ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুর মূর্ছনা আর আলোচনায় কবি হাফিজকে স্মরণ

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

সুর মূর্ছনা আর আলোচনায় কবি হাফিজকে স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মরমী সুর মূর্ছনা আর আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে ইরানের কবি হাফিজ সিরাজিকে স্মরণ করা হয় ঢাকার ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে। ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ রেজা নাফার। বিশেষ অতিথি ছিলেন, শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সঙ্গীত পরিচালক আজাদ রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানী ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাযেম কাহদুয়ী। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়্যেদ হাসান সেহাত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেজা নাফার বলেন, কবি হাফিজ প্রায় সাত শ’ বছর আগে ভারতবর্ষে মিষ্টিখণ্ড পাঠিয়েছিলেন। সেই মিষ্টিখণ্ড পেয়ে উপমহাদেশের অনেকে মিষ্টি মানুষে পরিণত হয়েছে। আনন্দের বিষয় যে, ইরান ও বাংলাদেশের মানুষ আজ পাশাপাশি বসে হাফিজের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাফিজ একজন আরেফ ছিলেন একজন আশেক ছিলেন। তিনি যে হাফিজ হয়েছিলেন তার পেছনে কিছু রহস্য ছিল। হাফিজ কোরানকে হেফজ করেছিলেন। পবিত্র কোরানের আয়াতে বলা হয়েছে, কোন পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া একে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। হাফিজ ছিলেন তেমন পবিত্র ব্যক্তি। আরেকটি রহস্য ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার পরিবার তথা আহলে বাইতের সঙ্গে সম্পর্ক। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আহলে বাইতের প্রেমিক। হাফিজের মতো এত পাণ্ডিত্যপূর্ণ মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ। বিশ্বের সকল মানুষ হাফিজকে ভালবাসে। বাংলার বিষয়ে হাফিজের বিশেষ ভালবাসা ছিল। সেই ভালবাসা থেকেই তিনি মিষ্টিখণ্ড প্রেরণ করেছিলেন। সেই মিষ্টিখণ্ডের রং কখনই হারিয়ে যায়নি। আমরা গর্ববোধ করছি যে, বাংলাদেশের অনেক মানুষের সঙ্গে ফারসীর সম্পর্ক রয়েছে, তারা সীনায় সীনায় ফারসীকে সংরক্ষণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা গর্ববোধ করি আরও একটি কারণে যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার ছাত্রছাত্রী ফারসী ভাষায় শিক্ষালাভ করছেন। ড. কাযেম কাহদুয়ী বলেন, আমরা ফারসী ভাষাভাষীরা এ কারণে গর্ববোধ করি যে, হাফিজ, সাদী, রুমির মতো মহাকবিরা আামদের মধ্যে এসেছিলেন। আমরা সরাসরি তাদের কবিতার রস আস্বাদন করতে পারি। তিনি ছিলেন এমন একজন কবি যার কবিতার বই ইরানের প্রায় প্রতিটি ঘরে পবিত্র কোরানের পাশাপাশি রাখা হয়। হাফিজ ১৪টি রেওয়ায়াত থেকে কোরানকে হেফজ করেছিলেন। তিনি তার কবিতায় বার বার কোরানকে ব্যবহার করেছেন। যে গুপ্তধন তিনি ব্যবহার করেছেন তা হলো রাত বা ভোরের সময়ে দোয়া করা। এজন্য হাফিজকে জানতে কোরান, হাদিস ও ইরানের পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তিনি বলেন, খইয়্যামের কবিতার সঙ্গে হাফিজের কবিতার মিল পাওয়া যায়। ফেরদৌসি সম্পর্কেও তিনি অনেক কিছু বলেছেন। আজাদ রহমান বলেন, হাফিজের জন্ম ১৩১৫ সালে। আর তিনি ইন্তেকাল করেন ১৩৯০ সালে। অর্থাৎ প্রায় সাত শ’ বছর ধরে তার রচনা আমাদের মধ্যে রয়েছে। তিনি অসাধারণ গজল রচনা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইরানে গজলের ব্যাপক প্রভাব ছিল কিন্তু বর্তমানে গজলের রেওয়াজ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, কেবল বাংলা বা উপমহাদেশের জন্য নয়, বরং সারাবিশ্বের জন্য হাফিজের প্রয়োজন। তিনি প্রেমের বাণী শুনিয়েছেন। প্রেমই স্নেহ, প্রেমই মমতা, প্রেমই মানবতা। যদি ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হাফিযের গজলের বিষয়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে তিনি এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত আছেন বলে জানান। অনুষ্ঠানে গজলশিল্পীদের সঙ্গে সুরের মূর্ছনায় মঞ্চ মাতান বংশীবাদক আরিফুর রহমান।
×