ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ॥ ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূল। প্রাণহানী ঘটেছিল হাজার হাজার মানুষের। সেই থেকে বাঁশখালীর সাগর উপকূলে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে বসবাস করছিল ৭ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। তবে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় উপকূলবাসীর মরণ ফাঁদ বেড়িবাঁধ নির্মাণে একনেকের বৈঠকে পাস হয়েছিল ২শ ৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। পাস হওয়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজের অনুমোদন পায় বিভিন্ন ঠিকাদার। তবে সেই নির্মাণ কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়মের ফলে উপকলবাসীর মরণ ফাঁদ বেড়িবাঁধ স্থায়ী হবে তো? রবিবার সরেজমিনে উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বেড়িবাঁধে নানা ভাবে আঘাত হানছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হতে না হতেই বসানো ব্লক গুলো দেবে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ব্লক দেবে যাওয়ায় স্থানীয় জনগণ নানা ভাবে এই বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তাছাড়া কাজ শুরুর পর থেকে বিশেষ করে খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া অংশে কাজ শেষের পথে থাকলেও অপরাপর অংশে এখনো কাজ চলমান রয়েছে। বাধেঁ বেতাগী থেকে বালি এনে ব্যবহার করার কথা থাকলেও সিডিউলে তা মানছেনা ঠিকাদার গন। নিজেদের ইচ্ছে মাফিক বালি ব্যবহার করছে তারা। তাছাড়া সিমেন্ট ও সিডিউল অনুসারে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয়দের কাছে সব চাইতে দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। এ ঠিকাদার ক্ষমতার দাপটে প্রভাবশালী মহলের পায়তারায় গন্ডামারা ইউপির পশ্চিম বড়ঘোনা অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে চালাচ্ছে ব্যাপক অনিয়ম। শুরু থেকেই লবণাক্ত বালি দিয়ে নির্মাণ করছে ব্লক। তাছাড়া ব্লক নির্মাণের ক্ষেত্রে সিলেট থেকে পাথর এনে নির্মাণ করার কথা থাকলেও নিম্নমানের পাথর দিয়ে ব্লক নির্মাণ করছে এ ঠিকাদার। এদিকে এ বাধঁ কোন কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্মাণ হলে আর কখন ও স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত উপকুলবাসী। উপকূলবাসী দাবি তাদের আশার আলোতে যেন কোন কালো ছায়া না পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে বাধঁ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নানা ভাবে অনিয়মের কথা উঠে আসলেও তা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভায় গুরূত্ব সহকারে আলোচনা করা হয় বলে জানা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁধের তলদেশ ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য, উপরের প্রস্থ ১৪ ফুট ও উচ্চতা ১৮ ফুট করার কথা রয়েছে। ৩৪টি প্যাকেজে চলমান এ কাজের এখনও পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ শেষ হওয়ায় বেড়িবাঁধে যে ব্লক দেওয়া হচ্ছে তা ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৭টি জিও ব্যাগ প্রস্তুত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যতগুলো বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ। ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীজ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ-২.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উক্ত টাকা ব্যয়ে। ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ পায় তারা। বাহারছড়া ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টার প্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স। খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান যেভাবে ব্লকের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে জোয়ার এবং ঢেউয়ের কারণে নিচের অংশ বারবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। তা থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় ডাম্পিং ব্লক বা এলোমেলো ব্লক বসিয়ে এই ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হবে। না হয় বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এ ব্যাপারে পাউবো উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধের কাজ যাতে সুষ্ঠ এবং সিডিউল অনুসারে হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। তারপরেও যদি কোন রূপ সমস্যা হয় তা কাজ বুঝে নেওয়ার আগে যথাযথ সংস্কার করে বিল প্রদান করা হবে। বাঁশখালীর উপকূলবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থায়ী এ বেড়িবাঁধ কোন ত্রুটি ছাড়াই কাজের সমাপ্তি হবে এ আশা করছে সাধারণ জনগণ এবং এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলার প্রেক্ষিতে চলতি বছরে বেশ কিছু সাইক্লোনে উপকূলীয় জনগণ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে তারা জানান। তবে বর্তমানে বসানো ব্লক গুলো ঢেউ এবং জোয়ারের তোড়ে যেভাবে দেবে যাচ্ছে তাতে উপকূলীয় জনগণ বেড়িবাঁধ নির্মাণে যেভাবে আশ্বান্বিত হয়েছিল সেভাবে শংকিত হয়ে পড়ছে বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে। তাছাড়া নি¤œমানের বালি এবং সিমেন্ট ব্যবহার করায় বাঁধ টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকাবাসীর মাঝে।
×