ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপপ্রচার চালিয়ে মূল্য বেশি নেয়ার পাঁয়তারা রিং আমদানিকারকদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

অপপ্রচার চালিয়ে মূল্য বেশি নেয়ার পাঁয়তারা রিং আমদানিকারকদের

নিখিল মানখিন ॥ আমদানিকারক ১৫ প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি ধরনের রিংয়ের চূড়ান্ত দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। রকমভেদে হার্টের রিংয়ের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ১১ হাজার ও সর্বোচ্চ প্রায় দেড় লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী জীবনরক্ষাকারী উপকরণে আমদানিকারকরা ক্রয়মূল্যের সর্বোচ্চ দেড়গুণ দাম নিতে পারে। রিংয়ের দাম নির্ধারণেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু এটাকে সাময়িক মূল্য নির্ধারণ বলে অপপ্রচার চালিয়ে মূল্য বেশি নেয়ার পাঁয়তারা করছেন রিং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, নতুন মূল্যে হার্টের রিং পেতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের। মূল্য নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত আগের দামেই রিং ক্রয় করা হবে। এ অবস্থায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, রিংয়ের গুণাগুণ ও সাইজ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন মূল্য আদায় অব্যাহত থাকবে। রিংয়ের দাম নিয়ে নৈরাজ্যের জন্য হাসপাতালগুলোর ওপর দায় চাপাচ্ছেন আমদানিকারকরা। আর ভোক্তা অধিকার সংগঠন-ক্যাবের দাবি রোগীরা এতদিন প্রতারিত হয়েছেন। হাসপাতাল, আমদানিকারক কেউ দায় এড়াতে পারে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইসেস ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাজী শাহীন মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, রিংয়ের মূল্য নির্ধারণের জন্য ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা। তিনি আরও জানান, হার্টের রিংয়ের বিষয়টি মানুষের জীবন মরণের সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনও অনৈতিক ব্যবসা করতে পারি না। রংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুরোপুরি আমদানীনির্ভর। রিং আমদানি স্বল্প সময়ে শুরু হয়নি। এটা বাংলাদেশে আনার জন্য নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করতে হয়েছে। অনেক রিং মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট হয়ে যায়। ক্যাথল্যাবে রিং বসানোর আগে একটি রিংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও রোগীর জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে অতিরিক্ত রিং বসিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওই অতিরিক্ত রিংয়ের টাকা অধিকাংশ রোগীর স্বজনেরা দিতে চায় না। ক্যাথল্যাবের ভেতরে বিভিন্ন সাইজের ৩০ থেকে ৫০টি রিং প্রস্তুত রাখতে হয়, যেগুলোর নষ্ট হওয়া বা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহৃত হওয়া রিংগুলোর ঝুঁকি আমাদের বহন করতে হয়। এছাড়া রয়েছে আমদানি করার প্রসেসিং ও রিংগুলোর গুণ ঠিক রাখার জন্য বিবিধ ব্যয়। আমদানি রিংয়ের শতকরা ৭ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে শুধু বিদেশের মূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মূল্য নির্ধারণ করা হলে চলবে না। এসব কিছুর পর ব্যবসায়ীদের কিছু লাভের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর বিষয়সমূহ আমরা পর্যালোচনা করে দেখব। একটি আমদানিকারক কোম্পানি আপাতত দেশের সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ‘এমআরপি’ মূল্যে রিং সরবরাহ করবে। অর্থাৎ একটি ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে। একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একই পণ্য দেশের যে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন দামে সরবরাহ করা হবে। এর আগে একটি প্রতিষ্ঠানের একই পণ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন দামে সরবরাহ করা হতো। এই শর্তেই রিং সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানান গাজী শাহীন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, রিংয়ের নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যতালিকা অনুযায়ী শনিবার থেকে সরবরাহকারীরা রিং বিক্রি করেছেন। অনেকে মূল্য, নিবন্ধন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ মোড়কের গায়ে লিখিতভাবে দিয়েছেন। রুহুল আমিন আরও বলেন, প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল ডিভাইসের একটি তালিকা করা হবে। যেসব ডিভাইস মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সেগুলোর দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। রিং আমদানিকারকদের সংগঠন মেডিক্যাল ডিভাইসেস ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন হার্টের রিংয়ের মূল্য পুনর্নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা সব হাসপাতালে রিং সরবরাহ করেছেন। তবে হার্টের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা না করলে আমদানিকারকদের লোকসানে পড়তে হবে। বৈঠকে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করেছি। বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আফজালুর রহমান বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে মূল্যেই রিং বিক্রি হবে। হাসপাতালের সব চিকিৎসককে সরকারী নির্দেশনা অবহিত করা হয়েছে এবং সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যেই রিং বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতে একটি স্টেন্টের মূল্য ৭ হাজার ২ রুপী, যা বাংলাদেশী অর্থে ৮ হাজার ৯০০ টাকা হয়। এসব স্টেন্ট ভারতে উৎপাদন করা হয়। আর বাংলাদেশে পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশের কয়েকটি হাসপাতালে ১৮ হাজার টাকার হার্টের রিং দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু অসাধু চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যের কারণেই রোগীদের কাছ থেকে এ বাড়তি মূল্য নেয়া হচ্ছে। ফলে রিংয়ের মূল দামের চেয়ে ৮ থেকে ১৭ গুণ বেশি দিতে হচ্ছে গ্রাহককে।
×