ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৮ জুন ২০১৫

বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

শুক্রবার তিন মহাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৬০ এর বেশি লোক নিহত হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তিউনিসিয়ার সাগর তীরের অবকাশ যাপন হোটেলে, কুয়েতের মসজিদে ও ফ্রান্সের একটি গ্যাস এবং রাসায়নিক কারখানায় এসব পৃথক হামলা পরস্পর সম্পর্কিত নয় বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) কুয়েত ও তিউনিসিয়ার দুটি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। তিউনিসিয়ায় সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে ৮০টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। খবর এএফপি ও ইয়াহু নিউজের। মঙ্গলবার আইএসের এক মুখপাত্র আবু মোহাম্মদ আল আদনানির একটি বিবৃতির পর তিন হামলার ঘটনা ঘটে। বিবৃতিতে তিনি ‘জিহাদ’ বা পবিত্র যুদ্ধ চালানোর জন্য বিশেষভাবে পবিত্র রমজান মাসের দিকে দৃষ্টি দিতে মুসলিমদের প্রতি আবেদন জানান। কুয়েতে আত্মঘাতী বোমা হামলা সাম্প্রতিক সময়ে আইএস সৌদি আরব ও ইয়েমেনের শিয়া মসজিদগুলোকে যেভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে সেই একই ধাচে করা। কুয়েতের মসজিদে হামলায় ২৫ জন মুসল্লি নিহত হন। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজির বিশ্লেষক এমিলি হোকায়েম বলেন, ‘আইএসের পদ্ধতি ইতোপূর্বে তারা ইরাকে একের পর এক শিয়া মসজিদে বোমা হামলা করে যেভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে উস্কানি দিযেছে তারই পুনরাবৃত্তি।’ ‘সৌদি আরব ও কুয়েতে শিয়া বিরোধী হামলা চালিয়ে আইএস এক সূক্ষ্ম খেলা খেলছে যেখানে তারা সুন্নি জগতে বিদ্যমান সম্প্রদায়িকতার ওপর ভর করে নিজেদের সম্প্রসারণ ঘটাতে চাচ্ছে।’ কুয়েতে হামলার ঘটনার পর দেশটির আমির মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং ২ শতাধিক কুয়েতী আহতদের রক্তদানের জন্য এগিয়ে আসেন। কুয়েতী যুবরাজ নাওয়াফ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ বলেন, আল্লাহর ঘরে এই দুষ্কর্ম কুয়েতী জনগণের ঐক্যে ভাঙ্গন ধরানোর একটি বেপরোয়া ও বদমায়েশি কাজ এবং সমগ্র অঞ্চল যে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে।’ শনিবার ট্যুইটারে প্রকাশিত আইএসের এক বিবৃতিতে শুক্রবার তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিস থেকে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে সুস শহরের ইম্পেরিয়াল মারহাবা হোটেলের হামলাকারী খেলাফতের একজন সৈনিক বলে দাবি করা হয়। ট্যুইটার বার্তায় আরও বলা হয়, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলোর জোটের লোকরাই নিহত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাবিব এসিদ শনিবার জানান, নিহত ৩৯ জনের অধিকাংশই বিদেশী পর্যটক, যাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও বেলজিয়ামের নাগরিক ছিলেন। ওই হামলার এক প্রত্যক্ষদর্শী আয়ারল্যান্ডের এলিজাবেথ ও ব্রিয়েনা দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি পাশের হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আতশবাজি ফোটানো হচ্ছে। যখন দেখলাম লোকজন ছোটাছুটি করছে... বুঝতে পারলাম এতো গুলি চলছে। সৈকতে থাকা হোটেল কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীরা পালাও পালাও বলে চিৎকার করছিল। পর্যটকের ছদ্মবেশে হামলাকারী ছাতার ভেতরে কালাশনিকভ রাইফেল লুকিয়ে এনেছিল। এই রাইফেল দিয়েই সে তা-ব চালায়। তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসিদ সহিংসতা উস্কে দেয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যাওয়া ৮০টি মসজিদ এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ওই হামলায় আরও ৩৬ জন আহত হন। হামলার ঘটনার পর তিউনিসিয়ায় চরমপন্থী বলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। হামলাকারীর নাম সাইফউদ্দিন ইয়াকুবি বলে জানা গেছে। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইয়াকুবি নিহত হয়। এদিকে, ফ্রান্সের গ্যাস কারখানায় হামলাকারী ইয়াসিন সালাহিকে (৩৫) ছাড়াও পুলিশ তার স্ত্রী, বোন এবং অপর একজনকে গ্রেফতার করেছে। প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভাল্্স শনিবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ওই লোমহর্ষক হত্যাকা-ের পর ফ্রান্সে আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সালহি কারখানায় হামলা চালিয়ে কারখানার ম্যানেজারের কাটা মাথা একটি খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তিনটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
×