ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ১৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে

অতিরিক্ত ফি নিলে এমপিও বাতিল হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

অতিরিক্ত ফি নিলে এমপিও বাতিল হবে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ভর্তি, পুনর্ভর্তি ও বেতন আদায়ের কারণে চরম ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬শ’ কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন মানছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বেতন কাঠামো। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ভর্তি, পুনর্ভর্তি, বেতন ও বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত চার্জ আদায় করেছে তা অনতিবিলম্বে ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ সিদ্ধান্তের কোন ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে অভিযোগের ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এদিকে, অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক অথবা তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিকে তলব করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক অথবা তাদের নিয়োজিত প্রতিনিধির সঙ্গে বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫টি স্বনামধন্য কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুলসহ বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যমের আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় বন্ধ করতে নোটিস করা হয়েছে। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ১৭টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ২০১৬ সালের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি ও অন্যান্য ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চট্টগ্রামের সকল বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধানদের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বুধবার তলব করা হলেও অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের দফতরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ জমা পড়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলা হচ্ছে-পতেঙ্গার বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বেপজা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কেওয়াইডব্লিউসিএ প্রাইমারী স্কুল, গানাস ইংলিশ স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, এএল খান উচ্চ বিদ্যালয়, মাদার বাড়ি আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, পাহাড়তলী বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাইট মুন উচ্চ বিদ্যালয়, ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, জামালখান আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সিটি কর্পোরেশনের ৪৬ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি স্কুল। জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ ও উপ সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ গত ১৭ জানুয়ারি এক ফ্যাক্স বার্তায় জেলা প্রশাসকের দফতরে পৌঁছে। এই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়ে সরকারী নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বরং নির্দেশনা ব্যতিরেকে বর্ধিতহারে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডি অথবা ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪১(২)(খ)(২) নং বিধি মেনে চলার কথা। এমনকি সরকারের নির্দেশনা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট হতে বেতন ও ফিসের হার নির্ধারণ করবেন। ওই আদেশে আরও বলা হয়েছে সরকার কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার অচিরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের জন্য সেশন ফি বাবদ সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা এবং ঢাকার জন্য ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের সেশন ফি গত বছরের তুলনায় কোন অংশেই যেন বেশি না হয়। এক্ষেত্রে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেশন ফির ক্ষেত্রে নাম পাল্টে অন্য ধরনের ফি আদায়ের অপচেষ্টা করলেও ওই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্তসহ অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী দশ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ভর্তি ফি, পুনর্ভর্তি ও অন্যান্য ফি বাবদ কি পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়েছে এবং গত বছর এ খাতে কি পরিমাণ অর্থ আদায় হয়েছে তার হিসাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত সতর্কতা চিঠি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও এডিসি শিক্ষাকে মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশের কপি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য এমনকি টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে স্ক্রল নিউজ হিসেবে দেখানোর জন্য মিডিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, কোনভাবেই সরকারী নির্দেশেনার বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান ভর্তিসহ নানা অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায় করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ওই সকল প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে উপযুক্ত প্রমাণসহ নথিপত্র প্রেরণ করা হবে। আগামী দশ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ অতিরিক্ত ফি ফেরত প্রদানসহ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ২০১৬ সালের ভর্তি বাবদ আদায়কৃত অর্থের বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের তালিকা করা হবে।
×