ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরির শেষ দিনে লাঞ্ছিত শেবাচিমের উপ-পরিচালক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

চাকরির শেষ দিনে লাঞ্ছিত শেবাচিমের উপ-পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ শেষ কার্যদিবসে কর্মচারীদের হাতে অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত হয়ে কর্মজীবন থেকে বিদায় নিতে হলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলামকে। সদ্য নতুন নিয়োগ দেয়া অতিরিক্ত কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় সই না করার অপরাধে সোমবার দুপুরে তাকে টানাহেঁচড়া করে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজ কক্ষে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখা হয়। পরে জোরপূর্বক ২২৬ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতায় সই নেয়ার পর তাকে মুক্ত করা হয়। ঘটনার সময় হাসপাতালের পরিচালক ও পুলিশের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের মতো। অপরদিকে সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পার-২ এর অধিশাখার পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলামের শেষ কর্মদিবস ছিল। ওই দিন দুপুর একটার দিকে তিনি কিছু জরুরী কাগজপত্র নিতে তার কর্মস্থল শেবাচিম হাসপাতালে আসেন। পরে দুপুর দুইটার দিকে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রাইভেটকারে ওঠে নিজ বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সময় হাসপাতালের অফিস সহায়ক মনির, মামুন ও জাকারিয়াসহ অর্ধশতাধিক কর্মচারী উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলামকে জোরপূর্বক তার গাড়ি থেকে নিচে নামিয়ে আনেন। এ সময় উপ-পরিচালক পুনরায় নিজ প্রাইভেটকারে উঠলে দ্বিতীয় দফায় তাকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে কর্মচারীরা পরিচালকের দফতরে সামনের ও পেছনের গেটে তালা দিয়ে পুরো প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এলেও তারা ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শতাধিক কর্মচারী উপ-পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক তাদের বেতন-ভাতায় সই করিয়ে তালা খুলে দেন। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের অভিযোগ, সস্প্রতি তারা নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তাদের বেতন-ভাতায় সই করেননি উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম। এ কারণে তাদের চাকরিজীবন হুমকির মুখে পড়ে। ফলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এ বিষয়ে উপ-পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, তিনি ১৭২ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতায় সই করতে রাজি ছিলেন। অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৪ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতায় সই করতে রাজি ছিলেন না। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে ঘটনার সময় হাসপাতালের পরিচালক অনেকটা নীরব ভূমিকায় ছিলেন। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পার-২ এর অধিশাখার পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে পরিচালক, উপ-পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সচিব সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম ও উপসচিব (পার-২) একেএম ফজলুল হকের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম করার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় নিয়োগ কমিটির সভাপতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্বরত ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন ফারুক, উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
×