যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক স্টিভ জবস। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। বিল গেটস আর ওয়াল্ট ডিজনির নাম বিবেচনায় রেখে বলা যায় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রগতিশীল, প্রভাবশালী, প্রতিভাবান আর সফল প্রযুক্তিক ভাবনার অধিকারী হলেন স্টিভ জবস। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েনের সঙ্গে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওসেরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টসের সদস্যদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তিনি এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে এ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি এ্যাপলে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টয় স্টোরি নামের এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি হাইস্কুল শেষ করেন এবং রিড কলেজে ভর্তি হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেন তার পরেও তিনি ক্যালিগ্রাফিসহ আরও কিছু ক্লাসে যোগদান করেছিলেন। স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কনভোকেশন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে তার জীবনের কথায় বলেন। আমি তোমাদের মাঝে এসে আজ নিজেকে খুব সম্মানিত বোধ করছি। তোমাদের প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার জীবনে কোন গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী নেই। সত্যি কথা বলতে, আমি এই প্রথম কোন গ্র্যাজুয়েশন আনুষ্ঠানে কথা বলতে এসেছি। আজ এখানে আমি আমার জীবনের গল্প বলতে চাই। শুধু এটুকুই এর বেশি না।
আমি রিড কলেজের ছাত্র ছিলাম। সেখানে আমি হাতেগোনা ছয় মাস পড়েছিলাম। তারপর আরপড়া হয়নি। আমার দত্তক মা ছিলেন সুন্দরী ও যুবতী এবং তোমাদের মতো গ্র্যাজুয়েশন নেয়া মানুষ। তবে তিনি একসময় মনে করেন, আমাকে আর তার সঙ্গে রাখবেন না। আমার দত্তক মায়ের একটি মেয়ে শিশু চাই। আমার কখনই স্কুল কলেজ ভাল লাগেনি। এরপর একজন উকিল এবং তার স্ত্রী আমাকে দত্তক হিসেবে নিতে চায়। কিন্তু যখন তারা জানতে পারে আমার জন্মদাতা মা-বাবা কেউই গ্র্যাজুয়েট না তখন তারা তাদের মত পরিবর্তন করে। তবে পরবর্তীতে আমার মা বলেছিলেন আমি কোন একদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করব। এর ১৭ বছর পর আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। এ সময় আমি এমন একটি স্কুলে যাওয়া শুরু করি যেটা তোমাদের স্ট্যানফোর্ডের মতো ব্যয়বহুল। আমার বাবা-মায়ের সঞ্চয়ের সবটুকুই আমার টিউশন ফি দিতে চলে যায়। এভাবে ছয় মাস যায়, আমি চিন্তা করি এভাবে অর্থ খরচ করার অর্থ কি! তখনও জীবন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা জন্ম নেয়নি এবং আরও চিন্তা হয়েছিল এভাবে খরচ করে আমি কতদিন পড়তে পারব। আমি দেখলাম আমার বাবা-মা তাদের জমানো সব অর্থ খরচ করে ফেলেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম পড়ব না এবং এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ওই সময় এই সিদ্ধান্তটি ছিল একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বের। কিন্তু যখন পেছনে ফিরে তাকালাম, দেখলাম এটাই ছিল আমার সেরা সিদ্ধান্ত। এছাড়া আমি আগেই বলেছি আমার স্কুল-কলেজ ভাল লাগেনি। এরপর বলতে চাই, সেই দিনগুলোর কথা। যে দিনগুলো আমার জন্য মোটেই সুখের ছিল না। আমার নিজের থাকার মতো কোন ঘর ছিল না। আমি আমার বন্ধুর ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়েছি। কোকের বোতল দোকানিকে ফেরত দিয়ে খাবার নিতে হয়েছে আমাকে। একটু ভাল খাবারের জন্য প্রতি রবিবার রাতে আমি সাত মাইল দূর হেঁটে হরেকৃষ্ণা মন্দিরে যেতাম। আমি এগুলো করতে তখন ভাল বাসতাম। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমি যখন রিড কলেজে পড়ি তখন এটি ছিল দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। আমাদের ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেয়াল তখন ছাত্রদের হাতে লেখা পোস্টার প্লেকার্ডে ছাওয়া থাকত। তখন আমি আমার একাডেমিক বিষয়গুলো না করলেও চারুকলাবিষয়ক ক্লাসগুলোতে আমার বেশ আগ্রহ ছিল। আমি শিখেছিলাম কিভাবে সাজাতে হয় এবং কিভাবে সৌন্দর্য বাড়াতে হয়। একমাত্র এখানে ছাড়া এর আগে বা পরে আর কোথাও কিছু শিখিনি। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে আমার কাজে লেগেছে।
এর ১০ বছর পর যখন আমরা প্রথম ম্যানিটস কম্পিউটারের ডিজাইন করি, এগুলো সব ফিরে আসে। সত্যি বলছি, আমি ওই তখন যা শিখেছিলাম ওগুলোই আমার কাজে লেগেছে। এবং এভাবে ম্যাক’য়ের ডিজাইন করি এভাবে। আমি মনে করি এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কম্পিউটার। অন্তত ডিজাইনের দিক দিয়ে। আমি এখন মনে করি, যদি আমি ওই সময় কলেজের নিয়মিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে চারুকলার হাতে-কলমের শিক্ষা না নিতাম তবে আজ ‘ম্যাক’ বানাতে পারতাম না। আমি তোমাদের বলব, তোমরা কখনই সোজাসুজি সামনের দিকে তাকাবে না, তোমরা আগে-পেছনের দিকে তাকাও। কি কি বিষয় তুমি নিজে ভালবেসে শিখেছিলে। ওইগুলোর সঙ্গে তোমার ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে। আমি মনে করি আমি খুব ভাগ্যবান। কারণ, আমি আমার জীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম আমার কি ভাললাগে। আমি কি করতে চাই। আমাদের গ্যারেজে আমি এবং আমার বন্ধু এ্যাপলের কাজ শুরু করেছিলাম। তখন আমার বয়স ২০। আমরা এখানে ১০ বছর কাজ করি এবং আজকে এটি ২ বিলিয়ন মূল্যের একটি প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার কর্মী আমদের এখানে কাজ করছে। আমার বয়স যখন ৩০ তখন আমি প্রথম কম্পিউটার বাজারে ছাড়ি। এরপর আমি আমার নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার হই। নিজেই নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার হলাম। কিভাবে? এ্যাপল যখন মাত্র যাত্রা শুরু করে তখন আমরা একজনকে আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য এনেছিলাম। ভেবেছিলাম সে এ কাজে অভিজ্ঞ। তখন আমার মনে হয়েছিল আমার এ জীবন বৃথা। এটা ছিল আমার জন্য চরম খারাপ সময়। তবে তখনও আমার মনে হয়েছে আমাকে তাই করে যাওয়া উচিত যা আমি করতে ভালবাসি। মনে হয়েছে, যে কোনকিছু ঘটতেই পারে। তবে আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমি এভাবে আবার শুরু করি। -ডি প্রজন্ম ডেস্ক
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: