ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে খালেদা জিয়া

আওয়ামী লীগ এখন শুধু স্বৈরাচারী দল নয়, ডাইনি বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২ জানুয়ারি ২০১৬

আওয়ামী লীগ এখন শুধু স্বৈরাচারী দল নয়, ডাইনি বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, ভোট ডাকাতি করে পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, কোন সরকারেরই স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার কোন সুযোগ নেই। এ সরকারও ক্ষমতায় চিরদিন থাকতে পারবে না। খুব শীঘ্রই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং জনগণ ভোট দিতে পারলে সরকার পরিবর্তন হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শীঘ্রই ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে এবং সে কমিটিতে যোগ্যদের স্থান দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। পৌর নির্বাচনে পুলিশকে সরকার দলীয় বাহিনীর মতো কাজে লাগিয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। তবে আমি পুলিশ বাহিনীর দোষ দেব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সরকার আসবে, সরকার যাবে কিন্তু, আপনাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। খুব শীঘ্রই নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে। সরকারের পরিবর্তন হলেও আপনাদের থাকতে হবে। আর আমরা ক্ষমতায় আসলে আপনাদের বাদ দেয়া হবে না। প্রশাসনের যারা যোগ্য তাদের প্রমোশন দেয়া হবে। দেশে গণতন্ত্র নেই চলছে রাজতন্ত্র অভিযোগ করে তিনি বলেন, অতি দ্রুত অত্যাচারী সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পৌর নির্বাচনকে হাসিনা-রাকিব মার্কা নির্বাচন আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ভোট ডাকাতি, ছিনতাই ও কারচুপির মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ায় আমরা এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা এ নির্বাচন মানি না। জনগণও মানে না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হতো। তিনি পৌর নির্বাচনে বিজয়ে আওয়ামী লীগকে খুশি না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর পেছনে কারা ছিল তা দেশবাসী জানে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সুতরাং এ বিজয় বিজয় নয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর শুধু স্বৈরাচারী দল নয়, তারা ডাইনি বাহিনী ও রক্তপিপাসু। রক্তের প্রতি তাদের নেশা হয়ে গেছে। রক্ত দেখলে তারা খুশি হয়। তাই দেশে এত সংঘাত সহিংসতা। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গু-াবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চায় তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারলে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় যাবে। খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্রদলের কাউকে আমরা ফেলে দিতে চাই না। শুধু বয়স হয়ে গেছে, এজন্য ছাত্রদলে আর জায়গা পাবে না তা নয়, মূলদল আছে, আছে আরও অঙ্গ সংগঠন সেখানে তাদের জায়গা হবে। তাই যারা ছাত্রদলে স্থান না পাবে তারা যেন আন্দোলন না করে অন্য জায়গায় স্থান করে নেয়ার চেষ্টা করে আমি সে আহ্বান জানাব। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মানুষের সঙ্গে মেশার উপদেশ দিয়ে তাদের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, নিজেকে আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে। আশা করি তোমরা তোমাদের জায়গাটি তৈরি করতে পারবে। কোন সিনিয়র নেতা এলাকায় থাকলে তার সঙ্গে কোন প্রতিযোগিতা নয়, তার সঙ্গে বিভেদ নয়, তাকে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে। আমরা চলে যাব। তোমরা যাতে আমাদের জায়গা পূরণ করতে পার সেইভাবে তোমাদের তৈরি হতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সব দখল করে নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ নেই। শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। কিন্তু ছাত্রলীগ শিক্ষকদের অসম্মান করছে। সেখানে তোমরা যারা ছাত্রদলের নেতাকর্মী আছ সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে তোমাদের প্রতিবাদ শুরু করতে হবে। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, ইলিয়াস আলীকে কিভাবে গুম করা হয়েছে, সেটা দেশের মানুষ দেখেছে। ইলিয়াস আলী ছিল রাজপথের একজন পরীক্ষিত নেতা। ছাত্র রাজনীতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। ছাত্রদলের সাবেক নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর কোন দোষ ছিল না। তাকে জেলে রাখা হলো। তাকে সাজা দেয়া হলো। জেলে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল ছেলেটি। ছাত্রদলে তার অবদান কোন অংশে কম ছিল না। কিন্তু রক্তপিপাসু সরকার তাকে বাঁচতে দিল না। ছাত্র লীগের হাতে অস্ত্র কেন? এমন প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, অস্ত্র নয় ছাত্রদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বলে আসছি, শেখ হাসিনা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এ জন্যই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলাম। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। এদের অধীনে ভবিষ্যতেও কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়েছি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে তিনি অথর্ব ও মেরুদ-হীন বলে আখ্যায়িত করেন। খালেদা জিয়া বলেন, পৌর নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে অনেক জায়গায়ই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। মানুষ অনেকদিন পর ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সব জায়গাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সিল মেরে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে সবগুলোতে বিএনপি বিজয়ী হতো। তবে এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভবিষ্যতেও কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের সমালোচনা করে সাবেক খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে সরকার। অথচ গুলশান, বনানীর মতো জায়গায় বিদ্যুত থাকে না। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। আমরা ক্ষমতায় আসলে দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান বাড়াব। সবশেষে খালেদা জিয়া কারাবন্দী সব ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবি করেন। তবে আমরা সরকারের কাছে নয়, বিচারকদের কাছে মুক্তি দেয়ার দাবি করছি। কারণ, এ সরকারের কাছে দাবি করে লাভ নেই। ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুইয়া, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান আলিম, সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আক্রামুল হাসান প্রমুখ। এর আগে সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, এমএ মান্নান, এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিএনপির বিগত আন্দোলন ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের নিহত ও গুম হওয়াদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংগঠনের কারাবন্দী সভাপতি রাজীব আহসানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
×