ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ আজ (৩ ডিসেম্বর) ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাগন বিজয়ের বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করেন । স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। এই দিনে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে পতন হয় পাকিস্তানী বাহিনীর। পাকিস্তানী সেনাদের পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে “জয়বাংলা” ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকেন তরুণ-যুবক সবাই। যে মানুষগুলোর আত্মত্যাগে দেশ শত্র“মুক্ত হয়েছিল তাদের স্মরণে হানাদার মুক্ত দিবস পালনে এবার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেই সব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটি পালনে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকসেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির ওপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারাদেশসহ ঠাকুরগাঁওবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। ঠাকুরগাঁও মহকুমা ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন পাক বাহিনীর স্কোয়াড্রেন লিডার খাদেমুল বাশার। সমগ্র সেক্টরে ১ হাজার ১২০টির মত গেরিলা বেইস গড়ে তোলা হয়। ৮ মে’র আগ পর্যন্ত সুবেদার কাজিম উদ্দিন এর দায়িত্বে ছিলেন। ৯ মে ক্যাপ্টেন নজরুল, কাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কোয়াড্রেন সদরু উদ্দিন ও ১৭ জুলাই ক্যাপ্টেন শাহারিয়া সাব সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২১ নবেম্বর থেকে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর থানা অঞ্চলে। ২৯ নবেম্বর তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্র“ মুক্ত হয়। এরপর পাকিস্তানী বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে। ৩০ নবেম্বর পাকিস্তানী সেনারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভুল্লী (ঠঁষষর) ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে। পহেলা নবেম্বর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগন ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে ঢোকে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শত্র“ বাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাগণ। স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার পর কেউ দিবসটি পালনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মুক্তি শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠান, আলোচচিত্র প্রদর্শন, নাটক, সম্মাননাসহ দিনব্যাপী বেশ কিছু অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আকবর হোসেন বলেন, জেলায় জেলায় যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান বলেন, হানাদার মুক্ত দিবস পালনে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে হারিয়ে যাবে এ দিনের তাৎপর্য। জেলা প্রশাসক ড. কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, দিনটি আরো অর্থবহ করে ধরে রাখতে সকল প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও সংসদের সভাপতি সেতারা বেগম বলেন, দিনটি উদযাপনে সকাল ১০টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আকবর হোসেন। এর পর সকাল ১০.৪৫ মিনিটে সেখানে শোক প্রস্তাব, সম্মাননাস্মারক প্রদান, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে বের হবে মুক্তি শোভাযাত্রা, ২ টায় হবে শহীদ মিনার চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়। এছাড়াও বিকেলে শহীদ মিনারে মুক্ত নাটক ও কবিতা আবৃত্তি, সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণসংগীত ও স্বাধীনতার গান পরিবেশন হবে শহীদ মিনার চত্বরে। সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে সম্মাননা প্রদানকালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোকসংগীত গবেষক ও গণসংগীত শিল্পী কলকাতার লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শুভেন্দু মাইতি পরিবেশন করবেন বিশেষ গণসংগীত।
×