয়পুরহাটের কালাই, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, মাদারীপুরের কালকিনি, কুড়িগ্রামের উলিপুর, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, বরিশালের উজিরপুর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আর দ্বিতীয় টপ-১০ এ স্থান পেয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, নাটোরের সিংড়া, নরসিংদীর রায়পুরা ও মনোহরদী, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া, নাটোরের বাগাতিপাড়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, নরসিংদীর শিবপুর ও বরিশালের হিজলা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চায় সরকার । এ লক্ষ্য সামনে রেখে সরকারী হাসপাতালগুলোর র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলোয় কর্মরতদের মধ্যে সাধারণ জনগণকে সেবা দেয়ার মনোভাব বাড়বে। অন্যান্য হাসপাতালের কর্মীরা এদের দেখে আরও ভাল করতে উৎসাহী হবেন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও সরকারী হাসপাতালগুলোয় কীভাবে স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন করা যায়। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট মানদ- অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন ডাটাবেজ সিস্টেমে নিয়মিত তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। ভিত্তি মানের সঙ্গে হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কতটুকু মানোন্নয়ন হয়েছে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের প্রায় সব সরকারী হাসপাতাল এ কার্যক্রমে অংশ নেয়। তবে অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেমে প্রদান করা তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা পর্যায়ের ১০৬, জেলা পর্যায়ের ২৫ ও টারশিয়ারি ১৫ হাসপাতাল সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায়। পরবর্তীতে অনলাইনে দেয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এসব হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের নেতৃত্বাধীন মূল্যায়ন কমিটি কার্যক্রমটি পরিচালনা করে। পরিদর্শনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন বিভাগ, আইসিডিডিআর,বি, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয় ও বেসরকারী খাতের চিকিৎসকসহ ৪১ কর্মকর্তার সমন্বয়ে আটটি দল গঠন করা হয়। হাসপাতালগুলোর মূল্যায়নে রাখা হয় মোট ৩০০ নম্বর। তিন ভাগে এ নম্বর বরাদ্দ ছিল। অনলাইনে নিয়মিত তথ্য প্রদানের জন্য ১০০, হাসপাতালের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনে ১০০ ও রোগীর সন্তুষ্টি যাচাই জরিপে বাকি ১০০ নম্বর রাখা হয়। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়নে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অনলাইনে তথ্যের ক্ষেত্রে ২০, পরিদর্শনে ৬০ ও জরিপের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করা হয়। চূড়ান্ত মূল্যায়নের পর দেখা যায়, হাসপাতালগুলোর প্রাপ্ত ফল প্রায় কাছাকাছি। এ জন্য প্রতিটি শ্রেণীর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ অথবা শীর্ষ ১০ হিসেবে তালিকা করা হয়েছে।
×