ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক ছাড়া অন্যান্য সড়কে হকার বসার অনুমতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক ছাড়া অন্যান্য সড়কে হকার বসার অনুমতি

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জে নগরীর ফুটপাতে হকার বসনোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও সিটি মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার দিন যে সমস্ত বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার ও প্রদর্শন হয়েছে তা শনাক্ত করে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক। মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনার দুদিনে কোন পক্ষই মামলা দেয়নি। অবশ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে জানান, সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মেয়র আইভী বা সাংসদ শামীম ওসমান সমর্থকদের পক্ষ থেকে কোন মামলা হয়নি। সহিংস হামলার ঘটনার দিন পুলিশ পক্ষপাত্বি করেছে বলে শামীম ওসমান ও আইভীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সুপার দাবী করেন, পুলিশ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবেই দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি জিডি হয়েছে। এদিকে হকার ইস্যু নিয়ে নগরীতে উত্তপ্ত, লঙ্কাকান্ড, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার পর প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত সিরাজউদ্দৌলা সড়ক, চেম্বার রোড, সলিমুল্লাহ সড়কসহ শাখা রোডে হকার বসার অনুমতি মিলেছে। অবশ্য বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক ছাড়া বেশ কয়েকটি সড়কগুলোকে অনেক হকারকে তাদের দোকানপাট নিয়ে কেনা-বেচা করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার জানান, সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পলিশ প্রশাসন ও র্যাবের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারকে আহবায়ক করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ) মোস্তাফিজুর রহমান, র্যাব-১১ সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত রির্পোট জমা দেয়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। নগরীতে হকার বসার বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত অন্যান্য কয়েকটি সড়কে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদেরকে বসতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বুধবার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পৃতিবার বিকেল পাচঁটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত হকাররা বেচাকেনা করতে পারবে। তবে এ সিদ্ধান্ত সাময়িক সময়ের জন্য। পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী পূণর্বাসনের ব্যাপারে মেয়র ও সাংসদের সম্মিলিতক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলমান শীত মৌসুম হকারদের মজুদকৃত পোশাক ও মামালামাল বিক্রি করে তারা যেন পুঁজি তুলে আনতে পারে সেইদিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এ সিদ্ধান্ত আপাতত মেনে নিয়েছে। বর্তমানে এই নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আসাদুল ইসলাম জানান, র্দীঘ ২৫ দিন আন্দোলনের পর জেলা প্রশাসন সিটি মেয়র আইভীর সাথে বৈঠক করে বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত শাখা সড়কগুলোতে বসার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের মাত্র ২৫ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু সড়কে ৭৫ শতাংশ হকার বসে। আমাদের দাবি প্রশাসন যেন এই ৭৫ শতাংশ হকারের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হয়। তিনি বলেন, ঘটনার দিনের সংর্ঘষের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুল ইসলাম বলেন, হাকার রুটি রুজির আন্দোলন করছিলো। তাদের আন্দোলনে কেউ ঘোলাপানিত মাছ শিকার করছে কিনা সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তিনি বলেন, সংর্ঘষের দিন যখন হকারদের চৌকি ভেঙ্গে মারধর, তাদের মালামাল নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তখন হকারার আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ঢিল ছুড়েছে। উল্লেখ্য নগরীরর বঙ্গবন্ধু সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক থেকে গত ২৫ ডিসেম্বর হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে হকরা ফুটপাতে বসার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। এই আন্দোলনে হকারদের পক্ষ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চার আসনের সাংসদ শামীম ওসমান গত ১৫ (জানুয়ারী) ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, ১৬ জানুয়ারী বিকেল সাড়ে চারটা থেকে নগরীর ফুটপাতে হকার বসবে। এটা আমার নিদের্শ। এই প্রেক্ষিতে নগরীর ফুটপাতে হকার বসে। প্রতিবাদে মেয়র আইভী সিটি কর্পোরেশন থেকে পায়ে হেঁটে চাষাঢা এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ বেধেঁ যায়। এতে মেয়র আইভীসহ প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে ঘন্টাব্যাপী নগরীর চাষাঢ়া এলাকায় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকার ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় মেয়র আইভী, ১২ সাংবাদিক, ৭ পুলিশসহ কমপক্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই শতাধিক রাউন্ড শর্টগান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তবে পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ৯৮ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ২ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন।
×