ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

নাব্য সংকট ও লবণাক্ততায় বাড়ছে নদী ভাঙন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নাব্য সংকট ও লবণাক্ততায় বাড়ছে নদী ভাঙন

ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণের সিসি ব্লকে ধস

সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদী সমূহের প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টির অভাবে সাগরের জোয়ার ক্রমাগত উজানে উঠে আসছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক বছর লবণাক্ততার মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে নাব্য সংকটও প্রকট আকার ধারণ করছে।
এ অঞ্চলের ছোট-বড় ১৩২টি নদ-নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে নাব্য সংকটে নৌ-যোগাযোগ ও মৎস্য সম্পদ চরম হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। সূত্রমতে, সীমান্তের ওপারে অব্যাহত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নদ-নদী সমূহে পলি জমে ধারণ ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢলের পানি সাগরে প্রবাহের সময় বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতাও।

সুষ্ঠু প্রবাহের অভাবে ইলিশের বিচরনস্থলের পরিবর্তন ঘটছে। এমনকি নদ-নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ নাব্য সংকটের সঙ্গে চলমান তাপ প্রবাহে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ইলিশ ক্রমাগত গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। 
সূত্রে আরও জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে মেঘনা, তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, বলেশ^র ও বুড়িশ^রসহ বরিশাল অঞ্চলের ছোট-বড় ১৩২টি নদ-নদী নাব্য সংকটে ধুঁকছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষভাগ পর্যন্ত শুস্ক মৌসুমের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে অনেক বড় নদীতেও নৌযান চলাচল করেছে গভীরতা মেপে।

বরিশাল-চাঁদপুর-ঢাকা, বরিশাল-ইলিশা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম নৌপথ ছাড়াও বরিশাল-মোংলা-খুলনা নৌপথের গাবখান ও ঘাশিয়াখালী চ্যানেলগুলোর নাব্য সংকট অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় নৌ-যোগাযোগে প্রতিনিয়ত সংকট সৃষ্টি করছে।
একাধিক নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, সীমান্তের ওপার হয়ে অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর যে পানি সাগরে পতিত হয়, তার ৭৮%-ই মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বুড়িশ^র ও বলেশ^রসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদী বহন করে থাকে।

কিন্তু প্রতিবছরই উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণসহ যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের অভাবে নদ-নদীসমূহ শুষ্ক মৌসুমে ক্রমাগত ভরাট হয়ে ধারণ ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বর্ষাকালে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। অথচ গত ১৫ বছরে দেশের নদ-নদীর ভাঙন রোধে এ যাবৎকালের সর্বাধিক নদী শাসন রোধ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। সূত্রমতে, ভাঙন রোধে নদী তীর রক্ষা ও ড্রেজিংয়ের সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের আশীর্বাদ ১৩২টি নদ-নদী এখন অনেকটাই দুঃখে পরিণত হয়েছে।

এমনকি গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথের প্রায় পাঁচশ’ কিলোমিটারে নাব্য সংকট ভয়াবহ ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। একই কারণে প্রায় তিন লাখ টন মাছ উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যৎও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অপরদিকে নদী ভাঙন এখনো সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলের ভয়াবহ অভিশাপ হয়েই রয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে সকালবেলার আমীরকে সন্ধ্যায় ফকির বানাচ্ছে।

×