ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

তলদেশ ভরাট

অসময়ে বেড়েছে তিস্তার ভাঙন

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২৬ মে ২০২৪

অসময়ে বেড়েছে  তিস্তার ভাঙন

ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় মুসল্লিরা নদী পাড়ে মোনাজাত শেষে জড়ো হয়

উজানের পাহাড়ে বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। গতিপথ পরিবর্তনে নীলফামারীর জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া কাউনিয়ায় দেখা দিয়েছে নদী  ভাঙন। নদীপাড়ের বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দারা জানায়, শুক্রবার  হঠাৎ করে নদীর পানি ডান তীরে আঘাত হানার কারণে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে বেশকিছু বসতভিটা, বাঁধের রাস্তা বিলীন হয়েছে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা চরাঞ্চলের মানুষ।

তিস্তা নদী উঁচু হয়েছে। উজানের পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্র উঁচু হয়ে গিয়েছে তিস্তা নদী। এখন আর নদীর গভীরতা নেই। নদীর তলদেশ ভরাটের কারণে এবারের বন্যা মৌসুমে  একটু পানিতেই নদীর পানি উপচে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। তিস্তাপাড়ের চরবাসীদের মতে, গত তিন দশকে তিস্তা নদী  তিন মিটার  উঁচু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও অন্তত দেড় মিটার উঁচু হয়েছে এবার। ফলে তিস্তা নদীর উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে চার মিটার, যা তিস্তাপাড়ের মানুষজন অল্প ঢলেই  এবার বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা  বলেন, ১৯৯০ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩২ বছরে তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে কোথাও কোথাও দুই মিটার আবার আড়াই মিটার উঁচু হয়েছে। ফলে উজানের ঢলে বা সামান্য বৃষ্টিপাতেই প্রবল বন্যা দেখা দিচ্ছে। নদীর বুকে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানে বন্যার পানিপ্রবাহের বিপদসীমা নির্দেশক ৫২ দশমিক ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, নদীটির তলদেশ কী পরিমাণ ভরাট হয়েছে। এখন তো আরো বেশি ভরাট হচ্ছে।

বেড়ায় যমুনার ভাঙন

 নিজস্ব সংবাদদাতা বেড়া, পাবনা থেকে জানানঅসময়ে যমুনা নদীর ভাঙন কবলে পাবনার বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মসজিদ। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী। যমুনা  নদী থেকে বালু তোলার কারণেই প্রতিবছর ভাঙন হয়। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় মুসল্লিরা নদী পাড়ে গিয়ে আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে করছে বিশেষ মোনাজাত। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি গ্রামবাসীর। নদী ভাঙন রোধে এবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদাহ, হাটাইল, আরালিয়া, চরসাড়াসি গ্রাম, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর  নেয় কিন্তু কোনো কাজ শুরু করেনি। স্থানীয়দের দাবি, এবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামবাসীর দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক আকাশ বলেন, নদী ভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ দশ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহখানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি। হাটাইল চরের কৃষক আলম মোল্লা বলেন, প্রতিবছরই বর্ষাকালে চরের মানুষ নদী ভাঙনে বাড়িঘর, জমি হারায়। এবার আবার এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে  লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ইতোমধ্যে বেড়ার যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অতিদ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

×