ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকা না হওয়ায় মেলেনি সরকারী বরাদ্দের টিন

সাতক্ষীরা উপকূলজুড়ে ক্ষতচিহ্ন

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

সাতক্ষীরা উপকূলজুড়ে ক্ষতচিহ্ন

মিজানুর রহমান, সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী থেকে ফিরে ॥ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হেনে চলে গেছে ৪ দিন আগে। সাতক্ষীরার উপকূলজুড়ে রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। বিধ্বস্ত বাড়িগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর কোনটির চাল নেই, কোনটির চালের ফ্রেম থাকলেও নেই টিন, টালি কিংবা গোলপাতার ছাউনি। ঘরের মধ্যেই যেন খোলা আকাশ। এসব ঘরের মধ্যেই রাতে পড়ছে কুয়াশা। এই কুয়াশা থেকে বাঁচার জন্য অনেক পরিবার খোলা চালের উপরে পলিথিন টানিয়ে বৃষ্টি আর কুয়াশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। অনেকে তালপাতা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। সরকারীভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি না হওয়ায় সরকারী বরাদ্দ টিন আর পুনর্বাসনের টাকার সহযোগিতা এখনও মেলেনি। এরই মধ্যে বিধ্বস্ত জনপদে অনেকেই বুলবুলের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে নিজেরাই ঘরগুলো নতুন করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। উপকূলীয় জনপদে জীবন সংগ্রামে ঘুরে দাঁড়াতে এ যেন আইলা, ফণী বুলবুলের সঙ্গে ওদের নিরন্তর সংগ্রাম চিত্র। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সাতক্ষীরার উপকূল জনপদে আঘাত হানে ৯ নবেম্বর শেষ রাতে। জেলা প্রশাসনের দেয়া প্রাথমিক ক্ষয় ক্ষতির তালিকায় ১০ নবেম্বর আংশিক বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা দেখানো হয় ৩৩ হাজার ৬শ’ ৬০টি । আর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা দেখানো হয় ১৬ হাজার ৫শ’ ৮০টি। ক্ষয়ক্ষতির এই প্রাথমিক তালিকা দীর্ঘ মনে হওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয় ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসারের নেতৃত্বে ৯ জন সরকারী প্রতিনিধির সমন্বয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য মাঠে রয়েছেন এ সকল কর্মকর্তা। জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির পরই বিতরণ করা হবে সরকারী বরাদ্দের টিন ও নগদ টাকা। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই তালিকা তৈরির কাজ শেষ হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতার জন্য ১০ নবেম্বর সরকারীভাবে সাতক্ষীরার জন্য ১ হাজার বান্ডিল টিন ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা ও টিন এখনও বিতরণ করা হয়নি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় জিআর থেকে বরাদ্দ ৫শ’ ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরিবার প্রতি ১০ কেজি এই চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে। তবে জরুরীভাবে বসবাসের জন্য ভেঙ্গেপড়া ঘরবাড়ির ছাউনির জন্য কোন ত্রিপল, পলিথিন সরবরাহ করা হয়নি। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ইউনয়নের তালিকায় থাকা বুড়িগোয়ালিনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জনকণ্ঠকে বলেন, তার ইউনিয়নে ২০টি গ্রামে প্রায় ৭ হাজার পরিবারের বসতি। বুলবুলের তান্ডবে এখানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯শ’ ঘর বাড়ি। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ঝড় পরবর্তী সরকারী সাহায্য হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১৬ টন জিআর এর চাল। শুক্রবার ১৬শ’ পরিবারের মধ্যে এই চাল বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। বুলবুলের আঘাতে তার ইউনিয়নে ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে সবুজ বেষ্টনী। সঙ্কট চলছে খাবার পানির। ধসেপড়া বাড়িতে বসবাসরত পরিবারগুলো তালপাতা আর পলিথিন দিয়ে কুয়াশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান। একই অবস্থা সুন্দরবন সংলগ্ন পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বসবাসরত ১৫টি গ্রামের। এখানে বসবাসরত ৩৮ হাজার গ্রামবাসী বুলবুলের আঘাতে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে ঘর ভেঙ্গেছে আংশিক ১ হাজারটি। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা ৪শ’টি। ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান জানান, বুলবুল পরবর্তী ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫শ’ ৫০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী । এই প্যাকেটে দেয়া হয়েছে চাল, ডাল, তেল, লবণ, পানি মুড়ি ইত্যাদি। সরকারীভাবে পেয়েছেন ১০ মেট্রিক টন চাল । পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে এই চাল বিতরণ করা হয়েছে। ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে এখানেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, ত্রাণ নিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় নেয়া হবে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×