ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঋতুরাজ বসন্ত ছুঁয়ে দিল প্রাণ, দেশজুড়ে মেতেছিল তরুণ-তরুণী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঋতুরাজ বসন্ত ছুঁয়ে দিল প্রাণ, দেশজুড়ে মেতেছিল তরুণ-তরুণী

মনোয়ার হোসেন ॥ রমনার ঝরা পাতার মর্মরধ্বনি জানান দিয়েছে ঋতুচক্রে ঘটেছে পরিবর্তন। কংক্রিটের এই শহরেও রূপের আগুন ঝরিয়ে ডানা মেলেছে ঋতুরাজ। শহীদ মিনারের ওপর থেকে উঁকি দেয়া রক্তিম পলাশ বলেছে, আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে...। চারুকলার বুকলতলার প্রভাতী আয়োজনে রূপে-রঙে ধরা দিয়েছে বসন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় গানে গানে বসন্তবরণ করেছে সঙ্গীত সংগঠন সমগীত। সেগুন বাগিচার শিল্পকলার উন্মুক্ত আঙিনায় স্বাগত জানানো হয়েছে নতুন ঋতুকে। ফাগুন হাওয়ায় অনুষ্ঠান আর আয়োজনে চঞ্চল হয়েছে সংস্কৃতিপ্রেমী নাগরিকের উতলা মন। দখিনা হাওয়া মেখে শহরে এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে শহরবাসী। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে নর-নারী, শিশু থেকে শুরু করে তরুণ, কিশোর, যুবা, মধ্যবয়সী কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ। শূন্যে উড়েছে লাল-সবুজসহ রকমারি রঙের আবীর। সম্প্রীতির বন্ধনে একে অপরের গাল রাঙিয়েছে বর্ণবহুল আবীরের ছোঁয়ায়। হাত থেকে হাতে ছুঁয়েছে ফুলে ফুলে গাঁথা রাখিবন্ধনী। বসনে উঠেছিল বাসন্তী কিংবা হলদে শাড়ি। তরুণীর খোঁপায় শোভা পেয়েছে পুষ্পমালা। কারও বা কপালে চেপে বসেছিল গোলাপ-গাঁদায় গড়া টায়রা। পুরুষের পাঞ্জাবি বা ফতুয়ায় দেখা মিলেছে বাসন্তীসহ নানা রঙের ছড়াছড়ি। এভাবেই বহু বর্ণে ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে এই শহরে। প্রকৃতির নিয়ম মেনে শীতের কাতরতা ছাপিয়ে উষ্ণতার বার্তা নিয়ে এলো ঋতুরাজ বসন্ত। সুন্দরের বারতায় গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, বক্তার কথায় কিংবা নৃত্যের মুদ্রায় ছিল তার অনন্য প্রকাশ। মঙ্গলবার ছিল মনের অলিন্দে উত্তাপ ছড়ানো বসন্তের প্রথম দিন পয়লা ফাল্গুন। যান্ত্রিক শহর ঢাকায় বিরাজ করেছে স্নিগ্ধ আবহ। প্রকৃতির পালাবদলে নাগরিক মনে যেন অজান্তেই গুঞ্জরিত হয়েছে ‘ওরে ভাই ফাগুন এসেছে বনে বনে’। শুধু বনে নয়, মানুষের মনেও লেগেছিল ফাগুনের ছোঁয়া। রূপময় এ ঋতু বরণে নিজের সুবিধামতো সময়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীবাসী। পোশাক ও মননে ছিল বসন্ত বরণের নয়ন জুড়ানো দৃশ্য। মন আর প্রাণের মমতায় উচ্চারিত হয়েছে বসন্তের জয়গান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরের নানা প্রান্তে ছিল বসন্ত বন্দনার বহুমাত্রিক আয়োজন। সেসব আয়োজনে শামিল হয়ে প্রকৃতির পালাবদলে প্রাণ প্রাচুর্যের প্রকাশ ঘটিয়েছে শহরবাসী। মাতোয়ারা হয়েছে বসন্ত উদ্্যাপনের অনাবিল আনন্দে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকাজুড়েই উদ্্যাপনের মাত্রাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজনটি বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। এখানেই ১৪০১ বঙ্গাব্দে সূচনা হওয়া বসন্ত আবাহনের অনন্য আয়োজনটি করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। চব্বিশতম আয়োজনটিতে সকাল থেকে রাত অবধি নাচ-গান ও কবিতায় মুখরিত ছিল শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য এ আঙিনা। বাঙালীর মনন আলোড়িত করা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, অতুলপ্রসাদ, জসীমউদ্্দীন, শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টিসম্ভারের সন্ধান মেলে বসন্ত আবাহনের এ আয়োজনে। এর বাইরে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একুশের বইমেলায়। বসন্তের আনন্দ আবাহনের পাশাপাশি নতুন বইটি সংগ্রহের তাগিদে অনেকেই গিয়েছেন একুশে গ্রন্থমেলায়। এছাড়া পরিষদ আয়োজিত পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ ও উত্তরার রবীন্দ্র সরণি মুক্ত ছিল বসন্তবরণের আয়োজন। অনেকেই আবার উপভোগ করেছেন সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমির তিন দিনব্যাপী বসন্ত উদ্যাপনের আয়োজনটি। লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইঘরেও গান, কবিতা ও যাত্রাপালায় হয়েছে বসন্তবরণ। এর বাইরেও ঢাকাবাসীর অনেকেই কোন আয়োজনে না গিয়েও নবীন বসন্তের উদাসী হাওয়া গায়ে মেখে ঘুরে বেড়িয়েছে আপন খেয়ালে। ভোরের অলসতা কাটিয়ে রোদ ঝলমলে সকালের আলো তখন ছড়িয়ে পড়েছে বকুলতলায়। সবুজ পাতার ফাঁক গলে মিষ্টি রোদের কিরণে উদ্ভাসিত মঞ্চ। ভেসে আসে টুংটাং শব্দ তোলা সুর। গিটারের আশ্রয়ে যন্ত্রসঙ্গীতে বসন্ত বাহার রাগের আশ্রয়ে ঋতুরাজ বরণের প্রথম পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন দীপন সরকার। এরপর রাগাশ্রয়ী কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন পারভেজ ও সুশান্ত। শিল্পীদ্বয় কণ্ঠে তুলে নেন রাগ অহির ভৈরব। সুর-তাল ও লয়ের খেলায় গীত হয় ‘আলবেলা সাজনও আয়োনি’। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘প্রতিবাদ’। দরদী কণ্ঠে লাইসা আহমেদ লিসা গেয়ে শোনান ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নাচ নিয়ে মঞ্চে আসেন নৃত্যদল ভাবনার শিল্পীরা। নেপথ্যে বেজেছে ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’ গানের সুর। আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় কবিগুরুর কবিতা ‘আমি’। বিমান চন্দ্র বিশ্বাস গেয়েছেন ঋতুরাজকে স্বাগত জানানো বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের গান ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’। সুমন মজুমদারের কণ্ঠে গীত হয় ‘ফুল ফাগুনের এলো মরশুম/বনে বনে লাগলো দোলা’। গান শেষে মঞ্চে নাচের নান্দনিকতা ছড়িয়ে দর্শক-শ্রেতার নয়ন জুড়িয়ে দেন পূজা সেন গুপ্তসহ তুরঙ্গম নৃত্যদলের পাঁচ শিল্পী। নেপথ্যে বেজেছে ‘আমি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের সুর। মাধুর্যময় কণ্ঠে ফাহিম হোসেন চৌধুরী গেয়েছেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর কণ্ঠশিল্পীরা গেয়েছেন ‘আয়রে বসন্ত ও তোর কিরণমাখা পাখা তুলে’। বসন্তবরণে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতাকে কণ্ঠে তুলে নেন বাচিকশিল্পী নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। ‘আমার পরিচয়’ শিরোনামের কবিতার সূত্র ধরে বাঙালিত্বের অহংবোধে উচ্চারিত হয়Ñ আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি/চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে...। ঋতুরাজের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে সালমা আকবর গেয়ে শোনানÑ আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে/এত পাখি গায় ...। এরপর নাচ করে নৃত্যমের শিল্পীরা। প্রিয়াংকা গোপ গেয়েছেন নজরুলের গান ‘এলো ফুলের মরশুম’। একক নাচের পরিবেশনায় গৌড়ীয় নৃত্যের আশ্রয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। নজরুল শিল্পী সংস্থা পরিবেশিত সম্মেলক সঙ্গীতের শিরোনাম ছিল ‘বসন্ত এলো এলো রে’। দোল ফাগুনের দোল লেগেছে/ আমের বনে দোলনচাঁপায়Ñগানের সুরে নাচ করেছে নৃত্যনন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। সুরতীর্থের কণ্ঠশিল্পীরা গেয়েছেন ‘সহসা ডালপালা তোর উতলা যে’। ‘আজ ফাগুনের আগুন লাগে পলাশে শিমুলে’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। পরিবেশনার এ পর্যায়ে আসে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সাজানো বসন্ত কথন। ঢাকের বাদ্যে শুরু হওয়া আলোচনায় পরিষদের সহ-সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দীন আহদের সভাপতিত্বে অংশ নেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও ম. হামিদ। এ সময় আলোচকসহ অনুষ্ঠানে সমাগতদের হাতে পরিয়ে দেয়া হয় রাখিবন্ধনী। পর্বটি সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। হাসান ইমাম বলেন, এমন উৎসবকে ঘিরে আসলে আমাদের মধ্যে ভালবাসার বিনিময় ঘটে। মানুষে মানুষে ছড়িয়ে যাওয়া এই ভালবাসাকে উপজীব্য করে প্রকৃতির প্রতিও সদয় হতে হবে। অনুরাগী হতে হবে সবুজ-শ্যামল নিসর্গের। ভালবাসতে হবে বৃক্ষরাজিসহ পুষ্পলতাকে। তাই মাদারস ডে বা ফাদারস ডে’র মতো অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি না করে নিজেদের সংস্কৃতির জয়গান গাইতে হবে । ম. হামিদ বলেন, সুন্দরকে আবাহনের জন্য বাঙালীর কোন দিন-তারিখ লাগে না। তাই তো সারাবছরই মঙ্গলের কামনায় আমরা উৎসব আনন্দে মেতে থাকি। সেই সূত্র ধরে সুন্দরকে আবাহনের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছে এই বসন্ত উৎসব। এই ঋতু উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে পাল্টে যাওয়া প্রকৃতির সঙ্গে আমরাও নবসাজে সজ্জিত করি মনকে। সফিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ২৪ বছর আগে ১৪০১ বঙ্গাব্দে শুরু হয় এ উৎসব। বর্তমানে বসন্ত বন্দনার আয়োজনটি এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোন আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও মনের তাগিদেই এ উৎসমব উদ্যাপনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে শহরবাসী। বসন্ত কথন শেষে শুরু হয় লাল-নীল-হলুদ রঙের আবীর মাখিয়ে দেয়ার পর্ব। একে অন্যের কপালে ও গালে ছুঁয়ে দেয়া বর্ণবহুল আবীরের মাখামাখিতে উৎসবটি হয়ে ওঠে আরও রঙিন। এরপর ছিল কাদামাটির শিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্য। গান শুনিয়েছে ট্যাগোরস কভার নামের নারী-পুরুষে গড়া সঙ্গীত দল। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করেছেন সামিউল ইসলাম পোলাক। সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বপ্নীল সজীব। বকুলতলায় বৈকালিক পর্বের বসন্ত উদযাপনে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। রাত আটটা পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানমালায় ছিল গান, কবিতা আর নৃত্য। একক কণ্ঠে গান শোনান মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, মীরা ম-ল, স্বাতী সরকার, তানজিনা তমা, ছায়া কর্মকার, মুনিরা ইসলাম পাপ্পু, সুষ্মিতা দেবনাথ শুচি প্রমুখ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ, নৃত্যালোক, বৈশাখী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, জাগো আর্ট সেন্টার, স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্র, নৃত্যধারা, ঝংকার নৃত্য একাডেমি, কত্থক ও ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে উত্তরায়ন, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সুরের ধারা, বাফা ও নিবেদন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন নিমাই ম-ল ও কাজী বুশরা আহমেদ। ছিল রিতা সাহার কণ্ঠে বিরহের গান এবং আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনা। বিকেলে রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের বসন্ত আবাহনী আয়োজনে একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খগেন্দ্র নাথ সরকার, নীলউৎপল সাধ্য, সাজেদ আকবর, মহাদেব ঘোষ, নজিবুল হক, মামুন জাহিদ খান, সেমন্তি মঞ্জুরি, আবিদা রহমান সেতু প্রমুখ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ফোক বাংলা, বহ্নিশিখা, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, গীতশতদল, সমস্বর, সুরবিহার, বাফা, বেণুকা ললিতকলা একাডেমি। নৃত্য পরিবেশন করে সৃজন, নৃত্যমঞ্চ, নটরাজ, নৃত্যজন, নান্দনিক, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বেণুকা ললিতকলা একাডেমি ও ইস্কাটন স্কুল। শিশুদের দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কল্পরেখা। ছিল মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের সম্মিলিত আবৃত্তি। বিকেলে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও ছড়িয়েছে বসন্ত উৎসবের রং। শিশু সংগঠনের পরিবেশনায় অংশ নেয় সপ্তকলির আসর, গে-ারিয়া কিশালয় কচি-কাঁচার মেলা ও সীমান্ত খেলাঘর আসর। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাফা, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মরমী লোকগীতি শিল্পীগোষ্ঠী, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও সুরতাল সঙ্গীত একাডেমি। আধুনিক ঢাকার উত্তরাতেও ছিল বসন্ত আবাহনের আয়োজন। ৩নং সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত কথনের সঙ্গে ছিল নৃত্য-গীত ও আবৃত্তির মন মাতানো পরিবেশনা। সোমবার সকাল থেকেই শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বসন্ত উৎসব। একাডেমি প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত মঞ্চে সম্মেলক কণ্ঠে ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় এ আয়োজন। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ ও বহ্নিশিখার শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী মাহিদুল ইসলাম, তামান্না তিথি ও লায়লা আফরোজ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেমন্তী মঞ্জরী, সুচিত্রা রানী সূত্রধর, রফিকুল আলম, রুখসানা আক্তার রূপসা ও খায়রুল আনাম শাকিল। লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইয়ে ছিল ‘ফাগুন সমীরণে’ শিরোনামে বসন্ত উৎসবের আয়োজন। কবিতা, সঙ্গীত ও নৃত্যের পাশাপাশি এ আয়োজনে ছিল যাত্রাপালা। সানিডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল কবিতা, সঙ্গীত ও নৃত্য। সবশেষে ছিল ঝিনাইদহের দিশারী নাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ছিল যাত্রাপালা ‘অনুসন্ধান’। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক সংগঠন সমগীত। কলাভবনের সম্মুখের বটতলায় তাদের আয়োজনে ছিল দেশীয় নাচ, গান পরিবেশনা। অংশ নিয়েছেন সমগীত ঢাকা বিভাগ, আমরাই, আমাদের পাঠশালা, অন্যস্বর, সহজিয়া, মাভৈ, মাদল, লীলা এবং সমগীত গানের দল। এছাড়া বনানীর যাত্রা বিরতি নামের মঞ্চে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বসন্ত মেলা। এর বিশেষ আকর্ষণ ছিল পুতুলনাচ। এছাড়া এ আয়োজনে রয়েছে ধারক, জলেরগান, শায়ান, সজীব, অর্নব ও বাউল শফি ম-লের পরিবেশনা।
×