ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ধরা পড়েনি ঘরোয়ার মালিক সোহেল, অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ নভেম্বর ২০১৫

ধরা পড়েনি ঘরোয়ার মালিক সোহেল, অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি

শংকর কুমার দে ॥ মদ্যপ বেপরোয়া জীবনে অভ্যস্ত ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। ঘরোয়া হোটেলকর্মী রিয়াদকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে নিজ হাতে খুন করার চারদিন পরও পাষ- সোহেলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার করতে পারেনি খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটিও। তাকে ধরার জন্য বিমানবন্দর, সীমান্তপথে তার ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য বার্তা পাঠিয়েছে পুলিশ। রিয়াদ খুনের মামলার তিন আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত জসীমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘরোয়া হোটেলকর্মী রিয়াদ খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হোটেল ম্যানেজারসহ পাঁচ জন খুনের বর্ণনা করেছেন ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে। যেভাবে রিয়াদকে খুন করা হয়েছে তার বর্ণনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আদালতে দেয়া সাক্ষ্যের বর্ণনায় এ ধরনের ভয়াবহ নির্মম নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, পলাতক ঘরোয়া হোটেল মালিক সোহেল মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তিনি লুকিয়ে আছেন। তবে তিনি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে তার জন্য বিমানবন্দর ও সীমান্তে চিঠি দেয়া হয়েছে। নিহত রিয়াদের বড় ভাই মোঃ রিপন হোসেন বলেন, শুনেছি ঘরোয়া হোটেল মালিক সোহেল বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে চলাফেরা করত। অনেক সময় হোটেলে এসে পুলিশ খাওয়া-দাওয়া ও টাকা-পয়সা নিয়ে যেত। এসব কারণে পুলিশ হয়ত তাকে ইচ্ছে করে ধরছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য সোহেলকে গ্রেফতার করে হাজির করা। আমাদের আন্তরিকতার কোন কমতি নেই। আসামি আসলে একটা গ-ির মধ্যে নেই। দেশের কোন জায়গায় বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন সেটা চিহ্নিত করতে পারিনি। কারণ আগে যেসব মোবাইল সোহেল ব্যবহার করতেন এখন সেগুলো ব্যবহার করছেন না। তদন্তকারী পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘরোয়া হোটেল মালিক সোহেলের শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়ি, বাসা ও ব্যবসায়িক ঠিকানা সংলগ্ন থানাগুলোতে যোগাযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, আমরা জানতে তার শটগানটি লাইসেন্স নেয়া রয়েছে। কারণ ওই শটগানটির তার বাবার ছিল। তবে তার ছোট অস্ত্র রয়েছে বলে এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে রিয়াদ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্রটি অবৈধ। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল ॥ ‘ঘরোয়া হোটেল’ কর্মচারী হত্যাকা-ের ঘটনায় দেশের রেস্তরাঁ ব্যবসায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। হোটেল-রেস্তরাঁর মেসিয়ার, ওয়ার্ডবয় ও ম্যানেজার থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্ন কর্মী সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অস্বস্তি। ঘরোয়ার মালিক সোহেলের শাস্তি চেয়ে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হোটেল-রেস্তরাঁর কর্মচারীরা। শুধু তাই নয়, ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি। আগামীকাল সোমবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। একই সঙ্গে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের সঙ্গে দুুর্ব্যবহার, অসদাচরণ এবং যে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আইন হাতে তুলে না নেয়ার জন্য দেশের সকল রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টটির প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম খানের মৃত্যুর পর মালিক সমিতির সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক রাখা হয়নি। রেস্তরাঁ ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে মালিক সমিতির যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে তা অনুসরণ করেনি ঘরোয়া কর্তৃপক্ষ। এ কারণেও হোটেলটির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। মাত্র দেড় হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে দিনভর পেটানোর পর মধ্যরাতে গুলি করে কর্মচারী রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদকে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। হোটেল-রেস্তরাঁর মালিকদের সম্পর্কে ভোক্তাদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। এতে এ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগঠনটির মহাসচিব এম রেজাউল করিম সরকার রবিন জনকণ্ঠকে বলেন, ঘরোয়া হত্যাকা-ের ঘটনায় হোটেল ব্যবসার দীর্ঘদিনের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সম্পূর্ণ সেবামূলক এ ব্যবসাটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এমন সময় ঘরোয়ার মালিক শিশু শ্রমিক রিয়াদকে হত্যা করল, যখন দেশে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাই আমরাও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। শুধু তাই নয় হোটেল-রেস্তরাঁ মালিকরা যাতে কোন কর্মচারীর প্রতি দুর্ব্যবহার, অসদাচরণ এবং যে কোন ঘটনার জন্য আইন হাতে তুলে না নেন সেজন্য সংগঠনটির সকল সদস্যকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। সোমবার পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভা শেষে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হবে। জানা গেছে, ঘরোয়ার মালিক সোহেল পৈতৃক সূত্রে ব্যবসাটি পেয়েছেন। তার পিতা নজরুল ইসলাম খান মালিক সমিতির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। রেস্তরাঁ ব্যবসা পরিচালনা করতে যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে তা তিনি পালন করেছেন। পিতা মৃত্যুর ব্যবসাটি পরিচালনার দায়িত্ব পান তার সন্তান সোহেল। তবে সোহেল দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রক্ষা করা হয়নি। এমনকি সংগঠনটির বার্ষিক চাঁদাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ছিল সোহেলের। কিন্তু কর্মচারী হত্যাকা-ের ঘটনায় সারাদেশে হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসায়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
×