ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চরমপন্থীরাও বরিশালে নাশকতায় যোগ দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

চরমপন্থীরাও বরিশালে নাশকতায় যোগ দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ চলমান অবরোধ ও হরতালে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে রাতের নাশকতায় যোগ দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী (সর্বহারা) ও জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা। যে কারণে নাশকতামূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি এলাকায় চুরি-ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সহিংসতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কতিপয় প্রভাবশালী নেতা সর্বহারাদের মদদ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সর্বহারা সদস্যদের নিয়ে জোটের ওইসব নেতা অতিগোপনে একাধিক বৈঠকও করেছেন। যে কারণে অবরোধের সহিংসতা যে কোন সময় আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, বরিশালের এক সময়ের রক্তাক্ত উত্তর জনপদের সর্বহারা অধ্যুষিত এলাকা উজিরপুরে গত ১৮ জানুয়ারি ভোররাতে অবরোধের নাশকতার অংশ হিসেবে চলন্ত ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন ট্রাকের হেলপার সোহাগ হাওলাদার। ওই ঘটনায় এক সময়ের সর্বহারা জিয়া গ্রুপের সক্রিয় নেতা জিয়া আমিন রাঢ়ী ও তার সহযোগীরা জড়িত রয়েছেন বলে এলাকায় নানা গুঞ্জন রয়েছে। ১০ জানুয়ারি রাত একটার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বাবুগঞ্জের রহমতপুর নামক এলাকায় বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুদীপ্ত সরকারের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে চালক মহসিনকে আহত করে অবরোধ সমর্থনকারী সর্বহারা সদস্যরা। এছাড়াও মহাসড়কের নগরীর কর্ণকাঠী ও নথুল্লাবাদে যাত্রীবাহী বাস, গৌরনদীর বাটাজোরে গভীর রাতে একটি টেম্পো, গয়নাঘাটা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ট্রাক ও মাহিলাড়া এলাকায় একটি মাহেন্দ্রা গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ আশোকাঠী, বার্থী, ভূরঘাটা, টরকী ও সানুহার এলাকায় রাতের আঁধারে একাধিক যাত্রীবাহী বাস ও রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে রাতের মূর্তিমান আতঙ্ক সর্বহারা সদস্যরা। সূত্রে আরও জানা গেছে, সর্বহারা অধ্যুষিত বাবুগঞ্জ, আগরপুর ও সরিকলের একাধিক সর্বহারা সদস্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গৌরনদীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। সুযোগ বুঝে তারা মহাসড়কে নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটিয়ে প্রশাসনকে মহাসড়ক পাহারায় ব্যস্ত রেখে আবার রাতের আঁধারে চুরি-ডাকাতি করে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খুলনার খুনী এরশাদ সিকদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ও গৌরনদী পৌরসভার বিএনপি দলীয় সাবেক দুইজন কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে ইতোমধ্যে একাধিক অপরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে রাতের আঁধারে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকের পরেই গৌরনদীতে নাশকতামূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি এক মুক্তিযোদ্ধার গৃহে পুলিশ পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকস্মিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী (সর্বহারা) ও জঙ্গী হিজবুত তাওহীদের সদস্যদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, সর্বহারা অধ্যুষিত কেদারপুরের একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও চিহ্নিত সর্বহারা দলের সক্রিয় সদস্য আমির হোসেন তার সহযোগী সালাম মৃধা, নুর আলম, মাসুম মৃধা ও বাহ্মণদিয়া গ্রামের ইউনুস বেপারী অতিসম্প্রতি এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। গত দুইদিন আগে বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থগার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন নয়ন ওই সর্বহারা নেতাদের চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় সর্বহারা সদস্যরা নয়নকে মারধর করেন। ছাত্রলীগ নেতা নয়ন বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে সর্বহারা নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে নয়নকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। হুমকির মুখে নয়ন এখন নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, ভুতেরদিয়া গ্রামের চাঞ্চল্যকর জহিরুল ইসলাম বাদল, আব্দুল মজিদ, খলিলুর রহমান ও সামছুল হক প্যাদা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সর্বহারা নেতা আমির হোসেন, সালাম মৃধা, নুর আলম, মাসুম মৃধা, ইউনুস বেপারী ওইসব মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এলাকায় ফের মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সর্বহারা নেতাদের পুনরায় সংঘটিত হওয়ায় গোটা বরিশালে ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ জানান, যে কোন ধরনের নাশকতা কিংবা সর্বহারাদের মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে একাধিক নাশকতাকারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের শনাক্ত করার জন্য মাঠপর্যায়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন।
×