ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানব সম্পদে অর্থায়ন বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

মানব সম্পদে অর্থায়ন বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ কারিগরি শিক্ষা প্রদানে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পাবে বিশেষ সুবিধা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা) প্রথমে ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দিলেও পরে এটা বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে দ্বিতীয়বারের মতো সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ফলে এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৭৭৮ কোটি দুই হাজার টাকা। আর দুই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ ও অনুদান মিলে মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৫৫০ কোটি ৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গৃহীত ‘স্কিল এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ (এসটিইপি) বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংক ও সিডার সহায়তার বাইরে ২৩২ কোটি ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনক) বৈঠকে সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সফলতার পথ ধরেই উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের সহায়তা বাড়াচ্ছে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। এতে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে, যা মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি। একনেকে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হলেই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সার্বিকভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। সরকার টেকনিক্যাল এ্যান্ড ভকেশনাল এডুকেশন এ্যান্ড ট্রেনিং খাতকে ফোকাস খাত হিসেবে গণ্য করছে। যাতে দেশে ও বিদেশে চাহিদা আছে এমন খাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনশক্তি যোগান দেয়া যায়। এ লক্ষ্যে সরকার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তা কাজে লাগাতে বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো এ চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা, যন্ত্রপাতির অভাব ও অপ্রতুল অবকাঠামো ইত্যাদি। এসব বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট মাপকাঠির ভিত্তিতে নির্বাচিত ডিপ্লোমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যথা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং এসএসসি ভোকেশনাল কার্যক্রমে যথাযথ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংক এবং সরকারী তহবিলের অর্থায়নে ৬৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তী সময়ে কানাডিয়ান সিডা থেকে প্রাপ্ত অনুদান হিসেবে ১৩৪ কোটি ৭২ লাখ ১৯ হাজার টাকা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এবং পরিবর্তিত মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে পাস হয়। সে সময় মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ প্রকল্পটি কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক অতিরিক্ত ১০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়। ফলে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় যোগ্য হিসেবে বিবেচিত সরকারী ও বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কম-বেশি ৫০ শতাংশকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে বৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে।
×