ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহিউদ্দিন চৌধুরীর জানাজায় লাখো জনতা ॥ পিতা-মাতার পাশে সমাহিত

শোকস্তব্ধ দেশ ॥ চলে গেলেন চট্টলবীর

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

শোকস্তব্ধ দেশ ॥ চলে গেলেন চট্টলবীর

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রণাঙ্গনের সম্মুখসারির যোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হ্যাটট্রিক বিজয়ী সাবেক মেয়র চট্টলবীরখ্যাত আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ম্যাক্স হসপিটালে তিনি এই সুন্দর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছেন মহাসিন্ধুর ওপারে। কাঁদিয়ে গেলেন চট্টগ্রামকে, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শ্রেণী ও পেশার জনসাধারণকে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র, ৩ কন্যা, লাখো ভক্ত, অনুরাগী, শুভানুধ্যায়ী, দলীয় সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের অগণন নেতাকর্মী রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’সহ তাঁর নামে কয়েকটি বইও রচিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে গোটা চট্টগ্রাম হয়ে আছে শোকে মুহ্যমান। প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রাম ও দাবি আদায়ে হার না মানা এই রাজনীতিকের মৃত্যুর খবরে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর পর শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম হারিয়েছে একজন প্রকৃত অর্থের অভিভাবককে। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের বন্ধু ও ‘মানুষ মানুষের জন্য’ যা বোঝায় প্রকৃত অর্থে মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন তার জ্বলন্ত প্রতিকৃতি। জননন্দিত নেতা মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, এমপি, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সমবেদনা জানানো হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হার্টের রোগে ভুগছিলেন। তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। এরপর হয়েছে ডায়াবেটিস। আরও পরে আক্রান্ত হন কিডনিজনিত জটিল রোগে। মাসখানেক আগে তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর (সিআরএফ)। এসব জটিল রোগ নিয়েই তিনি তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপে দিনরাত সম্পৃক্ত থাকতেন। গত ১১ নবেম্বর রাতে আকস্মিক অসুস্থ করলে তাঁকে প্রথমে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাখা হয় আইসিইউতে। পরদিন হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ অনুভব করার পর আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে এয়ারএ্যাম্বুলেন্সযোগে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরের অ্যাপোলো গ্লিনিগালস হাসপাতালে। সেখানে তাঁর হার্টে দুটি রিং বসানো হয় এবং কিডনি রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। সিঙ্গাপুরে এগারো দিন চিকিৎসা শেষে গত ২৬ নবেম্বর তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসে পুনরায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় আরও সুস্থবোধ করলে তাঁকে গত ১২ ডিসেম্বর নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামে ষোলশহরের চশমাহিলের নিজ বাস ভবনে। আবার শুরু করেন রাজনৈতিক কর্মকা-। বিশেষ করে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানরত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার কার্যক্রম তদারকির সঙ্গে যুক্ত হন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে কিডনি ডায়ালিসিসের জন্য নিয়ে আসা হয় নগরীর ম্যাক্স হসপিটালে। ডায়ালিসিস শুরু করার আগে তাঁর আকস্মিক শারীরিক অবনতি ঘটে। ফলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরিস্থিতি অবনতিশীল হতে থাকায় তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। মধ্যরাতের পর অর্থাৎ রাত ১টা নাগাদ চিকিৎসকগণ নিশ্চিত হয়ে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী ক্লিনিক্যালি ডেড। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সড়কযোগে চট্টগ্রাম রওনা দেন। শুক্রবার ভোর ৩টা নাগাদ তিনি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হলে নন্দিত মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনের চির অবসান ঘটে। স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁর দেহঘড়ি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরের পর দুপুর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলীয় নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও আত্মীয়স্বজনের ভিড় জমতে থাকে। রাত ৩টার পর তাঁর চিরবিদায়ের তথ্যটি জানান পুত্র ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভিড় জমানো সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর হাসপাতাল থেকে এই বীরের মরদেহ নেয়া হয় তাঁর পৈত্রিক নিবাস নগরীর ষোলশহরের মেয়রগলির চশমাহিলের বাস ভবনে। তাঁর মৃত্যুর খবর ভোর থেকেই ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে তাঁর বাস ভবনে। জননন্দিত এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে একনজর দেখার জন্য সর্বস্তরের মানুষ মেয়রগলিমুখী হয়। সড়কজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর সারিবদ্ধভাবে মরদেহবাহী গাড়িতে রাখা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মানুষ পুষ্পমাল্য অর্পণ ও বিভিন্নভাবে তাদের গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর বেলা ৩টার দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য কিছু সময় রাখার পর নেয়া হয় তাঁর প্রিয় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে, যেখানে তিনি অসংখ্য জনসমাবেশ করে এই মাঠের মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। সেখানে লাখো জনতার অংশগ্রহণে নামাজে জানাজা শেষে চশমাহিলের পারিবারিক কবরস্থানে পিতা হোসেন আহমেদ চৌধুরী ও মাতা বেদুরা বেগমের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। গার্ড অব অনার প্রদানকালে বিউগলের করুণ সুর যখন ধ্বনিত হচ্ছিল সকলের চোখমুখ ছিল অশ্রুসজল। অশ্রুজলে ভেসে যায় লালদীঘি ময়দান। মহিউদ্দিন চৌধুরী ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তাঁর জীবনের পুরো সময়টি বিলিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মকা-ে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে, মানুষের সকল পর্যায়ের দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে। কোথায় ছিল না তাঁর পদচারণা। এর এমন কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী বাণিজ্যিক রাজধানী এই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সুইপারদের নামটি বদলে ‘সেবক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এই সেবক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী নেতা, শ্রমিক নেতা, ছাত্র নেতা, সাংবাদিকদের সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মার সম্পর্ক। চশমাহিলের তাঁর বাস ভবনটি ছিল রীতিমত একটি লঙ্গরখানা। বাসায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে না খেয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন এমন নারী-পুরুষ বা শিশুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। মোদ্দাকথা, অতিথি আপ্যায়নে তাঁর কোন কার্পণ্য ছিল না। অফিস, বাসা যেখানেই বসতেন সেখানেই আগত অতিথিদের খাওয়াতে পারলেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। অসুস্থতাজনিত তিনি নিজে খেতে পারতেন না। কিন্তু অন্যদের একাধিক আইটেমসহকারে ভোজন করাতে তিনি ছিলেন পারঙ্গম। হার্টের রোগ ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন ভোজনবিলাসী। ওপেন হার্ট সার্জারির পর তাঁর খাওয়াদাওয়ায় রুটিন করে দেয়া হলেও তিনি খুব একটা মানতেন না। খেতেন কম। কিন্তু খাওয়াতেন বেশি। এভাবেই অতিবাহিত হয়েছে মহিউদ্দিনের সংগ্রামী জীবন। ‘যে দেশকে ভালবাসে- সে পরিবারকে ভালবাসা দিতে পারে না।’ বহুল আলোচিত এই প্রবাদের অধিকারী ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাই তাঁর ব্যক্তিজীবন বলতে কিছুই ছিল না। কারণ,তিনি বুঝে গিয়েছিলেন পরিবারকে বেশি ভালবাসলে জনগণকে অনুরূপ ভালবাসা যাবে না। তাঁর বেডরুমটিও সারাক্ষণ থাকত মানুষে মানুষে ঠাঁসা। আর বেডরুমের বাইরে নিজ উদ্যোগে গড়া ভবনটি ছিল নিত্যকার একটি লঙ্গরখানা। এই ভবনটিকে তিনি মনে করতেন একটি কমিউনিটি সেন্টার। সুইপার থেকে শুরু করে বহু গরিব-দুঃখী মানুষের বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য উন্মুক্ত করে দিতেন ভবনটি। সিটি কর্পোরেশনের সুইপার সম্প্রদায়- যাদের তিনি সেবক নামে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের অনগ্রসর থেকে অগ্রসর জীবনে নিয়ে আসার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অপরিসীম। সুইপার পরিবারের বহু যুবক-যুবতীকে তিনি নিজ অর্থে লেখাপড়া শিখিয়েছেন এবং এখনও শিক্ষারত। চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যার নাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ৫টি ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। প্রায় সতেরো বছর মেয়র পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালে তিনি বহুমুখী আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে কর্পোরেশনকে করে তোলেন স্বাবলম্বী। মহিউদ্দিন চৌধুরীই প্রথম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র। এরপর আরও পর পর দু’বার নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক মেয়রের গৌরব অর্জন করেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির পদে তিন দশকেরও বেশি সময় নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনের অভিভাবকের পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বদরাগী স্বভাবের এই মানুষটির ভেতরের দিকটি ছিল উদার ও সহযোগিতা প্রদানে ভরপুর। তাঁর কাছে গিয়ে বকাঝকা খেয়েও খালি হাতে কেউ ফিরেছেন এমন রেকর্ড নেই। তিনি রাজনীতি বুঝতেন। বর্তমান ও আগামীর রাজনীতি কোন্ পথে যাবে তাও আঁচ করতে পারতেন। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে ছিল তাঁর ভিন্নধর্মী সম্পৃক্ততা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসুস্থ শরীর নিয়েও সকলের সঙ্গে সঙ্গ দিতেন। দিবারাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের চেয়ে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও রাজনৈতিক দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেই তিনি সময় কাটাতেন। বিপদে-আপদে পড়া মানুষ ছুটে যেতেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে। সমস্যার কথা শুনলে প্রথমে তিনি তেড়ে উঠতেন বটে। কিন্তু পরে ওই সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকতেন। তাঁর সহযোগিতায় বহু জটিল সমস্যার সমাধান হয়েছে এমন সংখ্যা ভুরি ভুরি। চট্টগ্রামের প্রতিবাদী ডাকসাইটে রাজনীতিক, আওয়ামী রাজনীতির কা-ারি হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যু শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য একটি শূন্যতা যে বিরাজ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে পৌঁছেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী চট্টগ্রামের বিশিষ্ট রাজনীতিক জহুর আহমদ চৌধুরী, এমএ হান্নান, এমএ মান্নানসহ অসংখ্য নেতৃত্বদানকারী নেতার সংস্পর্শে থেকে তিনি রাজনীতির ভিতকে মজবুত করেছেন। তাঁর এই মৃত্যু পরবর্তী শূন্যতা আদৌ পূরণ হবে কিনা-তা বলে দেবে ভবিষ্যত। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি শুক্রবার এক শোকবার্তায় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি হামিদ দেশ ও জনগণের প্রতি মহিউদ্দিনের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে তার অবদানের কথা জনগণ চিরদিন স্মরণ রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং গণমানুষের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার শোক বার্তায় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালবাসা ও প্রেমকে লালন করে মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেকে নিজের মাটি থেকে উত্থিত একজন প্রকৃত রাজনৈতিক নেতায় পরিণত করেছিলেন।’ শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি তার সময়ের সকল আন্দোলনে অগ্রণী ছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী বারবার কারা যন্ত্রণা ভোগ করেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে কোনদিন আপোস করেননি। সরকারপ্রধান বলেন, জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ‘গণমানুষের হৃদয়ে তিনি চিরজীবী হয়ে থাকবেন’, -বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও সমবেদনা জানান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ও চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু প্রমুখ।
×