ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা

ড. মিল্টন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ০০:১০, ২২ মার্চ ২০২৪

স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

২০২১ সালে তাঁর মহাপ্রয়াণের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন। এত মানুষের শোক প্রকাশে 
স্পষ্ট যে, তিনি ছিলেন একাত্তরের চেতনার জাগ্রত সন্তান এবং উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব

১৯৯৩ সাল। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। সে সময় দৈনিক সংবাদপত্র পাঠ ছিল একটি রুটিন ওয়ার্ক। জগন্নাথ হলের রিডিং রুমে ‘ইত্তেফাক’ কিংবা ‘সংবাদ’ নিয়মিত পাঠ করার সুযোগ হয়। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে এই পত্রিকাগুলোর সাহিত্য পাতা আকর্ষণের বিষয় ছিল। চলছিল খালেদা জিয়ার শাসনামল। ইতিহাস বিকৃতির  জোয়ারে ভাসিয়ে  দেওয়া হয়েছিল দেশকে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছিল।

মুক্তিযুক্তের চেতনা ও মুক্তচিন্তার আঙিনায় ধর্মীয় মৌলবাদীরা জায়গা জুড়ে বসেছিল। সামাজিক জীবনে নতুন নতুন অস্থিরতার সূচনা হয়েছিল মাদকের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটে। তরুণ প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর থেকে ভোগবিলাসে লিপ্ত করার নানা প্রচার শুরু হয়। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ওপর আস্থা দৃঢ় করার সকল অবৈধ কার্যসূচি বাস্তবায়ন করার  পেছনে অর্থ ঢালা হচ্ছিল। সাংস্কৃতিক জীবনে মানসম্পন্ন শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ রুদ্ধ হয়েছিল। এমন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দৈনিক জনকণ্ঠ আত্মপ্রকাশ করে। জয় করে নেয় কোটি বাঙালি পাঠকের হৃদয়। 

পত্রিকাটি প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ এবং প্রচার করে চলেছে। পাশাপাশি পত্রিকাটি সব সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে সরব অবস্থানে রয়েছে। তার অন্যতম প্রকাশনা হচ্ছে ‘সেই রাজাকার’। এই বইটি দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথম থেকেই দেখা গেছে দৈনিক জনকণ্ঠের একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এককথায় স্বীকার করবেন যে, ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময় দৈনিক জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকা ছিল। আর পাঠককে সচেতন রাখার প্রয়াসটি প্রকৃতপক্ষে অগ্রগামী বাংলাদেশের জন্য জরুরি ছিল। এজন্য ছাত্র জীবন থেকেই জনকণ্ঠের পাতায় প্রকাশিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলামগুলো পাঠ করে সমৃদ্ধ হয়ে উঠি। ইতিহাসকে জানা, বাংলাদেশকে চেনা জনকণ্ঠ পাঠের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল বলে আজ এই পত্রিকার পাতায় নিজের লেখা প্রকাশিত হলে আলোড়িত হই। এজন্য কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায় মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে স্মরণ করে। 
জনকণ্ঠের মধ্য দিয়েই আমরা মোনাজাতউদ্দিনের (১৯৪৫-১৯৯৫) মতো বিখ্যাত চারণ সাংবাদিক ও লেখকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এর পর তিনি তার প্রতিবেদনের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনকে শহরবাসীর কাছে তুলে ধরার মহৎ কাজটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের চিত্র নিবিড়ভাবে লেখনিতে তুলে ধরেছেন।

১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর নদীতে ফেরি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর সংবাদটি পাঠকদের শোকে স্তব্ধ করে দেয়। জনকণ্ঠ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি উদ্ধৃতি স্মরণীয়, ‘মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরের অকুতোভয়  গেরিলা যোদ্ধা  মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ মূলত তিনটি নীতির ভিত্তিতে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। প্রথমটি, তিরিশ লাখ শহীদের আত্মাহুতির মহাকাব্য মহান মুক্তিযুদ্ধকে সমুজ্জ্বল রাখা এবং দ্বিতীয়টি, মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং তৃতীয়টি দেশের তৃণমূল মানুষের কাছে দিনের পত্রিকা দিনেই পৌঁছে দেওয়া।’
আসলে ২২ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মৃত্যুবার্ষিকী নয় কেবল বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসঞ্চারী ও উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পত্রিকার সম্পাদককে হারানোর যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়, তখনই আমরা জেনেছিলাম বহুমাত্রিক প্রতিভার অনন্য দিশারির অবদানসমূহ।

২০২১ সালে তাঁর মহাপ্রয়াণের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন। এত মানুষের শোক প্রকাশে স্পষ্ট যে, তিনি ছিলেন একাত্তরের চেতনার জাগ্রত সন্তান এবং উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

শোক বার্তায় রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেছিলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মৃত্যুতে জাতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির বাতিঘরকে হারাল। সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ দিয়েছেন নতুন মাত্রা। তাঁর মৃত্যুতে দেশ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে হারাল। তিনি নতুন প্রজন্মের সংগঠক ও উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’

দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশক এবং গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্মরণীয় একটি নাম। তিনি ১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার মেদিনী মণ্ডল গ্রামে সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অত্যন্ত সাহসী আতিকউল্লাহ খান মাসুদ যুব বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ২নং সেক্টরের অধীনে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা কমান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেন এবং অনেক বড় বড় অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ১৯৭২ সালে সফলভাবে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে শুরু করেন কর্মজীবন। তৎকালীন সফল তরুণ শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। 
জন্মলগ্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সপক্ষে এবং নীতির প্রশ্নে আপোসহীন দৈনিক জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকার কারণে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ওয়ান ইলেভেনের শুরুতেই অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে জনকণ্ঠ ভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিরুদ্ধে ৪২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪৫ কোটি টাকা জরিমানা এবং ৪৮ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে। দীর্ঘ ২২ মাস ১২ দিন কারান্তরীণ রাখে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। আতিকউল্লাহ খান মাসুদ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪-৮৬ সালে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৯৮৫-৮৬ সালে গরিব ও অনাথ শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
স্বাধীনতার পরে আশির দশক অবধি দেশের ইত্তেফাক, সংবাদ প্রভৃতি পত্রিকার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ৪, ৬ ও ৮; বিশেষ সংখ্যার জন্য ১২। তখন সংবাদপত্রের মুদ্রণ হতো প্রাচীন রীতি-পদ্ধতিতে। নব্বইয়ের দশকের শেষদিক থেকে কম্পিউটার কম্পোজের আগমন সংবাদপত্রের মুদ্রণে রীতিমতো বিপ্লব নিয়ে আসে। তখন দেশের কোনো কোনো সংবাদপত্র প্রথমবারের মতো নিয়মিত ১২ পৃষ্ঠা করে বের হতে থাকে। জনকণ্ঠ এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

জনকণ্ঠ প্রথম থেকেই ছিল ব্যতিক্রম, বৈচিত্র্যময়। প্রথম থেকে প্রকাশের দিনেই গ্রাম-প্রান্তরের মানুষের হাতে পৌঁছায়। দ্রুত পাঠকপ্রিয়তার কারণে ১৯৯৪ সালেই দৈনিক জনকণ্ঠ প্রচার সংখ্যায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে। জনকণ্ঠের টিম সাজানো হয়েছিল তরুণ-প্রবীণের সংমিশ্রণে। সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের সঙ্গে নিয়েছিলেন একঝাঁক মেধাবী সংবাদকর্মী। 
বহুমাত্রিক প্রতিভা দিয়ে ঢেলে সাজানো হয়েছিল পত্রিকাটি। আতিকউল্লাহ খান মাসুদের চিন্তা ও চেতনাকে তারা বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে পত্রিকা প্রকাশের এক বছরের মধ্যেই দৈনিক জনকণ্ঠ দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় পরিণত হয়। প্রগতিশীল সম্পাদকীয় নীতিমালার মিশেলে সংবাদ পরিবেশনে দেশে এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করে দৈনিক জনকণ্ঠ। সৃষ্টি করে এক নবজাগরণ, যা সংবাদপত্র জগতে ইতিহাস হয়ে থাকবে। জনকণ্ঠই সর্বপ্রথম গ্রাম-গঞ্জে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্যাডারদের দ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশ করে।

ফলে হয়রানিমূলকভাবে জনকণ্ঠ পত্রিকা ভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় সরকারি সকল প্রকার বিজ্ঞাপন। ২০০২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রিপোর্টার্স সান ফ্রন্টিয়ার্স বিএনপি সন্ত্রাসীদের কুকর্মকাণ্ডের সত্য কথা প্রকাশ করায় দৈনিক জনকণ্ঠের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, বিদু্যূৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ সম্পাদকের ওপর হয়রানিমূলক মামলা সম্পর্কে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল রবার্ট ম্যাক নর্ড এই বিবৃতিতে বলেন ‘জনকণ্ঠ সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রেকর্ড অনুসারে পত্রিকাটির কমপক্ষে ৮ সাংবাদিক শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন। ১২ জনকে হুমকির শিকার হতে হয়েছে। বিদেশের দূতাবাসসমূহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনকণ্ঠ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
২০০২ সালের ২৮ জুলাই বিশিষ্ট কবি লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক জনকণ্ঠে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছিলেন- ‘জনকণ্ঠ বন্ধ হলে স্বাধীনতার চেতনা নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।’ ওয়াশিংটন প্রবাসী বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এত বলা হয়, ‘জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ১৩২ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সরকারি দল মামলা করার যে হুমকি দিয়েছে, তা শুধু সংবাদপত্রের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপই নয়, নজিরবিহীন। অথচ দেশের কোথায় কি ঘটছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দায়িত্ব সংবাদপত্রের।’
২০০২ সালের ২৭ জুলাই লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায়  লেখেন, ‘দুই ডিআইজি, তিন এসপির বদলির দাম উঠেছে প্রায় দুই কোটি’ টাকা শিরোনামে যে রিপোর্টকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দণ্ডবিধির ১৩১ ও ১৩২ ধারায় পত্রিকাটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার হুমকি দিয়েছে, তা একটি আকস্মিক ব্যাপার নয়, পূর্ব পরিকল্পনার চক্রান্ত।

এর আগে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই পত্রিকাটির বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। তারপর জনকণ্ঠ অফিসের বিদ্যুতের বিল বকেয়া না পড়া সত্ত্বেও অন্যায় অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের নানাভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি তো চলছেই। সন্দেহ নেই জনকণ্ঠ দেশের মানুষের অভাব-অভিযোগ, তাদের অত্যাচারিত, নিপীড়িত হওয়ার কাহিনী সাহসের সঙ্গে তুলে ধরছে।’

বিরোধী দলে থাকার সময় বিএনপির একদল বিক্ষোভকারী দৈনিক জনকণ্ঠ ভবনে হামলা চালায়। বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনের মতে, ‘বিএনপি বিক্ষোভকারীদের জনকণ্ঠে আক্রমণ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কারণ এটি একটি ‘সরকারি সংবাদপত্র’। প্রকৃতপক্ষে, জনকণ্ঠ একটি স্বাধীন দৈনিক যা তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দল বিএনপি উভয়েরই সমালোচনা করেছে। ওই হামলায় আঠারো সংবাদপত্রকর্মী আহত হয়েছিলেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশীয় বিস্ফোরক, বন্দুক, ঢিল ও বাঁশের লাঠিতে সজ্জিত ছিল। তাণ্ডবের সময় তারা পত্রিকার ১৪টি গাড়িসহ বেশ কয়েকটির দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। গুলিও চালানো হয়। সংবাদপত্রকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের সাধ্যের মধ্যে রেখে প্রসারিত করেন তার শাসনামলে। মুক্তিসংগ্রামে ইত্তেফাক, সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকার প্রগতিশীল ভূমিকা তিনি ভালো করেই জানতেন।

এজন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের সংবাদপত্রকে স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করে দেন। এমনকি সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণমূলক কাজে সরকারি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে সাংবাদিক ও সংবাদের জন্য কাজ করে গেছেন। গণসচেতনতা তৈরিতে তার সাহসী ভূমিকা দেশ ও বাঙালি জাতির নতুন প্রজন্ম স্মরণ করবে যুগ যুগান্তর। মহাকালের সময় স্রোতে তার অবদান প্রোজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

×