ডি এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ পাকা আমের স্বাদ ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে দেশীয় পদ্ধতি প্রয়োগে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে সৃষ্ট চামড়ার মতো আকারকে এই অঞ্চলের মানুষ ‘আমসত্ত্ব’ বলে থাকে। খুবই সাদামাটাভাবে সংরক্ষণ করলেও মাস তিনেক বা অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। অনেকটা চুইংগামের মতো একই আদলে তৈরি। তবে চুইংগাম দীর্ঘ সময় মুখে ধরে রাখা, সংরক্ষণ ও চোষা যায়। সেক্ষেত্রে আমসত্ত্ব দীর্ঘ সময় মুখে রাখা যায় না। টক মিষ্টি স্বাদের আমসত্ত্ব কিছুক্ষণের মধ্যে চুষে টক মিষ্টি স্বাদ নেয়ার পর তা একেবারে মিলিয়ে যায়। আবার টেনে ছিঁড়ে নতুন করে আমসত্ত্বে¡র টুকরো মুখে পুরলে আগের মতোই কিছু সময় ধরে চুষলে তার অস্তিত্ব আর মুখে থাকে না।
শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই অঞ্চলে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে আম প্রক্রিয়াজাত কোন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। তাই প্রতিবছর আম মৌসুম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় চার মাস কাঁচা ও পাকা মিলিয়ে সহস্র কোটি টাকার আম নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে আম পাকা শুরু হলে তা আর ধরে রাখা যায় না। গাছ থেকে টপাটপ পড়তে থাকে। তাই মহিলা ও শিশুরা অনেকটা উৎসব আমেজে পাকা আম কুড়িয়ে থাকে সূর্য ওঠার অনেক আগে অন্ধকার থাকতেই। তবে পাকা আম গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার পর শতকরা ৬০ শতাংশ ভাগ খাবার যোগ্য হয়ে থাকে না। সাধারণত পাকা অবস্থায় সরাসরি খাওয়া না গেলেও চিপে এর রস সংগ্রহ করা যায়। শতকরা ৬০ ভাগ পাকা আমের সংগ্রহ রস থেকে সাধারণত আমসত্ত্ব¡ তৈরি করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর, রহনপুর অঞ্চলে পাকা আমের রস থেকে তৈরি হয় আমসত্ত্ব¡। তবে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমসত্ত্ব¡ তৈরি হয়ে থাকে শিবগঞ্জ অঞ্চলে। এই অঞ্চলে আমের গাছের সংখ্যা খুবই বেশি ও দিগন্ত বিস্তৃৃত। আর আমতা তৈরিতে দক্ষ কারিগর সাধারণ নারীরা। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে এবার আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় শত কোটি টাকার পাকা আম পড়ে নষ্ট হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেও জেলার অনেক স্থানে আশ্বিনাসহ লেট ভারাইটিজ আম বিদ্যমান। তাই এখনও আমতা তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সময়ের পরিবর্তনে আশ্বিনা আমের একাধিক উন্নত জাত উদ্ভাবন হওয়ায় থেমে থেমে সময় নিয়ে তা পাকছে। তবে এবার মৌসুমী বায়ুর ভিন্নতা ও অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই মুহূর্তে আশ্বিনা আম আগাম পেকে ফেটে যাচ্ছে। ফেটে যাওয়া পাকা আশ্বিনার রস থেকেও তৈরি হচ্ছে আমসত্ত্ব।
কানসাট আম বাজারের ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন এবার থেকে সে আম কেনাবেচার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্তভাবে আমসত্ত্ব¡ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। একদিকে আমের অপরদিকে আমসত্ত্বে¡র আড়ত করে দ্বিমুখী ব্যবসা করছে। আড়তে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে (কেজি) পাইকারি আমতা বা আমসত্ত্ব¡ বিক্রি করে ৪৫ দিনে সাড়ে চার লাখ টাকা লাভ করেছে। যে সব পাইকার দেশের অভ্যন্তর ভাগ থেকে এসে কানসাটে আম কিনত তারা এবার ঝুঁকেছে আমসত্ত্ব¡ কিনতে। কারণ আমের মতোই আমসত্ত্বে¡র চাহিদা দেশজুড়ে। তারা বুঝে নিয়েছে এটি খুবই লাভজনক ব্যবসা। তাই আমসত্ত্ব¡ বহনে ব্যবহার করছে ট্রাক। প্রতিদিন ৪-৫ ট্রাক আমসত্ত্ব যাচ্ছে ঢাকা, চট্টলাসহ বিভিন্ন জেলায়। তবে এই মুহূর্তে আমসত্ত্ব তৈরিতে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন ও দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন চাঁপাই, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর অঞ্চলের নারীদের।