ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্বিনকে ছাপিয়ে জাদেজা

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭

আশ্বিনকে ছাপিয়ে জাদেজা

মার্চে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সতীর্থ রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে হঠিয়ে রবিন্দ্র জাদেজা যখন প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে বোলারদের তালিকার শীর্ষে উঠে আসেন অনেকেই তখন অবাক হয়েছিলেন। আশ্বিন স্বীকৃত বোলার, বিশ্বসেরা স্পিনারদের একজন। কিন্তু জাদেজার মূলত টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যান কাম বোলার। নীরবে নিজের বোলিংটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, এখন প্রতিপক্ষের আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন ২৮ বছর বয়সী সৌরাষ্ট্র তারকা। কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫, প্রথম ইনিংসে দুটিসহ মোট ৭ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ব্যাট হাকে করেছেন অপরাজিত ৭০ রান। ফের আশ্বিনকে টপকে শীর্ষে উঠে এসেছেন। বল হাতে দুর্দান্ত এক রেকর্ডও গড়েছেন জাদেজা। বাঁহাতি বোলার হিসেবে সবচেয়ে কম টেস্টে নিয়েছেন দেড় শ’ (১৫০) উইকেট। এই টেস্টেই ইতিহাসের দ্রুত ২০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নিয়ে অনন্য ‘ডাবল’ অর্জন করেন রবিচন্দ্রন আশ্বিন। নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে সতীর্থকে আড়ালে ফেল দেন জাদেজা। বাঁহাতি বোলার হিসেবে সবচেয়ে কম টেস্টে ১৫০ উইকেট নিয়েছেন ধুরন্ধর এই অফস্পিনার। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ২ শিকারের মধ্য দিয়ে বাঁহাতি বোলার হিসেবে টেস্টে দ্রুত ১৫০ উইকেটের নতুন রেকর্ড গড়েন জাদেজা। নিজের ৩২তম টেস্টে এসে ১৫০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তিনি। পেছনে ফেলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়া বাঁহাতি পেসার মিচেল জনসনকে। ৩৪তম টেস্টে দ্রুত ১৫০ উইকেট শিকারের কীর্তি ছিল জনসনের। সর্বোপরি বিশ্বের ১৯তম ও ভারতের পঞ্চম বাঁহাতি বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেট শিকার করলেন জাদেজা। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে দ্রুত ১৫০ উইকেট শিকার করেন জাদেজা। মাত্র ২৯ ম্যাচে ১৫০ উইকেট শিকার গড়ে এই রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছেন ভারতের ডান-হাতি অফ-স্পিনার অশ্বিন। টেস্ট ইতিহাসে সবচেযে দ্রুত ২০০০ রান ও ২৫০ উইকেট শিকারের অসাধারণ ‘ডাবল’ অর্জন করেছেন তুখোড় এই অলরাউন্ডার। ৩২ বছর পর কিউই গ্রেট রিচার্ড হ্যাডলিকে পেছনে ফেলে অনন্য ইতিহাস গড়লেন আশ্বিন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৫৪ রানের পথে অশ্বিন ২০০০ রান ও ২৫০ উইকেটের ডাবল ছুঁয়েছেন ৫১তম টেস্টে। হ্যাডলির রেকর্ডটা ছিল ৫৪ টেস্টে। সাবেক কিউই অলরাউন্ডার সেটি গড়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। কপিল দেব, অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিংয়ের পর চতুর্থ ভারতীয় হিসেবে এই ডাবল ছুঁলেন অশ্বিন। বিশ্ব ক্রিকেটে সংখ্যাটা ১৫। কলম্বো টেস্টটা অধিনায়ক কোহলি তথা গোটা ভারতীয় দলের জন্যেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইনিংস ও ৫৬ রানের বড় জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে টেস্টের নাম্বার ওয়ানরা। টেস্টে ভারতের এটি টানা আট সিরিজ জয়, নয় জয়ে রেকর্ডটা এখনও অস্ট্রেলিয়ার (২০০৫-২০০৮)। সেটি স্পর্শ করার ও ভেঙে দেয়ার সুযোগ থাকছে কোহলিদের সামনে। অধিনায়ক কোহলির সাফল্য, (১) ২-১ বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১৫ সাল, (২) ৩-০ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৫ সাল, (৩) ২-০ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৬ সাল, (৪) ৩-০ বনাম নিউজিল্যান্ড, ২০১৬ সাল, (৫) ৪-০ বনাম ইংল্যান্ড, ২০১৬ সাল, (৬) ১-০ বনাম বাংলাদেশ, ২০১৭ সাল, (৭) ২-১ বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০১৭ সাল, (৮) ২-০ বনাম শ্রীলঙ্কা (চলতি সফরে এক টেস্ট বাকি থাকতেই সিরিজ জয়), ২০১৭ সাল। কলম্বোয় ছিল ভারতের রেকর্ডের ছড়াছড়ি, (১) প্রথম দিনেই ৪০০০ রানের মাইলস্টোন ছুঁয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোন ব্যাটসম্যান হিসেবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে পরপর তিনটি সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ড গড়েন তিনি। (২) দ্বিতীয় দিনটা ছিল অশ্বিনের? ৫১ তম টেস্টে বল হাতে ঝাঁজ দেখান রবি? টেস্টে দ্রুততম ২০০০ রান ও ২৫০ উইকেট প্রাপকদের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসেন ভারতের একনম্বর বোলার। এতদিন (৫৪ টেস্টে) রেকর্ডটা ছিল রিচার্ড হ্যাডলির দখলে। (৩) তৃতীয় দিনে রবিন্দ্র জাদেজা-চমক। ৩২ টেস্টে ১৫০ উইকেট শিকারীদের ক্লাবে ঢুকে পড়ে তিনি? বাঁহাতি বোলার হিসেবে ১৫০ উইকেট প্রাপকদের তালিকায় যা নতুন রেকর্ড। (৪) চতুর্থ দিনে পাঁচ উইকেট নেন জাদেজা। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম একই একই দলের দু’জন (ও আশ্বিন) পাঁচ উইকেট ও একটি করে হাফসেঞ্চুরি হাঁকালেন। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না সুপার কোহলি। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘দেশে খেলছি, না বিদেশে এই বিষয়টা মাথায় রাখতে চাই না। বরং দলের ভেতর এমন একটা মনোভাব গড়ে তুলতে চাই, পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক, লক্ষ্য কেবলই জয়।’ ক্রিকেটে উপমহাদেশের দলগুলোর বিপক্ষে বড় অভিযোগ ‘দেশে বাঘ, বিদেশে বিড়াল’ তারা। কি ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান, আজহার উদ্দীনের ভারত আর অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা? বিদেশে গেলেই কেমন চুপসে যাওয়া! এই ভাবনাটা মুছে ফেলতে চাইছেন বিরাট কোহলি। কোহলির লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করা, ‘সিরিজ জিততে পারাটা নিশ্চয়ই সুখকর একটা অনুভূতি? ‘ইয়েস, হোয়াইটওয়াশেরও একটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমরা এখন আর টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটকে হোম বা এ্যাওয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চাইছি না। আমরা টেস্ট ম্যাচকে শুধুই টেস্ট ম্যাচ হিসেবে দেখছি। কোথায় খেলছি, সেটা নিয়ে ভাবব না। যেখানেই খেলি, জেতাটাই আমাদের লক্ষ্য। যদি নিজেদের দক্ষতার ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস আমাদের থাকে, তা হলে কোথায় খেলছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে না।’ বলেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর কোহলি।
×