ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জের ঘরে ঘরে মিনি গার্মেন্টস

পাঁচশ’ কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রির টার্গেট

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ৪ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচশ’ কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রির টার্গেট

মুন্সীগঞ্জের সিপাহিপাড়ায় ঘরে ঘরে মিনি গার্মেন্টসে ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

পোশাক তৈরির গ্রাম মুন্সীগঞ্জের সিপাহিপাড়া। এখানকার ঘরে ঘরে মিনি গার্মেন্টস। রাজধানীর বড় বড় বিপণি বিতানের আকর্ষণীয় পোশাক তৈরি হয় এখানেই। এবারের ঈদে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় খুদে শিল্পপতিরা। প্রতিটি বাড়ি যেন একটি করে গার্মেন্টস কারখানা। ছোট ছোট ঘরেই সব হচ্ছে। রং-বেরঙের পোশাক তৈরি হচ্ছে রাত-দিন। ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। ক¤িপউটারাইজড অ্যামব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে চমৎকার সব ডিজাইন করা হচ্ছে। এরপর কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে পোশাক।
কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইন এবং প্যাকেটিংয়ের পর নামকরা বিপণি বিতানগুলোতে বাজারজাত করা হয়। অনেক পাইকার সরাসরি রেডিমেড পোশাক কেনার এখানে জন্যও আসেন। ঈদ ঘিরে এখানকার গার্মেন্টসগুলোর এবারের ঈদে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট। 
গার্মেন্টস মালিক মোক্তার হোসেন বলেন, এখানে বস্ত্রহাটের ব্যবস্থা হলে এলাকার অর্থনীতি আরও সচল হবে। 
ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার দুই সহস্রাধিক খুদে করখানায় পনেরো হাজারেরও বেশি শ্রমিক। 
রেডিমেড পোশাকপল্লি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে এলাকাটি। উন্নতমানের কাপড় দিয়ে নানা রং ও ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এখানে।
ঢাকার অদূরে রামপাল ইউনিয়নের সিপাহিপাড়া, কাঁঠালতলা, শাঁখারিবাজার, চৌগাড়ারপাড়, দালালপাড়া, সুখবাসপুর ও পঞ্চসার ইউনিয়নের তেলেরবিল, রামেরগাঁও, ভট্টাচার্যেরবাগ ও দেওয়ানবাজার এবং মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার  গোয়ালঘুন্নী ও দর্গাহবাড়ি গ্রাম। ঈদকে সামনে রেখে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন বাহারি রঙের পোশাক তৈরি হচ্ছে রাত-দিন। এখানকার তৈরি পোশাক ঢাকার সদরঘাট, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় পাইকারি মার্কেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণি বিতানগুলোতে।
পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। ভারতের কিছু স্যাম্পল এনে কাটিং করে সেগুলো তৈরি করা হয়। অর্ডার নেওয়ার সময় প্রায় শেষের দিকে। রোজার ২৭ পর্যন্ত চলবে ঈদের এই কর্মব্যস্ততা।
নায়রা, পাটি, জর্জেট, আলেয়া, বাদুরসহ এইসব মালের চাহিদা বেশি। তিন-চার মাস যাবৎ পাইকারদের কাছ থেকে এই মালের অর্ডার নেওয়া হয়। এসব মালামালের জন্য পাইকার আসেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও যশোর, চট্টগ্রাম ও চয়িাডাঙ্গা থেকে। এই মালের এত চাহিদা যে, অনেক পাইকার এসে ফেরত গেছেন।
পূর্বপুরুষরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল অর্ধশতাব্দী ধরে। রেডিমেড কারখানাগুলো মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য। এখানে পোশাক তৈরি করে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ, ঢাকার সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জে পাইকারি দামে বিক্রি করি। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর, খুলনা, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখানে এসে কাপড় কিনে নিয়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জের পোশাকের সুনাম দেশজুড়ে। এখন চলছে ঈদের শেষ সময়ের পোশাক তৈরির ব্যস্ততা। নায়রা, সুতি কটন, নেটসহ বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে। 
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ জানান, এই পোশাকপল্লিতে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ধারাটি অব্যাহত থাকলে এক সময় আন্তর্জাতিক পরিম-লে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট ছোট গার্মেন্টস, যেটাকে আমরা মিনি গার্মেন্টস বলে থাকি।

নিজেদের পরিবারের বসবাসের জন্য ছোট ঘরের ভেতরে তারা ছোট পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সব মিলিয়ে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার এমন কারখানা রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের যে গুণগত মান তা অত্যন্ত চমৎকার। বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে তারা এই পণ্যগুলো টার্গেট করে থাকে। দেশব্যাপী তাদের ব্যবসায় রয়েছে।

×