ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডন হামলাকারীর ছিলো বহু নাম, ছিলো তিনটি জেলে

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ২৫ মার্চ ২০১৭

লন্ডন হামলাকারীর ছিলো বহু নাম, ছিলো তিনটি জেলে

অনলাইন ডেস্ক ॥ বায়ান্ন বছর বয়সী খালিদ মাসুদ বুধবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে হামলা চালিয়েছে বলে বলছে ব্রিটিশ পুলিশ। তার পরিচয় সম্পর্কে যতোটুকু জানা গেছে, তিনি বিবাহিত এবং অন্তত তিন সন্তানের জনক। মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, জন্মের পরপরই তাকে নাম দেওয়া হয়েছিলো অ্যাড্রিয়ান রাসেল অ্যাজাও। কিন্তু তার সম্পর্কে জানতে গেলে আরো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় যখন জানা যায় যে সে আরো কিছু নাম ব্যবহার করেছে। কেন্টের ডার্টফোর্ডের জন্ম নিবন্ধন অফিসে তার নাম রেকর্ড করা আছে অ্যাড্রিয়ান রাসেল এল্মস হিসেবে। ১৯৬৪ সালের ক্রিসমাসের দিনে তার জন্ম। এল্মস ছিলো তার মায়ের বিবাহ-পূর্ব নাম। কিন্তু তার জন্মের দু'বছর পর তার মায়ের অ্যাজাও নামের আরেক পুরুষের সাথে বিয়ে হয়। তখন থেকে সে দুটো নামই ব্যবহার করতে শুরু করে। পরে কোন একসময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নাম নেন মাসুদ। 'গ্রামে ছিলো একঘরে' তার মা এবং সৎ পিতা কেন্টের একটি গ্রামে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করেন। সেখানে তিনি, যখন অ্যাড্রিয়ান নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি পড়তেন ওই গ্রামেই ছেলেদের একটি স্কুলে। তারপর তারা ওয়েলসে চলে যান। ওয়েলসে পুলিশের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। মা ও সৎ পিতা কাউকেই তারা সন্দেহের তালিকায় রাখেনি। পুলিশ বলছে, তাদের খাতায় মাসুদের নাম ছিলো এবং আগে বেশ কয়েকবার ব্যক্তির ওপর হামলা করা এবং জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মতো অপরাধের জন্যে তিনি সাজাও খেটেছেন। মাসুদের প্রথম যখন সাজা হয় তখন তার বয়স ছিলো ১৮ বছর। ১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে। ২০০০ সালে তিনি যখন ইস্ট সাসেক্সে থাকতেন তখন তৎকালীন অ্যাড্রিয়ান এল্মসের দু'বছরের সাজা হয়েছিলো পাবে তর্কাতর্কির পর ‌এক ব্যক্তিকে ছুড়ি মারার কারণে। স্থানীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিলো যে তিনি ওই ব্যক্তির মুখে আঘাত করে তাকে আহত করেন। বিচারের সময় আদালতকে বলা হয় যে সে বর্ণবাদী আচরণ করতো এবং গ্রামে তাকে একঘরেও করা হয়েছিলো। ২০০৩ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান এবং তারপর তাকে আবার আদালতে যেতে হয়েছিলো। এক ব্যক্তিকে ছুরি মারার কারণে, সাথে ছুরি বহন করার কারণে তার আবারও সাজা হয়। তখন সে আবারও জেলে যায়। এবার ছ'মাসের জন্যে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে সে মোট তিনটি জেলে ছিলো। ধারণা করা হয় শেষবার জেলে থাকার সময় তিনি ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। কারণ এর আগে বিচারের সময় যখন তিনি আদালতে গিয়েছিলেন তখনও তিনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেন নি। পূর্ব লন্ডনে মাসুদ ২০১৬ সালে তিনি বসবাস করতেন পূর্ব লন্ডনে। তখন তিনি সেখানে মাসুদ নামে বসবাস করতেন। পূর্ব লন্ডনে বসবাস করলেও তার আসল ঠিকানা ছিলো বার্মিংহ্যামেই। হামলার আগে তিনি এই বার্মিংহ্যাম থেকেই গাড়িটি ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করার সময় তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন শিক্ষক হিসেবে। তবে বিবিসি নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছে যে তিন কখনোই সরকারি কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করেন নি। ধারণা করা হয়, হয়তো বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে বিদেশিদের ইংরেজি শেখানোর জন্যে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারেন। সম্ভবত লুটনে। ২০১০ এবং ২০১১ সালে তিনি লুটনে দুটো ঠিকানায় বসবাস করতেন। 'ভালো অতিথি' যে গাড়িটি দিয়ে তিনি হামলা চালান সেই গাড়িটি ভাড়া করার এক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ভাড়া নেওয়ার কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে জানিয়েছিলেন যে এই গাড়িটি তার আর দরকার নেই। এরপরে কি ঘটেছে সেটি পরিষ্কার নয়। তবে যেটা জানা গেছে সেটা হলো, হামলার আগে তিনি ব্রাইটনের একটি হোটেলে উঠেছিলেন। হোটেলের ম্যানেজার জানান যি তিনি খালিদ মাসুদ নামে সেখানে উঠেছিলেন। এবং ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থ পরিশোধ করেন। ম্যানেজার জানান, তিনি ছিলেন বেশ হাসিখুশি এবং মিশুক। খালিদ মাসুদ তাকে জানিয়েছিলেন যে কিছু বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্যে তিনি বার্মিংহ্যাম থেকে ব্রাইটনে গিয়েছিলেন। হোটেলের রিসেপশনে যিনি কাজ করেন তিনি তার সম্পর্কে সিস্টেমে লিখে রেখেছেন, 'নাইস গেস্ট' বা ভালো একজন অতিথি। পুলিশ ওই হোটেলে গিয়েও খোঁজ নিয়েছে। এবং সেখানে বিভিন্ন সামগ্রী থেকে তার ডিএনএ সংগ্রহ করেছে একই নামের ব্যক্তি কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্যে। বুধবার যেদিন তিনি হোটেল ছেড়ে চলে যান সেদিনই তিনি ওয়েস্টমিনস্টারে হামলা চালান। তবে সন্ত্রাসী কোন অপরাধের ঘটনায় মাসুদের কখনো সাজা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-ও জানিয়েছেন খালিদ মাসুদ বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতেও ছিলো না। তবে তিনি জানান যে কয়েক বছর আগে সন্ত্রাসী চরমপন্থার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে একবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো। এখনও জানা যায়নি ঠিক কোন ঘটনায় তাকে তখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো। সুত্র : বিবিসি বাংলা
×