ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

কোরবানির জন্য প্রস্তুত

যশোরে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ২৬ মে ২০২৪

যশোরে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু

ফার্মে কোরবানির পশু

আগামী মাসে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের খামারিরা। এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, বৈশ্বিক কারণে গো-খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এরপরও খামারিরা ঈদে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন তারা।

যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর যশোরে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। এবারের ঈদে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৬ হাজার ৭১৮টি। চাহিদার তুলনায় ৩০ হাজার ১৩৩টি পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৩৯ হাজার ৬৭৮টি, ছাগল ৮৬ হাজার ৩৬৫টি ভেড়া রয়েছে ৮০৮টি। মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৮৫১টি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে যশোর গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে বেশ এগিয়ে। বিশেষ করে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় খামার স্থাপনের মাধ্যমে জেলায় গরু পালন বেড়েছে। ফলে সারাবছরের চাহিদা মেটাচ্ছে এসব খামারে হৃষ্টপুষ্ট করা গরু। তবে কোরবানির বাজার ধরতে খামারিদের বাড়তি উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। বছর জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৪ হাজার ১৩৫টি ছোট-বড় খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে লক্ষাধিক গরু ছাগল। পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে ব্যক্তিপর্যায়েও হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে অনেক গরু। দিনরাত অবিরাম পরিচর্যা এবং প্রাকৃতিক সুষম খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করা গরু-ছাগল এখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত। বাঘারপাড়ার জামদিয়া গ্রামের খামারি শামীম রেজা বলেন- আমার ৫১টি গরু আছে, প্রায় সব কয়টি বিক্রি উপযোগী। এবার খরচ অনেক বেশি। দাম পাওয়া নিয়ে একটু চিন্তিত। তারপরও আশা করি, এবার কোরবানির পশুর হাটে ভালো দাম পাব। বাঘারপাড়ার ভাঙ্গুড়া গ্রামের আরেকজন খামারি টিপু সুলতান বলেন, আমরা সাধারণত কৃষি লোন বা এনজিও থেকে লোন নিয়ে পশুর খাবার গরু লালন-পালন করি। প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, ভিটামিন ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, আমরাও সার্বক্ষণিক এলাকার খামারিদের খোঁজখবর রাখছি। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে কোনোরকম ক্ষতিকারক ওষুধ কিংবা ইনজেকশন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি খামারিদের। ছাড়া গরু মোটাতাজাকরণের বিষয়ে খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা পরামর্শ দিতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠেপর্যায়ে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক কারণে গো-খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

কেরানীগঞ্জে ব্যস্ত খামারিরা

সংবাদদাতা কেরানীগঞ্জ থেকে জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেরানীগঞ্জের খামারিরা। প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ঘাস, খৈল, ভুসি খাওয়ায়ে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। সেই অনুযায়ী দাম পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে খামার মালিকরা। খামার মালিক আশিক বলেন, বছর আমাদের খামারে দুই হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। আমাদের খামারে দেশীয়Ñ খাবার সবুজ ঘাস, খড়, ভুসি খাওয়ায়ে পশু লালন-পালন করা হয়। এখন বাজারে সঠিক দাম পাওয়ার আশায় আছি। শরীফ অ্যাগ্রোফিডের ম্যানেজার সজীব হাওলাদের বলেন, আমরা দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করে থাকি। গম, ভুট্টা, খড়, ভুসি সবুজ ঘাস খাওয়ানো হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের প্রত্যকটি খামারে পর্যাপ্ত কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে খামারিদের অভিযোগ, বতমান গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি।

রাজশাহীতে প্রস্তুত চার লাখের বেশি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, আসছে পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর খামারে খামারে প্রস্তত করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কোরবানিযোগ্য পশু। বছর রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই পশুগুলো মানুষের বাসা বাড়ি ছাড়াও খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে, যা কোরবানিতে বিক্রি করা হবে। তবে পশুখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ার প্রভাব পড়বে এবারও কোরবানির হাটে। জানা গেছে, কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশুর মালিক, ব্যবসায়ী কোরবানিদাতাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই পশুর বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা বিক্রেতাদের দাবি, পশুখাদ্যের দামের  প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ রয়েছে হাজার ৭৬৯টি ছাগল রয়েছে লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। রাজশাহীর পশু খামারি সাইফুল্লাহ হক বলেন, এবারও হাটে হাটে কোরবানির পশুর দাম চড়া হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পশু পালনকারীদের লাভের পরিমাণ কমার শঙ্কা রয়েছে। তার পরও কেউ তো আর লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করবে না। কোরবানির হাট এখনো শুরু হয়নি। এখন পশু কম দামে পাওয়া গেলেও কোরবানির আগে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের আশা করছেন।

ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে খামারি মুরাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল থেকে জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কোষাবড় গ্রামের প্রদীপ্ত যুবক মুরাদ মুন্সি। তিনি পরের অধীনে বড় কর্মকর্তা পদে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চিন্তা করে ২০২১ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন। এখন তিনি মুন্সি ন্যাচারাল ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী।

২০২১ সালে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে প্রথমে লাখ ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনটি গরু দিয়ে চালু করেন ডেইরি ফার্ম। এখন তার ডেইরি ফার্মে পাঁচজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। মাত্র তিন বছরেই তার ফার্মে গরুর সংখ্যা এখন ৫০টি। এখানে তিনি পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে স্থায়ী, আবাসনসহ তার ডেইরি ফার্মে সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে তিনি অন্তত ১০টি গরু মোটাতাজা করেন। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে গরু পালন গরুর খাদ্য হিসেবে বাড়ির ভিটে, আঙ্গিনাসহ খোলা মাঠেও চাষ করেছেন গরুর ঘাস। তার চাষের ঘাস খেয়েই প্রতিদিন তার ডাইরি ফার্মে ১০০ লিটার দুধ পাচ্ছেন। মুরাদ মুন্সি বলেন, করোনাকালে চাকরি ছেড়ে তিনটি গরু দিয়ে ডেইরি ফার্ম শুরু করি। কঠোর পরিশ্রমে তিন বছরেই সফল হয়েছি।

 

 

 

×