ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিরণয় এ্যালামনাই মেলবন্ধনে মুখর ঢাবি খেলার মাঠ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

হিরণয় এ্যালামনাই মেলবন্ধনে মুখর ঢাবি খেলার মাঠ

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের একপাশে অভিজাত ঢঙে সাজানো মঞ্চে গান পরিবেশনা চলছে। ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়’। এই গানে ঠোঁট মিলিয়ে গাইছেন মঞ্চের সামনের পুরো মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব এলামনাই। বয়স পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর কিংবা আশি তাতে কি? তারা যেন ফিরে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তারুণ্যের দিনগুলোতে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে হারানো দিনগুলোকে এমনিভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন এলামনাইরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবছর পূর্তির প্রাক্কালে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে ‘হিরণ¥য় এ্যালামনাই মেলবন্ধন।’ এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সেজেছিল অন্যরকম এক দৃশ্যে। খেলার মাঠের সবদিক সাজানো হয়েছিল। একপাশে বিশাল মঞ্চ। ছিল কঠোর নিরাপত্তা। জমায়েত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইরা। খেলার মাঠ পরিণত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের মিলনমেলায়। সকাল আটটা বাজতেই খেলার মাঠে এ্যালামনাইদের পদভারে মুখর হতে থাকে। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে সবাই এসে উপস্থিত হন পুরনো দিনের সম্পর্কগুলোর সাথে একটু ভাল সময় কাটাতে। চলতে থাকে পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা ও শুভেচ্ছা বিনিময়। বেলুন উড়িয়ে ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা। জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ এ্যালামনাই মেসবাহ উল বারী চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনটির সভাপতি রকিবউদ্দিন আহমেদ। এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকিবউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মহাসচিব দেওয়ান রাশিদুল হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একাল সেকাল নিয়ে বিশেষ বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের খাবারের পর বিকেল তিনটায় শুরু হয় শীতকালীন আড্ডা। সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নারী এ্যালামনাই ১৯৪২ সালের ছাত্রী আফিয়া দিল স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আজ মনে হচ্ছে সেই দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি, অতীতের সেই দিনগুলোতে। সেই সময়ে যেসব স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজ তা পূরণ হয়েছে। জীবনে কি করলাম সেটি মূল কথা নয়, কি পেলাম সেটিই মূল। এরপর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন এ্যালামনাইয়ের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য মেসবাউল বারী চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার কেবল বার বার মনে হচ্ছে আমি ছাত্র জীবনে ফিরে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষার পরিবেশও পাল্টে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আগের থেকে সম্মানজনক অবস্থানে আছে কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধ আগের থেকে কমেছে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ দিনে অতীদের দিনগুলোতে মিশে যেতে চাই। প্রাণভরে পুরনো মানুষগুলোকে দেখতে পারছি। এতে নতুন করে আবারও সবকিছু দেখতে পাই। হারিয়ে যায় অতীতের সেই পুরনো দিনগুলোতে। তিনি আরও বলেন, ১৯২১ সালে ছোট্ট একটি চারা রোপণ করা হয়। সেই সময়ে পরিসর খুব ছোট ছিল। কিন্তু ছোট্ট চারাটি মস্তবড় হয়েছে। সেই সময়ে শিক্ষক ছিল ৮৬, বর্তমানে শিক্ষক দুই হাজার। ১২ বিভাগ ছিল, এখন ৯০ আর ১৩ অনুষদ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিনব বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের যা কিছু অর্জন সব সমাজ ও জাতির প্রয়োজনে। সঙ্কটে পড়লে মা যেমন মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি জাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটের হাত বুলিয়েছেন। একাল-সেকাল বিতর্ক ॥ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাল-সেকাল নিয়ে প্রাণবন্ত বিতর্কের আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়কে সেকাল ও পরবর্তী সময়কে একাল বিভক্ত করে শুরু হয় এই বিতর্ক। ‘একাল ভাল নাকি সেকাল ভালো’ বিতর্কে একালের পক্ষে অবস্থান নেন সেকালের (পঞ্চাশের দশকের) শিক্ষার্থীরা। আর সেকালের পক্ষে অবস্থান নেন একালের (স্বাধীনতা পরবতী) শিক্ষার্থীরা। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একালই ভাল’র পক্ষে অবস্থান নেন সেকালের মূলত পঞ্চাশের দশকের তিন শিক্ষার্থী অধ্যাপক অজয় রায়, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও তালেয়া রহমান।
×