স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ ইমিগ্রেশন নিরুৎসাহিত করতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অভিবাসী বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। শনিবার মানবপাচার রোধে করণীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা বলেন, সাগরে ভাসা মানুষগুলোকে উদ্ধারে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হলেও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মোটেই কাটেনি। কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কত জন নিখোঁজ তার হিসাব কেউ জানে না। জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ। এভাবে আর চলতে পারে না। এজন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিপদসঙ্কুুল পথে পা না বাড়াতে নাগরিকদের সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান তারা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভোরের কাগজ ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার, সুমাইয়া ইসলাম বক্তৃতা করেন। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনশক্তি রফতানি বিশ্লেষক হাসান আহম্মেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ভুক্তভোগী রাজবাড়ীর ধীরাজ কুমার বিশ্বাস। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রতিবছর আমাদের শ্রম বাজারে ২০ লাখের বেশি লোক চাকরি প্রার্থী হচ্ছে। সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। তবে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথ কিংবা স্থলপথে যাতে মানব পাচার না হতে পারে সরকার ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া মানবপাচার রোধে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যারা এই মানুষগুলোকে পাচার করে মুনাফা লাভ করছে তারা এদের ওয়ান টাইম হিসেবে ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যারা পাচার হচ্ছে তাদের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও তারা অর্থনৈতিক মাইগ্রেশন এর শিকার। তিনি বলেন, গোটা সমাজটা যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। ইনসাফের জায়গা থেকে আমরা সরে আসছি। তিনি আরও বলেন, যেখানে ভারত সরকার গরু পাচারে যত সোচ্চার, আমাদের সরকার মানুষ পাচারে সেই পরিমাণে সোচ্চার নয়। মানুষকে তারা গুরু-ছাগল মনে করে।
মূল প্রবন্ধে হাসান আহম্মেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কক্সবাজারের উপকূলের মেরিন ড্রাইভ, টেকনাফ, কোটবাজার সী-বিচ, সোনারপাড়া বাজার, ইনানী, নিদানিয়া এলাকায় জীবিকার সন্ধানে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু মানুষের প্রকাশ্যে হাট বসত, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে অসহায় এসব বিদেশগামী লোকজনদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে ট্রলারে উঠিয়ে দিতো পাচারকারী চক্র। শুরু হতো তাদের বাঁচার যুদ্ধ। মানবপাচারকারীদের টার্গেট হচ্ছে দারিদ্র্যপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত, পশ্চাৎপদ, অনগ্রসর এলাকার লোকজন। এদের মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে কেউ রক্ষা পায়, পক্ষান্তরে মুক্তিপণ না দেয়ায় কেউ-কেউ মৃত্যুবরণ করে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজার, যশোর, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, ভোলা, খুলনা, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সারা বছর অশিক্ষিত-অসহায়-দরিদ্র মানুষদের সংগ্রহ করে এই দালালচক্র।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: