ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

বাম্পার ফলনে স্বস্তি

-

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাম্পার ফলনে স্বস্তি

সম্পাদকীয়

তীব্র তাপপ্রবাহে সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও বিশেষ করে হাওড়াঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের জীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। হাওড়-বাঁওড়ের প্রায় সর্বত্র বাড়ির আঙিনায় ধান কাটা, মাড়াই, ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কৃষান-কৃষানিরা। আগাম বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় এবার ফলন হয়েছে ভালো। তদুপরি সময়মতো কৃষকের হাতে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহসহ নিয়মিত দেখভাল ও তদারকিতে বোরো আবাদে গত দুই বছরের তুলনায় অর্জিত হয়েছে আশাতীত সাফল্য।

এর পাশাপাশি কৃষক স্থানীয় জাতের পরিবর্তে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের আবাদে। এর ফলেও ফলন হয়েছে অপ্রত্যাশিত। যে সব স্থানে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিক সংকট দেখা গেছে, সেসব স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে কম্বাইন্ড হারভেস্টারÑ যার সাহায্যে ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও গোলাজাত করা যায় একই সঙ্গে। সব মিলিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, বোরোর উৎপাদন এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যা হতে পারে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অন্যতম সহায়ক। 
সিলেট থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত ৭টি জেলায় রয়েছে সুবিস্তৃত হাওড় অঞ্চল। বিশেষ করে বোরো ধান আবাদের জন্য অতি সুখ্যাত জল-জলাশয় পরিবেষ্টিত অঞ্চলটি। বাংলাদেশের প্রধান ফসলও বোরো, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হাওড় অঞ্চলে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে যাবে, যা কৃষক ও সার্বিকভাবে কৃষির জন্য একটি সুসংবাদ অবশ্যই।

ফলনও যথেষ্ট ভালো। যশোর এলাকা থেকেও ধানের ভালো ফলন ও কাটার ইতিবাচক সংবাদ এসেছে। হাওড় অঞ্চলে এখন সাজ সাজ রব। দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহ থাকলেও কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ফসল কেটে তুলছেন গোলায়। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। এবারে বোরো আবাদে জমির পরিমাণ বেড়েছে। বোরো থেকে ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কৃষক একইসঙ্গে সরকারি প্রণোদনা পেয়ে খুশি। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ বীজ, সার, কীটনাশক, সম্পূরক সেচের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাজারে ধান-চালের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকও।
জ্বালানি তেল, বীজ, সার, সেচ খরচ, কৃষি মজুরিসহ বাড়তি ব্যয়ের কারণে ধান-চালের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে কৃষকের। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতিকেজি ধানের দাম ৩২ টাকা, সিদ্ধ চালের ক্রয়মূল্য ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল প্রতিকেজি ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কৃষকের মতে, বাজারে ধানের দাম এর চেয়ে বেশি। তদনুযায়ী নির্ধারিত হয়নি সরকারি ক্রয়মূল্য। এর পাশাপাশি বাড়তি ঝামেলা ও জটিলতার কারণে সরকারি গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে তেমন আগ্রহী নন কৃষক। চালকল মালিক তথা মিলারদেরও একই কথা।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করলে লোকসান গুনতে হয় তাদের। সে অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত কৃষক ও বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ধান-চালের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ। তা না হলে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এর সুযোগ নিতে পারে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে, বাজারেও তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এদিকে সবিশেষ নজর দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

×