ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার আহবান

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার আহবান

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উভয় ক্যাম্পাসে বৃহষ্পতিবার পৃথকভাবে ‘রজতজয়ন্তী’ পালিত হয়েছে। গাজীপুর ক্যাম্পাসে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এদিনটি পালিত হয়। এ উপলক্ষে উভয় ক্যাম্পাসে পৃথকভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আগামীতে আরো কঠোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদেও নতুন প্রজন্ম অগ্রণী শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এজন্য তাদেরকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তণ চাই, চাই এক নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে যুগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, জ্ঞান-দক্ষতা ও প্রযুক্তি আয়ত্ব করা। তবে শুধুমাত্র জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে তাদেও মাথা ভর্তি করলে হবেনা। তাদেরকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে নতুন প্রজন্ম জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সততা, নিষ্ঠা, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন পরিপূর্ণ এক মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে। যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য নাগরিক এবং বিশ্বে প্রযুক্তিতে জ্ঞানে তাদের উপর নির্ভর করতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে ‘রজতজয়ন্তী’ অনুষ্ঠাণের দ্বিতীয় ও শেষদিনের অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির ভাষনে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু ও অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ নোমান উর রশীদ বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রী আরো বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নানা অনিয়মের আবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ধ্বংসের প্রান্তসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে সে অবস্থা থেকে অনেকটা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। সেশনজট ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর সমস্যা। তা নিরসনকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ একাডেমিক প্রোগ্রাম গ্রহণ করায় ইতোমধ্যে সেশনজট প্রায় দুরীভূত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্বমানের জ্ঞান, যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে সেটিই হওয়া উচিত আমাদের সকলের অগ্রাধিকার। সভায় রজতজয়ন্তী বক্তা ড. গওহর রিজভী তাঁর বক্তব্যে বলেন, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি উন্নতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বহুলাংশে অর্থহীন হয়ে দাড়ায়। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক ও মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে উচ্চশিক্ষার বিস্তারে অসাধারন ভূমিকা পালন করছে। এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত হবে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা। আর মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও ক্লাসরুম টিচিংয়ের বিকল্প নাই। বিকেলে মন্ত্রী বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে আয়োজিত‘রজতজয়ন্তী’ অনুষ্ঠাণে যোগ দেন। তিনি র্যা লীতে অংশ নেন এবং ‘টেকসই ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নে উন্মমুক্ত ও দূরশিক্ষণ’ বিষয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননান-এর সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী, সাবেক প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আর আই শরীফ, অর্থ কমিটির সদস্য নিজাম চৌধুরী, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি আঞ্চলিক কেন্দ্রেও রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রী বিশ্বমানের শিক্ষাই এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, একবিংশ শতাব্দী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময়োপযোগী শিক্ষাদানে এগিয়ে আসতে হবে। ‘রজতজয়ন্তী’ উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠাণে এদিন কেক কাটা হয় এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শণ করা হয়। উভয় ক্যাম্পাস বর্ণাঢ্য আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠাণ শেষ হয়। অনুষ্ঠাণে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২১শে অক্টোবর গাজীপুরস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এবছর এ বিশ্ববিদ্যালয় দু’টি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে রজতজয়ন্তী দিবস উপলক্ষে পৃথকভাবে নানা অনুষ্ঠাণের আয়োজন করেছে। রজতজয়ন্তী দিবস উপলক্ষে বৃহষ্পতিবার শেষদিনে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি উদযাপিত।
×