ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একটিরও বিচার হয়নি ॥ অনেকেই বাড়ি ছাড়া

মাদারীপুরে ১ বছরে ১৮০ নারী-শিশু নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

মাদারীপুরে ১ বছরে ১৮০ নারী-শিশু নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৪ জানুয়ারি ॥ মাদারীপুরে ২০১৫ সালে অর্থাৎ এক বছরে ১৮০টি ধর্ষণ-গণধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও গ্রেফতার হচ্ছে না মূল আসামিরা। নির্যাতনের শিকার হয়ে মামলা করে আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে বাড়িঘর ছেড়েছে কেউ কেউ। এসব মামলায় পুলিশের কার্যকরী কোন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও নারীনেত্রীরা। নির্যাতিত পরিবারকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির। পুলিশ বলছে, দায়িত্ব নিয়েই আসামি ধরা হচ্ছে। পরিসংখ্যান জানা গেছে, ২০১৫ সালে মাদারীপুর সদর থানায় ৮টি ধর্ষণ ও ৪৫টি নারী-শিশু নির্যাতন, কালকিনি থানায় ১টি ধর্ষণ ও ৫১টি নারী-শিশু নির্যাতন, ডাসার থানায় ১টি ধর্ষণ ও ৫টি নারী-শিশু নির্যাতন, শিবচর থানায় ১৩টি ধর্ষণ ও ২১টি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং রাজৈর থানায় ৫টি ধর্ষণ ও ৩০টি নারী-শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় মাদারীপুরের কালকিনির পান্তাপাড়া গ্রামের রেশমা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মুখে সুপার গ্লু দিয়ে নির্যাতন চালানোর ঘটনায় স্বামী চান মিয়া ওরফে আকাশ তালুকদার আজও গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া ২০ নবেম্বর একই উপজেলার বালিগ্রামের ইউনিয়নের ঘুঙ্গিয়াকুল গ্রামের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার এক পরীক্ষার্থী ও তার খালাকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। এলাকার আতাউর ও তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পর আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে বাড়িঘর ছেড়েছে অসহায় পরিবারটি। সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকা- ঘটে এ বছরের ১৩ আগস্ট মাদারীপুরের মস্তফাপুরে। মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপী আক্তারকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে একই এলাকার রানা নাগাসীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ মামলায় রকিব, শিপন ও রফিকুল গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে ওই দুই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে দফায় দফায় হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি এ ঘটনার ৪ মাস পেরোলেও মামলার চার্জশীট দাখিল করা হয়নি। এছাড়া একাধিক গৃহবধূকে বাড়িতে একা পেয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণধর্ষণ এবং শিশু ধর্ষণের মামলার কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই পুলিশের। মাদারীপুর মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন লাকী বলেন, ‘শিবচরের বন্দরখোলা ইউনিয়নের রাজারচর এলাকায় এক গৃহবধূকে বাড়িতে একা পেয়ে গণধর্ষণ, সদরের পশ্চিম খাগদী এলাকায় চকোলেট কিনে দেয়ার লোভ দেখিয়ে ৭ বছরের এক শিশু ধর্ষণসহ মাদারীপুরের ৫টি থানায় ২০১৫ সালে ২৮টি ধর্ষণ মামলা ও ১৫২টি নারী-শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ আসামি এখনও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ মাদারীপুর দায়রা ও জজ আদালতের আইনজীবী বোরহানুস সুলতান বলেন, ‘কোন ঘটনার শুরুতেই পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। আবার কখনও মামলা নিলে আসামি ধরায় দায়িত্ব অবহেলা করে।’ মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মোঃ এমরান লতিফ বলেন, ‘যে সকল নির্যাতিত পরিবার থানায় আইন সহায়তা পান না, তাদের আদালতের আশ্রয় নেয়া উচিত। মূলত অপরাধের শিকার কিংবা নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো অসহায় হওয়াতে আসামিরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাই দ্রুত আইনী সহয়তা নেয়ার জন্য তাদের আদালতে আসতে হবে।’ মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘পুলিশ সর্বত্রই দায়িত্ব নিয়ে আসামি ধরে থাকেন। আর মামলার চার্জশীট দেয়ায় ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা যতদিন প্রয়োজন মনে করেন ততদিন পর্যন্ত এ মামলার চার্জশীট হাতে রাখতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্নস্থান থেকে পুলিশ চিহ্নিত আসামিদের ধরতে সক্ষম হয়েছে।’
×