ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তনু কায়সার

ভয় পেয়ো না জেগে আছি

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ভয় পেয়ো না জেগে আছি

তিন মাস অস্ট্রেলিয়ায়, ছোট ছেলের ওখানে থেকে অক্টোবরের শেষে বড় ছেলের কাছে কানাডার টরন্টোতে আসি। শুনে শুনেই এখানকার শীতকে ভয় পেতে শুরু করি। নবেম্বরের শেষে একদিন তার দফতর থেকে বাসায় টেলিফোন করে ছেলে বলে, আজ বরফ পড়বে। তারও অনেকক্ষণ পর্যন্ত তেমন কোন আলামত না দেখে আশ্বস্ত বোধ করি। শেষে সত্যি সত্যি বরফ পড়ে এবং পথঘাট সাদা হয়ে যায়। ওই দিনই ছিল একটু দূরের ক্রিসমাট উপলক্ষে টরন্টোতে শান্তা ক্লজ প্যারেড। আমাদের পক্ষে প্রবল শীত ও বরফের মধ্যে স্বয়ং সিটি মেয়র তাতে নেতৃত্ব দেন। আমার ছেলের পাড়ায়, তার বাসার উল্টোদিকে কানাডীয় বাসায় শুরু হয় ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা, মনে পড়ে, তারও বেশ আগে সেপ্টেম্বরে সিডনির সিটি থেকে ছোট ছেলের শহরতলীর বাসায় ফিরতে গিয়ে একটু বেশ রাতে সড়কে ক্রিসমাসের আরেক ধরনের সূচনা দেখেছিলাম। এসব তাদের কাছে একধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। ম্যাপল গাছের পাতাকে যাঁরা জাতীয় প্রতীক হিসেবে তাঁদের জাতীয় পতাকায় ঠাঁই দিয়েছে সেই কানাডার মানুষ ও নাগরিকদের কাছে প্রকৃতির বৈরিতা ও শৈত্য কোন প্রতিবন্ধকতা নয়, তা বরং তাঁদের জীবনের প্রকাশ। কিন্তু শীতকাতুরে ভেতো বাঙালী আমার কাছে তা তত আনন্দদায়ক ও উৎসাহের নয়। ফলে একদিনের বরফপাত সড়ককে সাদা করে ফেলার পর পুরো শীত পড়ার আগেই কানাডা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং শেষপর্যন্ত তা করতে সক্ষম হই। স্ত্রী বিবেচনায় ভাল ও পূর্ণ একটা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হলেও এ ডিসেম্বরে বিজয়ের পঁয়তাল্লিশতম বর্ষে দেশে থাকতে পেরে যথেষ্ঠ স্বস্তি ও আনন্দ বোধ করছি। তবু কানাডার কথা ভোলা সম্ভব নয়। টরন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকায় বাঙালীদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা- চলে। যেমন এখানে রয়েছে ‘টরন্টো ফিল্ম ফোরাম।’ এখন হয়ত তাঁরা আর এত তরুণ নন, কিন্তু উনিশ শ’ আশির দশকে ঢাকায় তাঁরা ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই তরুণ। কিন্তু এখনও যে তাঁরা তারুণ্যকে ধরে রাখতে পেরেছেন- তার একটি প্রমাণ, আগামী ১৮ ডিসেম্বর তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ; যাঁর ফুটেজ থেকে প্রামাণ্য চিত্র ‘মুক্তির গান’ তৈরি করেছেন সেই লেখার লেভিনকে তাঁদের ফিল্ম ফোরাম সম্মাননা জানাবে। ভুলে যাওয়া মোটেই উচিত হবে না, বিদেশে যে সমস্ত দেশ ও কেন্দ্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন ও সহায়তা করেছে কানাডা ছিল তাদের অন্যতম প্রধান। পঁয়তাল্লিশ বছর পরও তার নানা শহর, জনগোষ্ঠী ও প্রেরণা যেন বলছে, ভয় পেয়ো না, জেগে আছি। এ প্রসঙ্গে খায়রুল বাসার লিখেছেন- ‘মন্ট্রিয়াল নগরীর ডাউন টাউন এলাকার সেরবুক ট্রিট। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়। তারপর সেন্ট ক্যথেরিন ঘুরে ভিক্টোরিয়া পার্ক।’ সেখানে কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। ‘হয়ত বাংলাদেশে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের নিন্দা’ করেন তাঁরা। ‘খুনী সামরিক চক্রকে সাহায্য না করার আবেদন করেছিলাম কানাডা এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া এবং সহায়তা করার দাবি।’ সঙ্গে নানা কর্মসূচী প্রণীত ও পালিত হতে থাকে। শুধু মন্ট্রিয়াল কেন, প্রাদেশিক রাজধানী ক্যুইবেক সিটি এবং কানাডার রাজধানী অটোয়াতেও গিয়েছি। অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলে মিছিল নিয়ে গেলে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা টমি ডগলাস পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি পার্লামেন্টে কথা বলারও প্রতিশ্রুতি দেন। একদিন তাঁরা জানতে পারেন মন্ট্রিয়াল বন্দর থেকে পাকিস্তানে প্রেরণের জন্য অস্ত্রবোঝাই করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তাঁরা বন্দরমুখী ডেমনেস্ট্রশন করেন। ফলে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা বন্ধ করা হয়। গধহ রং ড়িৎষফ ঋধরৎ নামে মন্ট্রিয়ালে একটা মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন খোলার অনুমতি চাইলে তা না মেলায় একটা দোকান দেন ও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। এভাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ এ্যাসেসিয়েশন নানা আন্দোলন গড়ে তোলে। (প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধ : হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ/ তাজুল মোহাম্মদ সম্পাদিত। এ সম্পর্কিত অন্যান্য উদ্ধৃতিও এ বই থেকে নেয়া)। গোলাম রহমান তাঁর স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন, ‘একাত্তরে কানাডায় ছিলেন অল্পসংখ্যক বাঙালী, কিন্তু তারা যে শহরে বন্দরে ছিলেন সেখানেই গড়ে তোলেন সংগঠন। লবিং করতে থাকেন বাংলাদেশের পক্ষে। সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি চলে সমগ্র কানাডায়।’ তাঁদের আনা হয় ইমিগ্রেশন কোর্টে। গ্রেফতার করা ও পরে মুক্তি দেয়া হয়। তখনকার পত্রিকায় এসব সংবাদ ছাপা হয়। টেলিভিশনেও দেখায়। বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। মীজানুর রহমান সংবাদপত্রে প্রকাশিত বীভৎস ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন- “খালি রিক্সার পাটাতনে পড়ে আছে রিক্সাওয়ালার দেহ। সিটিজেন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই তার ভয়াবহ ছবি। শিরোনামে লেখা ছিল- গুলিবিদ্ধ হবার জন্য বাঙালিত্বই যথেষ্ট। ‘ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান’ পত্রিকার বের হলো এন্থনি মাসকারেনহাসের বিস্তারিত বিবরণ। টাইম নিউজ উইক এগুলোতে নিত্য বেরুতে লাগল পাকিস্তানী বাহিনীর পৈশাচিক তা-বলীলার রক্তান্ত কাহিনী।” স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েক দিন পর শেরব্রুকের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বিবিসির খবরের শেষে এক বিবৃতিতে দেশের হত্যাকা-ের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে কানাডিয়ানদের কাছে প্রশ্ন তোলেন, ‘কানাডার বিবেককে নাড়া দেয়ার জন্য আর কত হাজার বাঙালীকে প্রাণ দিতে হবে?’ এরপর অটোয়াতে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের নাম হয় ‘বাংলাদেশ-কানাডা এ্যাসোসিয়েশন।’ এর কর্মকা-কে চার ভাগে বিভক্ত করা হয় : ১. মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাহায্য পাঠান, ২. বাস্তুহারা দুর্গতদের জন্য টাকা পাঠান, ৩. কানাডা-আমেরিকাতে বাংলাদেশের পক্ষে জনতম সৃষ্টি এবং, ৪. রাজনৈতিক স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লবিং করা ও স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন চালানো। এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবার জন্য চাকরিজীবীরা তাঁদের পাঁচ শতাংশ আয় দিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করেন। যাঁদের নিয়মিত রোজগার ছিল না তাঁরাও এ তহবিলে যথাসাধ্য অর্থ জমা দিতেন। এভাবে কানাডার ছোট-বড় শহরে বাঙালিরা তহবিল গঠনের জন্য এগিয়ে আসেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো তখন ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর কোন সমর্থন ছিল না। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী যে পূর্ববাংলা ও তার জনসাধারণকে উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করছিল সে বিষয়ে তার পরিষ্কার ধারণা ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কানাডার ক্ষমতাসীন কতৃত্বের একটা সমর্থন ও সহানুভূতি ছিল। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে জনমত সৃষ্টিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। ‘অটোয়াতে যখন বড়সড় একটা র‌্যালি’ হয় তখন তাতে ‘টরন্টো, হ্যামিল্টন, কিংস্টন ও মন্ট্রিয়াল’ থেকে অনেক বাঙালী এসে যোগ দেয়। ‘পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে গিয়ে আমরা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছিলাম। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলাম। কারণ এই দুটি দেশ তখনও পাকিস্তানের সমর্থক।’ অগাস্টার ‘জার্নাল’ ও ‘সিটিজেন’ ‘টরন্টোর’ ‘গ্লোব এ্যান্ড মেইল’ এবং মন্ট্রিয়লের গেজেট ও স্টার প্রায় প্রতিদিনই হানাদার বাহিনীর কীর্তিকা- ও বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করত। বাংলাদেশের পক্ষে র‌্যালি করার সময় প্রবাসী বাঙালীরা যে চিৎকার করতেন তাতে কানাডার মানুষ বিরক্ত বোধ করেনি। বরং শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানরা উৎসুক হয়ে জানতে চেয়েছে, তারা কী বলতে চায় এবং জেনে কেউ কেউ তাদের র‌্যালিতে এসে অংশ নিয়েছে। পুলিশেরা করেছে মার্জিত ব্যবহার। জনমত সৃষ্টির এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রেহমান সোবহান কানাডায় এসে পৌঁছেছিলেন। এসোসিয়েশন চেয়েছিল, সাংবাদিক সম্মেলনে যেন তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বক্তব্য রাখতে দেয়া হয়। তাঁরা আরও চেয়েছিলেন বিবিসি যেন তাঁর সাক্ষাতকার প্রচার করে। উল্লেখ্য, এর বিপরীতে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে হামিদুল হক চৌধুরীও কানাডায় আসেন। কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষে তাঁর প্রচারণা ভ-ুল হয় এবং তিনি অপদস্ত হন। বাংলাদেশের দূত হিসেবে ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধের সময় রেহমান সোবহান যে ভূমিকা পালন করেন তার বিবরণ তাঁর নিজের বই ‘Untraquil Recollcetions: the years of Fulfilment’ এ-ই রয়েছে। এর বারো অধ্যায় থেকে বইয়ের শেষ পর্যন্ত অধ্যায়গুলোর নাম উল্লেখ করলেই তার পরিচয় পাওয়া এবং এর চারিত্র্য স্পষ্ট হবে: From Political Economy to Politician Economist Engagement with National Struggle Fulfilment: Witness to the Birth of a Nation; Fulfilment: From Politician Economist to Political Combatant in the Liberation War; Fulfilment: Envoy Extra ordinaires; Fulfilment: the libaration of Bangladesh. তাঁর এই দৌত্যে তিনি নিক্সন প্রশাসন, বিষেশত হেনরী কিচিঞ্জার প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়াস চালিয়েছিলেন। প্যারিস কনসোর্টিয়ামে গিয়েছিলেন। তখনকার বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় এসব কর্ম যথেষ্ট সফল না হলেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলও বলা যায় না। স্বয়ং রেহমান সোবহানের The Paris Consortium উপ-অধ্যায়ের এই বর্ণনা থেকে তা বোঝা যাবে The campaign to Persuade donors to cut off aid to Pakistan must be viewed as a moderate gain for Bangladesh....... none of the members of the consortium actually pledged aû nwe aid to Pakistan. তবে তাঁর ও বাংলাদেশের সাফল্যের একটি বড় পরিচয় পাওয়া যায় রেহমান সোবহানের বইয়ের উপ-পধ্যায় ঊহপড়ঁহঃবৎ রিঃয ধ এরধহঃ –এ এখানে তিনি কনসের্টিয়ামের চূড়ান্ত বৈঠকের পর ফরাসী লেখক নোবেল লরিয়েট আন্দ্রে মালরোর সঙ্গে তার সাক্ষাতকারের বর্ণনা দেন। তখন মালরো সত্তরোর্ধ এবং তিনি অসুস্থ। ড্যানিয়েল বার্ণার তাঁকে মালরোর কাছে নিয়ে যান। স্পানিস গৃহযুদ্ধের সময় পাইলট হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে তাঁর ভূমিকা পালন করেন। বয়স ও স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধক না হলে বাংলাদেশের মুক্তির এই যুদ্ধে তিনি অংশ নিতেন বলে জানান। ফরাসী দৈনিক প্যারিস ম্যাচে’র ১৩ নবেম্বর সংখ্যায় মারলোর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতকারের খবর প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেন বিস্ফোরক ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে একটি দল অংশ নেয় তার ব্যবস্থা তিনি করবেন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকরা যেন বাংলাদেশের জনগণের ওপর অত্যাচার করবার জন্য ফরাসী দেশ কোন অস্ত্র না পায় তাও তিনি দেখবেন। দুই. আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নিকটতম রাজ্য ত্রিপুরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহু আগে থেকে সেখানে পূর্ব বাংলা থেকে চলে যাওয়া বহু মানুষ বসবাস করছিলেন। নিকটতম প্রতিবেশী রাজ্য হওয়ার কারণ ও সূত্রে সেখানকার অধিবাসীরা বাংলাদেশের সার্বিক ও দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে ছিলেন যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ত্রিপুরার তখনকার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ ছিলেন বাংলাদেশেরই সন্তান। ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন ও বিষয়সমূহকে তত গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সমর্থন ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করাকেই তাঁরা প্রথম মূল কর্তব্য বিবেচনা করেন। এ বিষয়ে ‘চেতনায় জেগে আছো বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেখায় সত্যব্রত চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিগত শতকের এমন কিছু অবিস্মরণীয় ঘটনাপরম্পরার পরিণাম যার সঙ্গে যে কোনোভাবে যুক্ত হতে পারা আমাদের জীবনে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা, তিনি উল্লেখ করেছেন। ছিন্ন শৈশবে ভারত যখন বিভক্ত হয় তখন তার মর্মগ্রহণ ছিল তাঁর অসাধ্য। শুধু শুনেছিলেন তাঁদের ‘বাড়ি, পুকুর, মাউ, গ্রাম সবই পাকিস্তান হয়ে গেছে।’ কিন্তু একাত্তরে তিনি উপলব্ধি করেন,‘জনগণের মুক্তিযুদ্ধ ইতিপূর্বে আর কোন সময়েই এমনভাবে গ্রামগঞ্জ- শহরে প্রতিদিন ও প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশে। আর এ হিসেবেই ১৯৪৭-এর দেশভাগের আগের অভিজ্ঞতার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অঙ্গিকারে সমুজ্জ্বল ৭১-এর বাংলাদেশ।’ বাস্তব অবস্থার বর্ণনা দিয়ে সত্যব্রত চক্রবর্তী আরও লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে শরণার্থী হয়ে যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বড় অংশ সে দেশের সংখ্যাগুরু অংশের নির্যাতিত, বিপন্ন মানুষ, গ্রামগঞ্জ থেকে বিতাড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ আদিবাসী নির্বিশেষে সকল অংশের গরিব, মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ, তেমনি বিত্তবান, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী, ছাত্র, শিক্ষাব্রতী, লেখক-কবি, বুদ্ধিজীবী প্রশাসক, চিকিৎসক, কর্মচারী, শিল্পী, কামার-কুমোর ভাগচাষী-সকল অংশের মানুষ।’ ফলে স্থানীয় সংবাদপত্রে নিজ নিজ লেখকগোষ্ঠী ছাড়াও একইসঙ্গে রাজ্যের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা যেমন তেমনি পূর্ব বাংলা থেকে আগত বিভিন্ন মানুষ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, এবং নানা রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা নিজেদের প্রকৃত ও ছদ্মনামে মুক্তিসংগ্রামে তাঁদের ও দেশের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে নানা ধরনের লেখা লিখেছেন এবং জনমতের এক বিপুল প্রবাহ সৃষ্টি করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রবল চাপ আগরতলা ও ত্রিপুরা রাজ্যের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। রবীন সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘ত্রিপুরার এমন বাড়িঘর খুবই কম ছিল যেখানে বাংলাদেশের কোন না কোন অঞ্চলের শরণার্থী পরিবার এসে ঠাঁই নেননি। ফলে ছোট এই রাজ্যের পক্ষে অর্থনীতি ও অন্যান্য চাপ বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আত্মীয়তা ও মর্মের নিবিড় বন্ধন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে এমনভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিল যে তার বিচ্যুতিই বরং তাদের কাছে অধিকরত ক্ষতির ও দুঃখের কারণ বলে মনে হয়েছিল। দুঃসময়ের প্রয়োজনের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু- একথা আগরতলা ও ত্রিপুরার বন্ধুরা ১৯৭১-এ প্রমাণ করেছিলেন। সেদিন কোন আশঙ্কায় ভীত না হয়ে ও পিছিয়ে না গিয়ে তাঁরা যেমন চেতনায় জেগে ছিলেন তেমনি প্রতিবেশী বন্ধুদেরও তাতে জেগে ও অনির্বাণ থাকতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সত্যের অন্যদিকে রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের প্রবল শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার তৎকালীন শাসকরা এখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সে সময়, ১৯৭১-এ শিল্পী ও সংবেদনশীল মানুষ ও জনগণ বাংলাদেশের সপক্ষে এগিয়ে আসেন। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ উচ্চারিত ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ শুধু জর্জ হ্যারিসন ও তাঁর সহশিল্পীদের কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়নি। বিশ্বের সর্বত্র সেই আহ্বান ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিয়েতনাম বিষয়ে মার্কিন শাসকদের আগ্রাসী ভূমিকা শেষ না হতেই বিশ্বের সামনে এসে দাঁড়ায় বাংলাদেশ এবং তার সঙ্কট ও মূল্যবোধের বাস্তবতা। অতএব নিক্সন প্রশাসন ও তার প্রধান চাঁই হেনরি কিসিঞ্জার যে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এলেন গিনসবার্গ যখন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ লিখে বিশ্ব মানবতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তখন আরেকদিকে হৃদয়ের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হন জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর প্রমুখ। রবিশঙ্কর ছিলেন গুরু, হ্যারিসনের শিষ্য। কিন্তু একাত্তর তাঁদের বন্ধু করে তোলে। এল একদিন বন্ধ আমার চোখ ভরা তার ধু-ধু হাহাকার বলে গেল চাই শুধু সহায়তা দেশ তার ধুঁকে ধুঁকে মরে রবিশঙ্কর ভেবেছিলেন, অন্তত কয়েক হাজার ডলার যেন সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু হ্যারিসনের বন্ধুরা পরিকল্পনা করলেন, কেন মিলিয়ন ডলার নয়? এভাবে নিউইয়র্ক ম্যাডিসিন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজিত হয় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশের দুর্গত মানুষদের সাহায্য করবার জন্য অর্থ ও তহবিল সংগ্রহ করাই শুধু এর উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য এও ছিল, যেন বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়া যায়, যেন গণহত্যার প্রতিবাদ করা যায়, যেন বাংলাদেশকে সারা পৃথিবীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া ও তাকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। হয়ত শিল্পী ও আয়োজকদের মনে এই আকাক্সক্ষাও ছিল, যে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগুলো মানবতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সেখানকার ও পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের জানিয়ে দেয়া হোক, বাংলাদেশ মানবতার পক্ষে এমন এক অবিনাশী চেতনার নাম, যার ধ্বংস অথবা মৃত্যু নেই। ফলে ১৯৭১-এর ১ আগস্ট যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে তা পঁয়তাল্লিশ বছর পরে আজও ভবিষতের বিজয়বার্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী ঘোষণা করে চলেছে। রবিশঙ্কর উদয়শঙ্করের অনুজ এই ব্যালে ট্রুপে ছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ- পূর্ববঙ্গের মানুষ, সারা ভারতে তিনি ‘বাবা আলাউদ্দিন’ নামে খ্যাত। রবিশঙ্কর বলেছেন, কনসার্ট করার সময় তাঁর মনে হয়েছিল ভারতীয়ত্বের চেয়ে তাঁর বাঙালী পরিচয়টা বড়। আমাদেরও মনে হয়, ভৌগলিক যে অংশ পাকিস্তানকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রসত্তায় তার প্রতিষ্ঠা করেছে তার ন্যূনতম ও ক্ষীণতম অনুভব কোন বাঙালী ও বাংলাভাষী মানুষ ১৯৭১-এ অনুভব না করে পারেনি। ভিনদেশী হয়েও ‘ও গব গরহব’-এ কনসার্টের যে বিবরণ জর্জ হ্যারিসন দিয়েছেন মানুষ হিসেবেও তা এক অবিস্মরণীয় দলিল। আমরা বাঙালী, নানা জাতিসত্তায় আমরা এক ও অনন্য এবং আমরা মানুষ- সম্মিলিত এই পত্যয়ে সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রোথিত। মর্মের এই উচ্চারণ বিশ্বের মানুষের সঙ্গে আজ আমাদেরও এক ও অভিন্ন করেছে। তিন. সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন ফাদার দ্যতিয়েন ও আলোক সরকার। ২০১৫-এর একুশের বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফাদার দ্যতিয়েন বাংলায় দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই যেমন বলেছেন অবাঙালীদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলা ভাষায় তিনি ও আবু সয়ীদ আইয়ুবই আছেন (ছিলেন)। আবু সয়ীদ আইয়ুব ছিলেন মূলত উর্দুভাষী আর ফাদার দ্যতিয়েন ছিলেন বেলজিয়ামের। এই দুই ভিন্নভাষী ভালবেসে বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে তাঁকে তাঁর ভাষায় পড়া উচিত- এই উপলব্ধি থেকে আইয়ুব বাংলা শিখেছিলেন- এতটাই শিখেছিলেন যে, তাঁর রবীন্দ্রব্যাখ্যায় বোঝা অসম্ভভ ছিল যে, তার মাতৃভাষা বাংলা নয়। রবীন্দ্রনাথকে আপন করে তিনি আমাদেরও বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন। এটা হয়ত ইতিহাসেরই ইচ্ছা ও পরিণতি যে, ১৯৭১-এ শামসুর রাহমান তাঁর গ্রাম পাড়াতলীতে বসে যে কবিতাগুলি লিখেছিলেন সেগুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হাত দিয়ে কলকাতায় আবু সয়ীদ আইয়ুবের হাতে পৌঁছেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তিনি নানা জায়গায় সেগুলি প্রকাশ করেছিলেন। এভাবে ভিন্ন রাষ্ট্রে কিন্তু বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে এই বার্তা পৌঁছেছিল যে, সহসাই তাদের খুব কাছে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হতে চলেছে। নিজের ভাষা উর্দু হলেও এভাবে ইতিহাসের ইঙ্গিত ও প্রেরণায় আমাদের সঙ্গে আবু সয়ীদ আইয়ুবের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অসংখ্য পাঠক পড়েছে ‘বন্দী শিবির থেকে’র ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ অথবা ‘স্বাধীনতা তুমি’। ‘তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,/সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো/সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।’ অথবা স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগের মধ্য দিয়ে ফাদার দ্যতিয়েনও আমাদের নিকটজন হয়ে উঠেছিলেন। সে কারণে বেলজিয়াম ও কলকাতায় তাঁর দুটি অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বেলজিয়ামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত একজন কর্মীকে নিজের লেখা দেখতে গিয়ে তাঁর যে প্রতিক্রিয়া হয় তা হচ্ছে : ‘ভদ্রলোকের বাংলা জ্ঞানের ঘাটতি আমার চেয়েও বেশি।’ আর কলকাতায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা এক বাংলাভাষী কথা বলতে শুরু করেন ইংরেজীতে। এতে ফাদারের প্রতিক্রিয়া, ‘ইনি কি ইংরেজ? বাংলা বোধ হয় জানেন না।’ ফাদারের এই বাংলাচর্চা তাই এক ধরনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধও বটে। সেই ১৯৬৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তার লেখা পড়ছি। মৃত্যুর পরেও তাঁর শেষ লেখাটি পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তিনি আমাদের শেকড়, মৃত্তিকা ও নিজেদেরই চিনতে সাহায্য করেছেন। এখনও যখন তাঁর লেখা পড়ি ভুলে যাই, তিনি নেই। উল্টো কানে ভাসে ও বেজে ওঠে ২০১৫-এ একুশের বইমেলায় তাঁর উচ্চারিত কণ্ঠস্বর। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি এই ভালবাসাকে ভোলা যায় না। আলোক সরকার তাঁর কবিতায় যেমন বলেন ‘প্রতিটি শব্দই যত্ন চায়’ কিংবা তিনি জানেন ছন্দহীনতাও এক ধরনের ছন্দ এবং তাও অর্জন করতে হয়, তা আসলে নিভৃত কবির সামাজিক উচ্চারণ। ভাষা বিষয়ে আমাদের নানা অবহেলা ঔদাসীন্য ও হীনমন্যতা থেকে যে ত্রুটি ও বিচ্ছিন্নতা ঘটে তার শুশ্রƒষা করতে এবং অন্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পারি এই কবির দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে শুধু ভাষাচর্চা নয়, এর বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অর্জনও আমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ আমরাই তো এই অখ- উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি। আজ আমরা সারাবিশ্বের অর্জন ও দৃষ্টিকোণের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ১৯৭১-এ যেমন আত্মপরিচয় ও মনুষ্যত্বের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলাম এখনও তেমনি আমাদের অবস্থানের মৌলিক কোন পরিবর্তন হয়নি। চার্লস ডিকেন্স তাঁর উপন্যাস ‘এ টেল অব টু সিটিজ’-এর শুরুতেই বলছেন, ইট ওয়াজ দ্য বেস্ট অব টাইম, ইট ওয়াজ দ্য ওয়ার্স্ট অব টাইম, ইট ওয়াজ দ্য স্প্রিং অব হোপ, ইট ওয়াজ দ্য উইন্টার অব ডিসপেয়ার। কিন্তু সময়ের সবচেয়ে ভাল ও মন্দ এবং আশার বসতি ও শীতের হতাশার সামনে দাঁড়িয়ে ১৯৭১-এ-ও আমাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল এর ইতিবাচক, এর অর্জনের দিক। শেলীর ভাষায় আমরাও জানতাম, ইফ উইন্টার কামস, ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড? শীত এলে বসন্ত আর বেশি দূরে থাকতে পারে না। আমরা বিজয় অর্জন করেছি ১৬ ডিসেম্বর। এটি তার পঁয়তাল্লিশতম অর্জন। শীতের এই কাল হতাশার নয়, কারণ তা বসন্তের বার্তাবাহী। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের নানা বৈরিতা, শঠতা ও অন্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে কিন্তু সেটাই শেষ কথা ছিল না। রণক্ষেত্রে ও সম্মুখযুদ্ধে আমরা যেমন শত্রুকে পরাজিত করেছি এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছি তেমনি ভুল চিন্তা ও দর্শনের বিরুদ্ধেও আমাদের নিরন্তর লড়াই করতে হয়েছে। হতাশা যেমন ইতিহাস ও যুদ্ধের শেষ কথা নয়, তেমনি ভয় পাওয়াও তারুণ্যের কোন যুক্তি হতে পারে না। জেগে থেকে ও সতর্ক হয়েই বুদ্ধি ও চিন্তাকে স্বচ্ছ রাখা যায়। স্বচ্ছতার সেই অস্ত্র কখনও তরুণমনে মরচে পড়তে, তাকে পরাজিত হতে ও ভুল পথে যেতে দিতে পারে না।
×