ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে সরিষা খেত

দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সমুদ্রে হারিয়ে যেতে নেই মানা

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২ জানুয়ারি ২০২৪

দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সমুদ্রে হারিয়ে যেতে নেই মানা

গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে দিগন্তজোড়া সরিষার মাঠ

দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষা খেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। শিশিরে ভেজা ভোরে মধু আহরণে দলে দলে ছুটছে মৌমাছির দল। এই হলুদ সমুদ্রে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়।
নাগরিক জীবনের যাতনা থেকে ক্ষণিক স্বস্তি পেতে বেড়িয়ে আসা যেতে পারে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এই হলুদ রাজ্যে।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তাঁর আগমনী কবিতায় লিখেছেন, ‘মাঠখানি হেলিছে দুলিছে। হলুদ স্বপন ভরে তোমার অঙ্গে জড়াইয়া আপনায় দুধারে অথই সরিষার বন।’
ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির তখন হলুদ ফুলের শরীরজুড়ে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তার মতো ঝিলমিল করে শিশির কণা গড়িয়ে নামে। সকালের রোদে ঝলমল করতে থাকে মাঠভর্তি হলুদ সরিষার ফুল। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। যেন সবুজ মাঠ হলুদের চাদরে ঢাকা। বেলা গড়িয়ে নামে বিকেল। বিকেলের নরম রোদে হলুদ ফুলগুলো রূপ নেয় ভিন্ন মাত্রায়। মিষ্টি বাতাসে দুলতে থাকে সরিষা ফুলের গাছ। আবারও ফিরে আসতে শুরু করে শিশিরের দল জমিয়ে বসে সরিষা ফুলে।

শীতের রিক্ততায় রং ও প্রাণের স্পন্দন নিয়ে আসে সরিষা ফুল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষা ফুল ফলে সেজে উঠে প্রকৃতি। নাগরিক জীবন হাঁপিয়ে ওঠে, কার মন না চায় হলুদ রাজ্যে একটু ঘুরে আসতে। 
অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১৫টি ইউনিয়নে ১৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে যা গত দুই বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছর গফরগাঁও উপজেলায় চরাঞ্চলসহ ১৫টি ইউনিয়নে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে, সরিষা উৎপাদন করলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, ইউরিয়া সারের সাশ্রয় হয়, সরিষা খেত থেকে মধু উৎপাদন করা যায়। ভোজ্য তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তা ছাড়া সরিষার খৈল জৈব সার ও গো-খাদ্যের উপকার করে। সরিষা খেতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় প্রজাপতি আর মৌমাছিরা।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায় সরিষা থেকে। হলুদ রঙের এই ফুলটিতে চারটি পাপড়ি থাকে। একটি সরিষা গাছের জীবনধারায় আনুমানিক ২০০টির মতো ফুল ফুটে, একটি গাছ এক হাজার শস্যবীজ তৈরি করতে সক্ষম হয়। সরিষা গাছ ক্রুশিফেরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত তেল উৎপাদক এক বর্ষজীবী প্রজাতির উদ্ভিদ। শীতকালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে গ্রামের মাঠে-মাঠে ব্রহ্মহ্মহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে সরিষা খেতের চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই সরিষার উৎপাদন হয়।

বিশেষ করে ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ সব জেলাতেই সরিষার তেল উৎপাদন হয়। দেশের ঐতিহ্যবাহী ঘানির খাঁটি সরিষার তেল কার না পছন্দ। একটা সময় ছিল গ্রামাঞ্চলের কলুর বাড়িতে চোখে পট্টি বাঁধা গরু ঘানি টেনে সরিষা বীজ থেকে খাঁটি তেল বের করত। এখন আর তা চোখে পড়ে না। বর্তমানে ঘানির বদলে বৈদ্যুতিক তেল কল চালু হয়েছে। 
দেশে ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন তেল প্রথম হলেও সরিষার স্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সরিষার তেলের ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে।
দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা খেত গফরগাঁওয়ের কৃষককে স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তেমনি অভ্যন্তরীণ পর্যটনেও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হচ্ছে।

×