ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় জি এম কাদের

জাতীয় পার্টি ধ্বংস হয়ে গেলে সরকারও সুখে থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২৭ মার্চ ২০২৪

জাতীয় পার্টি ধ্বংস হয়ে গেলে সরকারও সুখে থাকবে না

জি এম কাদের

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি বলেছেন, সরকার আমাদের দলে একটা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে, সরকারের এটা করা উচিত না। আমাদের দল ধ্বংস হয়ে গেলে সরকারও সুখে থাকবে না। মঙ্গলবার জাপার বনানী কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি তা সংসদে বিস্তারিত বলেছি। আইআরআই বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের আগেই আমি সংসদে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন ইস্যুতে খবরের কাগজে নিবন্ধও লিখেছি। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দলের কিছু লোক কথা বলে না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই দল হিসেবে আমরা সংসদে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ, সরকার আমাদের দলের মাঝে একটা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। সরকারের এটা করা উচিত না। আমাদের মতো দল ধ্বংস হয়ে গেলে, সরকারও সুখে থাকবে না। 
জি এম কাদের আরও বলেন, দেশের সকল ক্ষমতা যদি জনগণের হয় তাহলে তারাই নির্বাচন করবে জনপ্রতিনিধি। দেশের মানুষের কি ভোটাধিকার আছে? আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ চেয়েছিলাম, যেখানে সবার জবাবদিহিতা থাকবে। কেন জিনিসপত্রের দাম কমছে না? কেন প্রতিদিনের লাগা আগুন বন্ধ করতে পারছে না? কেন ভেজাল বন্ধ করতে পারছে না? কারণ হচ্ছে, কোথাও জাবাবদিহিতা নেই।

গণতন্ত্রের বড় অবদান হচ্ছে আইনের চোখে সবাই সমান হবে। এখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। আইন করা আছে, সরকারের সমালোচনা করলেই আইনমাফিক মামলা হয়। বৈধভাবেই আমাদের দাবিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এটা কোন স্বাধীন দেশে হতে পারে? মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মুুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাক্সিক্ষত সমাজ নির্মাণ হয়নি এবং আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।

আমরা উল্টোপথে চলছি। মানুষকে নেতা নির্বাচনের অধিকার দিতে হবে, দেশ পরিচালনায় জবাবদিহিতা থাকতে হবে। ৫ টাকার পণ্য ৫ হাজার টাকায় কেনার মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে, রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলছে। এগুলো দেখিয়ে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ গরিব দেশ নয়। অল্পসংখ্যক মানুষের জন্য দেশ গরিব নয়, দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্য বাংলাদেশ গরিব। বেশিরভাগ মানুষই অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ জানে না, কাল তার বাড়িটি দখল হয়ে গেলে বিচারের জন্য কার কাছে যাবে। এমন অসংখ্য অভিযোগ আমরা জানতে পারছি। 

এ সময় জি এম কাদের আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর কথা ছিল। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামে গ্রামে লোক পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করেছিলেন। সেই তালিকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেছে। এখন সেই তালিকা কয়েকগুণ বড় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের লোকদের নাম ঢুকাতেই নতুন করে বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি যাকে ইচ্ছে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢুকিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা মানে, নতুন আরও কিছু লোক ঢোকানো হবে। দেশে নাকি পঞ্চাশ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আছে। এগুলো  বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে। পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংসদ করতে প্রতিটি উপজেলায় জায়গা দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন পল্লীবন্ধু। জাতীয় পার্টি মুক্তিযোদ্ধাদের দলীয়করণ করেননি।

বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের দলীয়করণ করেছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে সরকারের পক্ষে লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। দেশে বৈষম্য ও লুটপাট চলছে। ব্যাংক খালি করে লুটপাট হচ্ছে। গ্লোবাল ফিনানসিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বলেছে, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আর কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তাই দেশ থেকে কত টাকা পাচার হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এখনো পাচার হচ্ছে। আগে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও পাচার হতো। এখন বরং টাকা পাচার আরও বেড়েছে। বর্তমান সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করছে।

বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। কিছু মানুষকে উপরে তুলে ধরা হচ্ছে, আর কিছু মানুষকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। ইতিহাস বিকৃত করে তা ধরে রাখতে আবার আইন করা হচ্ছে। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করেছিল। আমরা সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছিলাম। ভাষার মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছিল, তার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন হয়েছে।

বৈষম্য লালন ও বিভক্তি সৃষ্টি করে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে লুটপাট চলছে। তাই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েই কথা বলতে হবে বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও ইংরেজিতে সব কাজ হতো। এতে গ্রামের সাধারণ ছেলেরা চাকরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। কারণ, গ্রামের ছেলেরা ইংরেজিতে কথা বলতে পারত না। কিন্তু বড়লোকের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া ছেলেরা চাকরি পেত। তাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সকল স্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে আইন করেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন  করেছিলেন।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের এমপির সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় অংশ নেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, নাজমা আখতার, শেরীফা কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ সেলিম, জাতীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ সোবহান প্রমুখ।

×