ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন সাংসদ পঙ্কজ নাথ

প্রকাশিত: ০৩:০২, ২৫ মে ২০১৭

সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন সাংসদ পঙ্কজ নাথ

স্টাফ রিপোর্টার , মেহেন্দীগঞ্জ ॥ বরিশাল-৪(হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ বলেছেন, আমি বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটের শরিকদল থেকে উড়ে এসে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হইনি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে যখন আমি অস্টম শ্রেনীর ছাত্র তখন থেকেই বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা শহিদ খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের হাত ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। সেই থেকে অদ্যবর্ধি দলের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেভাবে বলেছেন সেইভাবেই আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। সাংসদ পঙ্কজ নাথ স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক জীবনের দুঃসময়ের নানা ঘটনার বর্ননা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জেলার একমাত্র দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমপি পঙ্কজ নাথ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি একজন মানুষ আমার ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, সেখানে আমাকে নিয়ে সমালোচনা না করে বসন্তের কোকিল হয়ে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে আজ পদপদবী দখল করে কতিপয় ব্যক্তিরা ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করে পুরো আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এমনকি ওইসব নেতারা সেইসময় (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলো আমার ভোট আমি দিতে পারিনি, তা অনেক আগেই বাক্স ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওইসময় মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিলো। চরম হতাশা প্রকাশ করে সাংসদ পঙ্কজ নাথ বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও মনোনয়ন বোর্ডের নেতৃবৃন্দদের ভুল বুঝিয়ে যারা ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুরসহ ব্যাপক লুটপাট করেছে আজ তাদেরকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়েই বসন্তের কোকিল হয়ে দলে আসা কতিপয় নেতার মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বির্তকিত ব্যক্তিদের দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। পঙ্কজ নাথ আরও বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম গত মঙ্গলবার জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে এবং মনোনয়ন পেতে তার নির্দেশেই আমি নাকি ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে চালকসহ ১১ যাত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছি। এ কারণেই নাকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রশ্ন রেখে এমপি পঙ্কজ নাথ বলেন, এ ধরনের বক্তব্য কি কোন আওয়ামীলীগের সমর্থক দিতে পারে। সেখানে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ দখল করে দলীয়ভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কিভাবে এহেন বক্তব্য দেয় তা আমার বোধগাম্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সেলিম ঢালী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তাদের ইউনিয়নের তৎকালীন বিএনপির ক্যাডার মাহে আলমের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতাকর্মী ও তাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়। তিনি আরও বলেন, সস্প্রতি সময়ে মাহে আলম আওয়ামীলীগ যোগদান করার পর পরই সদ্য সমাপ্ত চাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তাকে দলীয় প্রার্থী করা হয়। এজন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোন মতামতই গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি কোন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে প্রার্থী যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি। ফলে ক্ষোভে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন খান ৪৫ লাখ টাকা মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে জেলা মনোনয়ন বোর্ডের নেতৃবৃন্দদের ভুল বুঝিয়ে মাহে আলমকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন। সমাপনী বক্তব্যে সাংসদ পঙ্কজ নাথ বলেন, উল্লেখিত ঘটনার প্রতিবাদ করার কারণেই বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটের শরিকদল থেকে আওয়ামীলীগে এসে পদ পদবী দখল করা সাবেক এক এমপি ও তার কতিপয় সহযোগীরা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাকেসহ পুরো আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিষোধাগার করে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামীলীগের লেবাস লাগানো ওই নেতার সংবাদ সম্মেলনের মিথ্যে কল্পকাহিনীকে বিএনপি আজ রাজনীতির ইস্যু বানাচ্ছে। বিষয়গুলো তিনি জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান রহমান বিনতে সফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল আলম লিটন, মিজানুর রহমান নেহাল, প্রফেসর মনিরুজ্জামান মনির, মকিত তালুকদারসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, পৌর কাউন্সিলরসহ প্রায় সহ¯্রাধীক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×