ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অরুণিমায় পাখির কলকাকলি

রিফাত-বিন-ত্বহা

প্রকাশিত: ০১:২৫, ১২ জানুয়ারি ২০২৪

অরুণিমায় পাখির কলকাকলি

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ আর বিনোদনের আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধায় সন্তুষ্ট ভ্রমণপিপাসুরা। পার্কে পিকনিক আর পাখি দেখে তাদের মধ্যে অন্য রকম ভালোলাগার কথা বললেন সকলেই। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নাম জানা, না-জানা অসংখ্য পাখির কলরব। এই ‘অরুণিমা’ দেশের একমাত্র এগ্রো-ইকো-রিভারাইন- স্পোর্টস পর্যটন কেন্দ্র। চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। যতদূর চোখ যায় শুধুই পাখির ওড়াউড়ি।

হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ডানামেলার দৃশ্যপট মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। গাছের ছায়ায় পাখির মায়ায় আবেগে আপ্লুত হবেন সবাই। বলছি- অরুণিমা রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ ক্লাবের কথা। এখানে অতিথি পাখির সঙ্গে দেশী পাখির মিতালি, এ যেন বন্ধুত্ব পরায়ণ বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। অরুণিমার সুবাধে আশপাশের গ্রামগুলোও এখন পাখিগ্রামে পরিণত হয়েছে।
বিশাল এলাকাজুড়ে পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি (বিদেশী) ও দেশী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নড়াইলের নড়াগাতী থানার পানিপাড়ার অরুণিমা রিসোর্টসহ আশপাশের গ্রামগুলো। এক যুগ ধরে এখানে অতিথি পাখির সঙ্গে দেশী পাখির বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যিমামা ওঠার সময় পাখি যেমন অরুণিমার নীড় ছেড়ে যায়, তেমনি বিকেল ৪টা গড়ালেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসে তাদের সেই (অরুণিমা) আবাসস্থলেই। তখনই শুরু হয় ভালোলাগা, ভালোবাসার প্রতিক্ষণ। 
এরই মধ্যে দল ধরে এক রঙের পাখি আকাশে উড়ে বেড়ায়। অনেক দল অরুণিমার লেকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোতে বসে ডানা ঝাপটায়। এসব দৃশ্য সত্যিই ভালোলাগার, বর্ণনাতীত। পাখি দেখার পাশাপাশি অরুণিমার প্রায় ৫২ একর বিশাল জায়গা জুড়ে গাছপালা, ফুল ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা। পিকনিক পার্টি আর অবকাশ যাপনে দলে দলে পর্যটকরা ছুটে আসছেন এখানে। গাছের ছায়ায় পাখির মায়ায় মুগ্ধ সবাই।

এছাড়া এই পর্যটন কেন্দ্রে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের গলফ মাঠ। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে অনুন্নত পানিপাড়ায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পর্যটকদের বিনোদনের পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের। ফলে সরকার আয় করছে প্রচুর রাজস্ব।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মুক্ত আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকে অতিথি পাখির দল। একই সঙ্গে থাকে সাদা ডানায় উড়তে থাকা বকের দল। পাখির ডাকে মুখরিত হয় চারদিক। সাধারণত শীতের শুরুতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। কিন্তু এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই নড়াইলের অরুনিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাব পরিণত হয়েছে পাখিদের আবাস ভূমিতে। এয়াড়া, বছরে প্রায় ৮/৯ মাস অতিথি পাখি এবং সারা বছরই এখানে দেশী পাখি দেখতে পাওয়া যায়।

নড়াইল জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার পানিপাড়া গ্রামে প্রায় ৫২ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অন্যতম নেচারবেজ পার্ক অরুনিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাব। বিগত ৭-৮ বছর ধরে ডিসেম্বর/জানুয়ারি মাসে সাইবেরিয়া থেকে এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে, এ সময় এদের সঙ্গে থাকে দেশী সাদা বক, কানি বক, শালিক ও ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এরা দল বেঁধে সারাদিন খাদ্যের সন্ধানে পার্কের বাইরে ওড়াউড়ি করলেও বিকেলে ফিরে আসে নিরাপদ আশ্রয় এই পার্কে।

তখন আকাশের বুক চিরে পাখিদের মধুর কলেরব সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে। সন্ধ্যায় পার্কের প্রায় প্রতিটি গাছ নেচে ওঠে সাদা বক আর অতিথি পাখির ডাকাডাকির ছন্দে। পাখি দেখতে আসা এবং পার্কে পিকনিক করতে আসা দর্শনার্থীরা জানালেন, তাদের অনুভূতির কথা। পাখি দেখে তাদের মধ্যে অন্য রকম ভাললাগার কথা বললেন সকলেই। 
সবুজ ছায়াঘেরা বনায়নে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশে ৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। যা অরুনিমা ইকোপার্ক নামেও পরিচিত। বলা যেতে পারে, এটি একটি ফুল ও ফলের বাগান। আবার একে বৃহৎ একটি মাছের খামারও বলা যায়। বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্য এখানে রয়েছে পিকনিকের ব্যবস্থা। মনে হবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আবহমান গ্রাম-বাংলার চিরচেনা রূপ আর আধুনিকতার সুপরিকল্পিত সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে অরুনিমাকে।

এ যেন মনের মাধুরী মেশানো স্বপ্নপুরী। এর প্রবেশ পথেই দেখা যাবে প্রচুর ঝাউগাছ। দেখে মনে হবে এরা যেন সারিবদ্ধভাবে আগন্তুককে অভ্যর্থনা জানাতে দাঁড়িয়ে আছে। হাজার হাজার ফুল ও ফলের চারাসহ বনজ ও ওষুধি বৃক্ষের চারা রোপণ করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ সৃষ্টি। যেমন রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল, চেরি, স্টার আপেল, জলপাই, পেঁপে, কুলসহ অসংখ্য ফলের গাছ; তেমনি রয়েছে ডেফোডিল, ক্যামেলিয়া, লিলি, কুমারী পান্থ, পদ্ম, নীলপদ্ম, রঙ্গন, কাঞ্চন, দুই শ’ প্রজাতির গোলাপ, মার্বেল টাস্ক, টগর, গ্যালাডুলাসসহ হরেক রকম ফুলের গাছ, যেগুলো পর্যটন কেন্দ্রের শোভাবর্ধনসহ প্রাকৃতিক রূপ এনে দিয়েছে।

অরুনিমার অভ্যন্তরে তিন একরের সবুজ মেহগনির বাগান যেন পরিণত হয়েছে সবুজ পাহাড়ে। এক একরের ঝাউবন, ৬৪৭ আম্রপালি গাছের বাগান, ৫ কাঠার গোলাপ বাগান ও ১ হাজার ৪শ’ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ওষুধি বৃক্ষ রয়েছে এখানে।   
যেভাবে যাবেন ॥ রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্ম সেতু হয়ে অরুনিমায় আসার সহজ একটি পথ রয়েছে। বিশ্বরোডে পদ্ম সেতু হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া হয়ে গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে হাতের ডানে কিছু দূর গিয়ে বরফা ঘাট পার হলেই স্বপ্নপুরী অরুনিমা ইকোপার্ক। আসতে সময় লাগবে সাড়ে ২ ঘণ্টা। খুলনা ও যশোর থেকে নড়াইলের কালিয়া হয়ে এখানে যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা।

এছাড়াও নড়াইলের লোহাগড়া হয়ে মহাজন ফেরিঘাট পার হয়ে ইকোপার্কে যাওয়া যায়। মহাজন ফেরিঘাট পার হয়ে বড়দিয়া বাজার থেকে ভ্যান, মোটরসাইকেল বা ইজিবাইকে ইকোপার্কে যাওয়া যায়। আরেকটি পথ রয়েছে সেটি হলো- গোপালগঞ্জ শহর-সংলগ্ন মানিকদাহ ব্রিজ পার হয়ে নড়াইলের কালিয়ায় অবস্থিত উপমহাদেশের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর ও সেতারবাদক রবি শংকরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ঘুরেও সেখানে সহজে পৌঁছানো যায়। এখানে আগত পিকনিক পার্টি, বিনোদনপ্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য খবির উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বছরের প্রায় আট মাস যাবত অতিথি পাখিসহ সারা বছর দেশী পাখির আনাগোনা থাকে এখানে। পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম খ্যাত অরুণিমার সৌন্দর্য ও ঐহিত্য ধরে রাখতে গ্রামবাসীসহ রিসোট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাখি দেখার সুবিধার্থে সুবিশাল লেকের মাঝে এবার বোটআইল্যান্ড করা হয়েছে। 

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল

×