ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের পতন ঘটাতে এবার সাবেক ডাকসু নেতাদের কনভেনশন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

সরকারের পতন ঘটাতে এবার সাবেক ডাকসু নেতাদের কনভেনশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার দ্রুত সময়ে সরকার পতন ঘটানোর জন্য শপথ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৯০ দশকের ছাত্রদলের নেতারা। তারা জানান, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আগামী ১৮ডিসেম্বর ডাকসুর বর্তমান ও সাবেক নেতাদের কনভেনশনের ডাক দেয়া হয়েছে। কনভেনশনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। ওইদিন আমরা শপথ নিতে চাই যে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব। সোমবার ’৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। দুপুরে জতীয় প্রেসক্লাবে কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমন। মূলত ’৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নামে এ সংবাদ সম্মেলন করা হলেও মূলত সবাই ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মী। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন যারা এখন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে আমান উল্লাহ আমান বলেন, ১৯৯০ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদকে হটাতে যে কনভেনশন করা হয়েছিল তেমনি করে আবার ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আরেকটি কনভেনশন করা হবে। কনভেনশনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে সবাই শপথ নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব। বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দেবেন। টানা ৯ বছর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতৃত্বে। তখন হিমালয়ের মতো অবিচল ও দৃঢ় থেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তৎকালীন ৭ দলীয় জোটের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শত দমন-পীড়নের পরও তিনি ছিলেন আপোসহীন ও অবিচল। এ কারণেই তখন আমাদের বিজয় সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন ফ্যাসিবাদী ও দানবীয় শাসকদের উৎখাত করে দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায়ই হলো তাঁর জীবনের শেষ চ্যালেঞ্জ। এই সংগ্রামে তিনি থাকবেন সবার অগ্রভাগে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ সব অপকর্মের ভ্যানগার্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সংসদে এখন মানুষ তামাশা ও প্রহসন দেখছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের চেয়েও নিকৃষ্ট এক ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। মেনে নেয়া যায় না। সরকার পতনে ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবরের মতো তৎকালীন ও বর্তমান ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে ঢাকায় একটি ছাত্র কনভেনশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমান উল্লাহ আমান বলেন, ছাত্রলীগ নামক এক দানবীয় শক্তির কাছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিম্মি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসার আধিপত্য। বিরোধী পক্ষের ছাত্র সংগঠন এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের নৃশংসতা থেমে নেই। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ব্যাপারে নির্বিকার। জিয়া পরিবার এবং বিএনপিকে নির্মূল করাই হলো বর্তমান সরকারের একমাত্র টার্গেট। তিনি বলেন, সরকার গুম-খুনে মেতে উঠেছে। ৩ বছর আগে ইলিয়াস আলীসহ বহু নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করা হয়েছে। ক্রমেই এ তালিকা দীর্ঘ হয়ে উঠছে। শাপলা চত্বরে মধ্যরাতে আলো নিভিয়ে হেফাজতের সমাবেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। শেয়ার মার্কেট, কুইক রেন্টাল ও ব্যাংক- ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠান লুটপাট করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-তথ্য গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবীব, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। বিএনপি মহাসচিবের নিন্দা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলনের জোয়ারেই অবৈধ সরকারের বিদায় হবে। গণভিত্তিহীন অবৈধ ক্ষমতার সিংহাসন যে কোন মুহূর্তে হুড়মুড় করে ভূমিতলে শায়িত হবে। অবৈধ সরকার তাদের জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা, গুমের রক্তাক্ত পথেই নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে ছাত্রদলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
×