ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২৬ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন

তলিয়ে গেছে সুন্দরবন।

বাগেরহাটে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মধ্যে মোংলায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে। রবিবার (২৬ মে) সকালে প্রবল বাতাসে পশুর নদীর মোংলা ঘাটে নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি বলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন।
  
ঘূর্ণিঝড় রেমাল’র আঘাতের আগেই রবিবার সকাল থেকেই সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় বাগেরহাটে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জেলার সকল নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কমপক্ষে ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনসহ বাগেরহাট, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ পৌরসভাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েন।

এদিকে, সাগর ফুঁসে উঠেছে। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় বাগেরহাটবাসী চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ‘জেলায় ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া অন্য পোল্ডারগুলোর বেশ কিছু পয়েন্টও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও যাতে বাঁধ ভেঙে যেতে না পারে, সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জেলার ৩৩৮ কি.মি. বাঁধের মধ্যে ৭ কি. মি. ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। মোড়েলগঞ্জের শ্রেণিখালীতে রাতেও জরুরি মেরামতের কাজ চলেছে। এ ছাড়া, অন্য পোল্ডারগুলোর বেশ কিছু পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও জিওব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি। বাঁধে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও যাতে বাঁধ ভেঙে যেতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

জনস্বাস্থ্য বিভাগের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, পনি শোধন ট্যাবলেট ও পানির জার (পাত্র) উপদ্রুত শরণখোলা, রামপাল, মোংলা  ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন আরও বলেন, ‘আমাদের ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লোকজন এবং গবাদী পশু নেওয়া হচ্ছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। এ জেলায় প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আড়াই হাজারের অধিক রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির সেচ্ছাসেবক কাজ  করছে। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের ঝড়টি একটু ব্যতিক্রম। ঝড়টি একটু বেশি সময় জল ও স্থলভাগে অবস্থান করবে। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে বাগেরহাটবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য সকল প্রকার প্রচার প্রচারনা করা হয়।’

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নূরুল করিম বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় সকল বনজীবীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। অস্বাভাবিক জোয়ারে বনের নিম্ন এলাকা তলিয়েছে।’

এম হাসান

×