ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাগাতার ধর্মঘটে অচল দিনাজপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

লাগাতার ধর্মঘটে অচল দিনাজপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ উত্তরবঙ্গের একমাত্র ডায়াবেটিস হাসপাতাল ‘দিনাজপুর আঞ্চলিক ডায়াবেটিস ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল’টি চিকিৎসকদের লাগাতার ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে। এতে করে বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের ৫ম দিনেও রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বেডে রোগী নেই। সেবা না থাকায় চলে গিয়েছেন অনেকে। বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ২৪ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসকরা ধর্মঘট শুরু করেন। ১৩ ডাক্তারের মধ্যে মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে চলছে জরুরী বিভাগের কাজ। চিকিৎসকদের ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের হাজার হাজার রোগী। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গিয়েছেন বেশিরভাই রোগী। কোন উপায় না থাকায় সেবা না পেলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থেকে গেছেন ২০ রোগী। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা থেকে আসা মোসলেম আলী ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানান, ধর্মঘটের কারণে তিনি কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ভিটেমাটি বন্ধক দিয়ে চিকিৎসা করতে এসেছিলেন। এখন কি করবেন বুঝতে পারছেন না। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের শামসুল হক (৭০) জানান, তাকে নীলফামারী থেকে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি তিনি এখানে এসেছেন। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে ৫ দিন ধরে তিনি কোন সেবা পাচ্ছেন না। কিন্তু হাসপাতালের খরচ দিতে হচ্ছে ঠিকই। এদিকে বুধবার বিকেলে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে জেলা ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে। এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল হক ছুটু বলেন, ৬৫ হাজার রেজিস্ট্রার্ড ডায়াবেটিক রোগী ও অসংখ্য নন ডায়াবেটিক রোগীকে জিম্মি করে কোন ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়াই চিকিৎসকরা অন্যায় ও অযৌক্তিক কর্মবিরতি শুরু করেছেন। রোগীদের জিম্মি করে এই কর্মবিরতি নৈতিকতা বিবর্জিত। এই অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য ধর্মঘট মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস উন্মুক্ত করার যে অনৈতিক দাবি করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। নিজেদের স্বার্থের জন্য সান্ধ্যকালীন, শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিনে ডায়াবেটিক হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। যা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। রোগীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ছুটির দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২ জন অতিরিক্ত চিকিৎসককে দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। সেখানেও ধর্মঘটি চিকিৎসকরা বাধা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, কর্মরত চিকিৎসকদের অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন ও চাকরি নীতিমালার ব্যাপারে ২২ জানুয়ারি ৩ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনায় সব দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়। চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা ও সামর্থ্য অনুযায়ী জুন পর্যন্ত চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরও চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অযৌক্তিক। দিনাজপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আলতাফ হোসেন বলেন, ডায়াবেটিস এ্যাসোসিয়েশনের দুর্নীতি ও ব্যর্থতায় হাসপাতালটি আজ ধ্বংসের দিকে।
×