ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নগরজুড়ে ফের সিটিং সার্ভিসের দাপট

প্রকাশিত: ০২:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৭

নগরজুড়ে ফের সিটিং সার্ভিসের দাপট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগরজুড়ে ফের সিটিং সার্ভিসের দাপট। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানী শহরে বাসের কোন সংকট নেই। আগের মতো সবকিছু স্বাভাবিক। সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দেয়ার নাটকের অবসান হয়েছে পাঁচদিনে। জয় হয়েছে আপোস আপোস খেলার। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নগরবাসীকে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি। তবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই। বাসে ভাড়ার তালিকাও টানানো হয়নি। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য ঠেকাতে ৪ এপ্রিল রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবার কথা। পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। এরপর থেকেই শহরে বাস চলাচল কমে যায়। সিটিং-লোকাল সব ধরণের বাস চলাচল কমিয়ে দেন মালিকরা। এ নিয়ে তুমুল হইচই চলে কয়েকদিন। জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে পিছু হটে সরকার। বুধবার পরিবহন মালিক-শ্রমিক সহ সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানান, আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী সব বাসের ভাড়া নিতে হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। তা না করলে সড়কে কার্যত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে। যাত্রীরা যদি চায়, তাহলে সিটিং সার্ভিসকে একটি আইনি কাঠামোয় আনার পরিকল্পনা নেয়া হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যারা অভিযানের কারণে বাস নামাননি, তাদের তালিকা করা হয়েছে। আরও কাজ চলছে। প্রথমে কারণ দর্শাতে হবে, তারপর শাস্তি দেয়া হবে। বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান বলেন, যদি মনে করা হয়, সিটিং সার্ভিস নামে বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাত্রী চাহিদা আছে; তাহলে সেটা আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে চালু করা যেতে পারে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত সিটিং সার্ভিস বন্ধে কোন অভিযান হবে না। তবে বিআরটিএ ভ্রাম্যমান আদালত চলবে। তারা অন্যান্য বিষয়ে দোষ ত্রুটি পেলে ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, রাজধানীতে বাসের রুট পারমিট অনুমোদন দেয় রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। বর্তমানে সিটিং সার্ভিসের কোন অনুমোদন নেই। তাই এ সার্ভিস বেআইনী। এমন বাস্তবতায় আজকের বৈঠকে নগরীতে সিটিং সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এ নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটিতে মালিক, শ্রমিক, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, পুলিশ, সাংবাদিক, বিআরটিএ থেকে শুরু মন্ত্রণালয়ের লোকজনও থাকবেন। এই কমিটি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সিটিং সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্টের ওপর সিটিং সার্ভিসের আইনী বৈধতা নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি। এমন ঘোষণার পর পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য আরো বাড়বে এমন ধারণা করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সরকারের পিছু হটার কারণে এই সেক্টর দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সেইসঙ্গে অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করার বিষয়টি ভালোচোখে দেখেননি অনেকেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী বাসে প্রথম ৩ কিলোমিটারের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। এক টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয় প্রতি কিলোমিটারে। মিনিবাসে পাঁচ টাকা। প্রতি কিলো নির্ধারণ করা হয় এক টাকা ৬০ পয়সা। বাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। কোন কোন সিটিং সার্ভিসে সর্বনিম্ন ১৫টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। শিকড় পরিবহনে ওঠলেই ২৫টাকা!। লাব্বাইক ট্রান্সপোর্টে ওঠলেই ১৫ টাকা। রাইদা, অনাবিল, ছালছাবিলে ওঠলেই ১০টাকা। নিউ ভিশন, আল মক্কা সহ আরো কিছু পরিবহনে একই ধারায় বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। মোহাম্মদপুর (বসিলা) ডেমরা রুটের স্বাধীন পরিবহনের বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুরগামী বলাকা ‘স্পেশালের’। বৃহস্পতিবার সকালে এই বাসে মহাখালী থেকে মগবাজার আসতে তারা ভাড়া নেয় ২০ টাকা। কেন সরকারের এবং বিআরটিএ নির্দেশ অমান্য করে আবারো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে বলাকা স্পেশালের কন্ডাক্টর জানান, আমরা কাছের যাত্রী তুলতে চাই না। তুললে সিট পূরণ দেখানোর জন্য ২০ টাকা নেই। এই নিয়মের কারণে যারা দূরে যাবে তাদের জন্য লাভ হয়। ২০ টাকা দিয়ে যাত্রী মগবাজারে নামলেও একই ভাড়ায় তিনি কমলাপুর পর্যন্ত যেতে পারবেন। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, বাসের অনুমোদনের শর্তে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। অর্থাত সিটিং সার্ভিসে লিখে বাড়তি ভাড়ায় নিয়ে যারা বাস চলাচ্ছেন তারা সবাই দুই ধরণের অপরাধ করছেন। একদিকে নিজস্ব আইনে সিটিং সার্ভিস করা অন্যদিকে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়। তারা বলছেন, ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি প্রতিটি বাসের অন্তত আটটি আসন খালি ধরে চূড়ান্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ বাস কিংবা মিনিবাসে আটটি আসন ফাঁকা থাকলেও কোম্পানীর কোন লস হবে না। যত আসন ততো যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর কথা রয়েছে। কিন্তু দেখা য়ায় একটি বাস কোম্পানীর অনুমোদনের পর পরই নানা কায়দায় বাসে আসন বাড়ানো হয়। এরপর ইচ্ছেমত যাত্রী তোলা হয়। এরমধ্যে সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা তো আছেই। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীতে কোন পরিবহন সংকট হয়নি। বাস বাস রাস্তায় ছিল। মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন বাস চালান। তাছাড়া যারা অভিযানের সময় বাস বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
×