ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা সুফিয়ান

বন্ধু সব সময়ের সঙ্গী

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৭ জুলাই ২০১৭

বন্ধু সব সময়ের সঙ্গী

জীবনে চলার পথে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গেই আমাদের মিশতে হয়। এদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে আত্মার বন্ধন গড়ে ওঠে। সুখে-দুঃখে সবসময় একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। স্কুল, কলেজ কিংবা অফিস- যেখানেই হোক না কেন, সবখানে বন্ধুত্ব গড়ে উঠবেই। সত্যিই বন্ধু ছাড়া আমাদের একটা মুহূর্তও কাটে না। আসলে জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ বন্ধু খুঁজে নেয়। তবে একথা ঠিক যে সব বন্ধুর গুরুত্ব সমান হয় না। জীবনের নানা বাঁকে সবচেয়ে ভাল বন্ধুটির প্রভাবই বেশি থাকে। আমাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য কিন্তু অনেকাংশেই দায়ী এই বন্ধু। অনেকেই আছেন যারা শুধু রূপ দেখেই বন্ধু নির্বাচন করেন। এটা কখনই ঠিক নয়। কারণ, দেখতে-শুনতে ভাল হলেই যে কেউ আপনার ভাল বন্ধু হতে পারবে এমনটি নয়। বরং দেখতে কুৎসিত কোন মানুষের মধ্যেও প্রকৃত বন্ধুর গুণ থাকতে পারে। তাই বন্ধু নির্বাচনে রূপ নয়, গুণের দিকে খেয়াল রাখুন। ক্ষমাশীল সম্পর্কে টানাপোড়েন, ভুল বোঝাবুঝি হবেই। এই সময়ও যদি বন্ধু আপনাকে ছেড়ে না যায় তাহলে বুঝবেন এটাই আপনার প্রকৃত বন্ধু। পছন্দকে গুরুত্ব দিবে প্রত্যকটি মানুষই আলাদা। সবচেয়ে ভাল বন্ধু বলেই সব বিষয়ে দুজনের পছন্দের মিল থাকবে- এমনটি নাও হতে পারে। তবে আপনার কোন পছন্দ থাকলে প্রকৃত বন্ধু সবসময় আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে উৎসাহ জোগাবে। যদিও কাজটি তার ভাল লাগে না। লক্ষ্যচ্যুতিতে কষ্ট পাবে সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি জীবনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহস ও সমর্থন দেবে। জীবনে চলার পথে আপনি লক্ষ্যচ্যুত হলে বা মনোযোগ হারিয়ে ফেললে, সেই আপনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেবে। তারপরও যদি ব্যর্থ হন, সেটিকে পাত্তা না দিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর প্রেরণা জোগাবে। কখনও ‘না’ বলবে না আপনার যে কোন সমস্যায় সাহায্যের প্রয়োজন হলে- নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনার সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি কখনোই ‘না’ বলবে না। দিন-রাতের যে কোন সময়ে আপনার একটি মাত্র ডাকেই ছুটে আসবে। উদারতা অর্থ কষ্টে পড়লে অনেক সময়ই নিজের পরিবারকেও জানানো সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে বন্ধুটিই হবে আপনার সবচেয়ে বড় সহায়। যখনই টাকা-পয়সার ঝামেলায় পড়বেন, তার কাছে হাত পাততে পারবেন নিঃসঙ্কোচে। সে আপনাকে কখনও ফিরিয়ে দেবে না। মেধার সর্বোচ্চ বের করে আনবে বন্ধুরা হলো হাতের আঙ্গুলের মতো। আর সবচেয়ে ভাল বন্ধু হলো আপনার হাতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত আঙ্গুল। যার ওপর আপনি আস্থা রাখতে পারেন, নির্ভর করতে পারেন। বিনিময়ে বিভিন্ন কাজে আপনার মেধার সর্বোচ্চটুকু বের করে আনতে ভূমিকা রাখবে সে। ‘কাঠগড়ায়’ দাঁড় করাবে না সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি আপনাকে কখনোই জীবনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না। জীবনে হাতেগোনা ৪-৫ জন পাবেন, যারা সাফল্য-ব্যর্থতা দিয়ে আপনাকে বিচার করবে না। সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি হবে তাদের একজন। সব কথা শুনবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ-গুরুত্বহীন, সার্থক-নিরর্থক যত ধরনের কথা আছে, তার পুরাটাই সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি শুনবে। কখনও বিরক্তি প্রকাশ করবে না। আপনিও মন খুলে বলতে পারবেন আপনার সব কথা। বন্ধুকে সময় দেওয়া দীর্ঘদিনের বন্ধুরা একে অন্যের পেছনে সময় ব্যয় করে। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বন্ধুরা হয়তো আগের মতো সময় দিতে পারে না। এর ফলে যে দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটবে তা কিন্তু না। নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরোনো সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিতে হয় প্রতিনিয়ত। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরোনো বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলা একদমই উচিত নয়। আপনার বন্ধু আর আপনার মাঝখানে কেবল এক মুঠোফোন দূরত্ব। বন্ধুকে মনে করুন, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করুন। ভালো শ্রোতা হওয়া বন্ধুত্বে ভালো শ্রোতা হওয়াও খুব জরুরি। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। বন্ধুকেও কথা বলতে দেওয়া এবং আলোচনায় উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে দুজনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরষ্পরের বুঝে নিতে সহজ হয়। বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে উপহাস না করাই প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব। বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়, বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেওয়া। বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে শেখা একজন প্রকৃত বন্ধুকে অবশ্যই জানতে হবে কিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। অনেকেই জানে না যে বন্ধুত্ব কিভাবে টিকিয়ে রাখতে হয়। ফলে কারণে-অকারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, দূরত্ব তৈরি হয়, বন্ধুত্ব ক্রমেই হারিয়ে যায়। বিপরীতে যারা দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে, তারা এর মূল বিষয়টি জানে। এতে থাকতে হয় স্বাভাবিকতা, প্রাণ চাঞ্চল্য। বন্ধুত্বের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, অনুরাগ, ব্যস্ততা, এড়িয়ে চলা, নার্ভাস ভাব ইত্যাদি দূরে রাখা শিখতে হয়। মানুষের নিরন্তর পথ চলায় অক্সিজেনের কাজ করে বন্ধুত্ব। যে কথা কাউকে বলা যায় না, তার আগল অকপটে খুলে দেয়া যায় বন্ধুর সামনে। বন্ধু কখনো শিক্ষক, কখনো সকল দুষ্টুমির একমাত্র সঙ্গী। মনের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস, আবেগ আর ছেলেমানুষী হুল্লোড়ের অপর নামই তো বন্ধুত্ব।
×