ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২০ অক্টোবর ২০১৯

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১৯ অক্টোবর ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রসিদ বহুল আলোচিত সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার রায় ঘোষণা করবেন। মামলার কার্যক্রম শুরুর ৬২ কার্য দিবসে নুসরাত হত্যা মামলার সকল আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনার প্রায় সাত মাসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হলো। এ মামলার বিচার শুরুর পর ৬২ কার্য দিবস আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র, বাদী ও আসামিদের যুক্তিতর্কের ওপর আইনগত প্রশ্নের উত্তর শেষে আদালত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে। গত ২৯ মে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোঃ শাহ আলম। চার্জশীটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। এরপর ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী এবং নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্যদিয়ে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুতে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান সাক্ষ্য প্রদান করেন। এরপর এক এক করে ৪৭ কার্য দিবসে ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। সর্বশেষ সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শাহ আলম সাক্ষ্য প্রদান করেন। তিনি ঘটনার পর মোবাইলে আসামিদের একে অপরের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও কলের রেকর্ড, নুসরাতের ডাইং ডিক্লারেশনসহ বেশ কিছু অডিও-ভিডিও আদালতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতির উপস্থাপন বাংলাদেশে এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন আইনজীবীগণ। আলোচিত এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুরউদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মোঃ শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল ও হাফেজ আবদুল কাদের । এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা হলেন- নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল মাদ্রাাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
×