ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ॥ সিইসি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ আজ বুধবার বেলা ১১টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন আজ সংলাপ শেষ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়। তিনি বলেছেন, দেশের সব অর্জন ‘আওয়ামী লীগের হাত ধরেই’ এসেছে। দেশ আজ ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় জিয়াউর রহমানের গুণগানের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে ভূয়সী প্রশংসায় ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের আপ্যায়িত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই আলোচনায় অংশ নেন। সিইসি নূরুল হুদা তার স্বাগত বক্তব্যে দেশের ‘প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দল’ আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ থেকে এখনকার কর্মকাণ্ড এবং এ দলের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে প্রায় নয় মিনিট বক্তব্য দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি বর্ণনা করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। সিইসি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের মধ্যে দিয়ে তিনি ‘বিশ্ব মাতৃকার আসনে সমাসীন’ হয়েছেন। নূরুল হুদার বক্তব্য শুনতে শুনতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামসহ সংলাপে উপস্থিত অনেকের মুখে স্বস্তির হাসি দেখা যায়। আর আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের চেহারায় ‘স্বস্তি’ দেখে চার নির্বাচন কমিশনারের মধ্যেও ছিল স্বস্তির ছাপ। গত রবিবার বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপে বসে সিইসি নূরুল হুদা দলটির নেতা সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের গুণগান করেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান চার বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত দিয়েই দেশে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা’ পায়। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ওই বক্তব্যের কারণে ক্ষমতাসীন দলের অনেকের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সিইসিকে। এ অবস্থায় বুধবারের সংলাপে আওয়ামী লীগ নিয়ে সিইসি কী বলেন তা দিকে আগ্রহ ছিল সবার। বিষয়টি মাথায় রেখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার একদফা বৈঠকও করেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বুধবারের সংলাপে সূচনা বক্তব্যে অনেকটা ব্যাখ্যার সুরেই সিইসি বলেন, যে কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের আগে সংশ্লিষ্ট দলের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়। এর ধারবাহিকতায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তিনি তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত নিবেদিত নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। “বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন, ষেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলণ, যা ছাত্র আন্দোল হিসাবে আমরা জানি; তখনকার সফল নেতারা এখানে রয়েছেন।সত্তরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বহু অর্জন, বহুমুখী, গণমুখী সকল আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ফসল।” নূরুল হুদা বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। “বঙ্গবন্ধুর হুকুমে এবং এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তাদের অনেকের অনুপ্রেরণায়, নির্দেশে, পরিচালনায় আমরা তরুণ সন্তান বুকে গ্রেনেড ও কাঁধে অস্ত্র নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।… ঐতিহাসিক সব সফল আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে।” সিইসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নেন। “এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন; কূটনৈতিক সাফল্যে বহু দেশের আনুকূল্য, সমর্থন অর্জন করেন। “নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৩ সালে জাতিকে প্রথম সংসদ নির্বাচন উপহার দেন এবং স্বাধীন দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার গঠন করেন।” নূরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ রেকর্ড অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট কালো রাতে জাতির জনককে সপরিবারের হত্যার মধ্যে দিয়ে জাতির জীবনে ‘কালো অধ্যায়ের’ সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে যে কঠিন সময় পার হতে হয়েছে, সে কথাও সিইসি তার সূচনা বক্তব্যে তুলে ধরেন। “জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। “বহু বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসেন তিনি।” ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সে কথাও তুলে ধরেন সিইসি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিন দফা সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়, রায় কার্যকর করা হয়। “আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে।… উন্নয়নের প্রতিটি খাতে, শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, পরিবেশ সংরক্ষণে আজ বিশ্ব ধরিত্রীর মুকুট প্রধানমন্ত্রীর মাথায়। “প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনে বিশ্ব মাতৃকার আসনে সমাসীন প্রধানমন্ত্রী।” সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন-বিধি বিধানের প্রায় সবগুলোই আওয়ামী লীগের আমলে তৈরি করা। বর্তমান ইসি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে, যা আওয়ামী লীগ সরকারই সম্ভব করেছে। “এখানে উপস্থিত অনেকের কাছ থেকে আগের অনেক পর্যায়ে শিক্ষা, দীক্ষা, সাহস, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি। “আজ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ইসির দায়িত্ব পালনে আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ, সুপারিশ কীভাবে নেওয়া যায়; সাহস পুঁজি করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে সে সহযোগিতা পেতেই আজকের এ সংলাপ আয়োজন ও প্রয়োজন।” নির্বাচন কমিশনের সামনে এগিয়ে যেতে ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সুপারিশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি নূরুল হুদা।
×