ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিয়ের নৌকাডুবি, চারজনের লাশ উদ্ধার, কনেসহ নিখোঁজ ৫

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৭ মার্চ ২০২০

রাজশাহীতে বিয়ের নৌকাডুবি, চারজনের লাশ উদ্ধার, কনেসহ নিখোঁজ ৫

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ অপেক্ষাকৃত খরাস্রোতহীন রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বিয়ের দুটি নৌকা ডুবির ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বর জীবিত উদ্ধার হলেও এখনো কনেসহ নিখোজ রয়েছে অন্তত ৫ জন। নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চলছে। দলকল বাহিনী, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডাব্লুটিএ’র একটি ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে একলাস আলী ও পরে রতন আলী নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে চারজনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা নদীর ওপারে বৌভাতের অনুষ্ঠান থেকে দুটি নৌকায় তারা পবা উপজেলার ডাঙ্গের গাট গ্রামে ফিরছিলেন। তবে নদীতেই দুই নৌকার ধাক্কা লেগে দুটি নৌকায় পদ্মায় ডুবে যায়। এর পর থেকেই অভিযানে নামে সংশ্লিষ্টরা। নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের লাশ ভেসে উঠে। এর আগে সকালে চারঘাট এলাকা থেকে মনি খাতুন নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ঘটনার পর পরই এক শিশুকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে চারজনে। তবে এখনো কনেসহ অন্তত ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে। এছাড়াও ডুবে যাওয়া নৌকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান নৌ পুলিশের ওসি। এখনো যারা নিখোজ রয়েছেন তারা হলেন, কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬), চাচা শামিম হোসেন (৩৫), শামিমের মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) এবং খালা আখি খাতুন (২৫)। শনিবার সকালে কনের চাচা শামিমের স্ত্রী মনি খাতুনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে পাওয়া যায় তাদের আত্মীয় একলাস আলীর লাশ। এর পর পাওয়া গেছে কনের ভগ্নিপতি রতন আলীর লাশ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই রতনের মেয়ে মরিয়মের (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন রতনের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুনকে (২০)। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে শুরু থেকেই দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌ-পুলিশ রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সকালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআইডাব্লুটিএ’র একটি ডুবুরি দল। এই নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে নিখোঁজ ও হতাহতের অনুসন্ধান উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিহতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও আহতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা। রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিপুর এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ৩৬ জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে এক শিশু মারা যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের যাত্রী নিয়ে পবা উপজেলার খানপুর থেকে ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল নৌকা দুইটি। রাতেই দমকল বাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার অভিযান চালায়। খবর পেয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন শুক্রবার রাত ১০টায় ঘটনাস্থল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজের সার্বিক খোঁজখবর নেন। এরপর উদ্ধারকৃতদের দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান মেয়র। এ সময় আহতদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের জন্য যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের নির্দেশ প্রদান করেন। এদিকে নৌকা ডুবির ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে করে। ঘটনার পর সাতরিয়ে ওপারে বর উদ্ধার হলেও কনের হদিশ এখনো মেলেণি। কনের নাম সুইটি খাতুন পুর্ণি (২০)। তিনি পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। আর বরের নাম আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। তিনি চরখানপুরের মৃত ইনছার আলীর ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানায়, দুই মাস আগে তাদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। শুক্রবার বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে তারা ফিরছিল। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, খানপুর এলাকায় বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে বর-কনে নিয়ে পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল। দুইটি নৌকায় ৩৬ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১৭ জন নারী ও ৬ জন শিশু। সন্ধ্যায় চরখিদিরপুর এলাকায় দুই নৌকা ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। ০পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনার পর বিয়েকে ঘিরে দুই বাড়ির দৃশ্যপট এখন শোকাবহ। স্বজন হারানোর ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে বিয়ের ধুমধাম। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে কান্নার রোল পড়ে গেছে দুই পরিবারেই। নৌকাডুবির পর ভাগ্যক্রমে কোনোরকমে সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে আছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। কিন্তু এখনও সন্ধান মেলেনি তার নববধূর। তিনি বেঁচে আছেন না স্রোতস্বিনী পদ্মাতেই তার সলিল সমাধি হয়েছে সে কথা জানা নেই কারও। তাইতো নদীর পাড়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন সবাই। সেখানে যোগ দিয়েছেন হাজারো কৌতুহলী মানুষ।
×