ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কেমন বাজেট চাই

ড. জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৩ মে ২০২৩

কেমন বাজেট চাই

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে পেশ করা হতে পারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট

নতুন বাজেট আসন্ন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে পেশ করা হতে পারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে যে, আগামী বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে মূল বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন বাজেট হবে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেট হবে দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট। এটি হবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছিল ২০০৯ সালে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটের মোট আকার ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ১৪ বছর পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর আকার প্রায় ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছর জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। নতুন বাজেট হবে প্রাক্কলিত জিডিপির ১৫.২৮ শতাংশ। এটি হবে সম্প্রসারণমূলক বাজেট। দেশের মানুষের দারিদ্র্য মোচন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেটই আমাদের কাম্য। একটি দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বাজেটের আকার আরও বড় হওয়া উচিত। অদূর ভবিষ্যতে তা জিডিপির ২০ থেকে ২২ শতাংশে উন্নীত করা আবশ্যক। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা দরকার।
আসন্ন বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে সাত শতাংশ। চলতি বছরের বাজেটেও একই হারে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পরে তা নামিয়ে দেওয়া হয় সাড়ে ৬ শতাংশে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, এবার দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.২ থেকে ৫.৫ শতাংশ। আগামী বছর তা ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এ সময় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমান ৩ শতাংশের কম পয়েন্ট থেকে বৃদ্ধি পেতে পারে ৪ শতাংশে। বিগত কয়েক বছরে করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে আগামী অর্থবছরে।

বাংলাদেশ ইতোপূর্বে সোয়া ৮ শতাংশ পযন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আগামী অর্থবছরে তেমনটি সম্ভব না হলেও সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জন করা হয়ত সম্ভব হবে। তবে সমস্যা হবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে। বর্তমানে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৯ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে প্রাক্কলন ৬ শতাংশ। আগামী বছর নির্বাচন হবে। গ্রামেগঞ্জে অর্থের ছড়াছড়ি হবে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভোটারদের তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে সরকার। তাতে বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে আসন্ন সম্প্রসারিত বাজেট। তবে ক্ষেতে খামারে ও কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা স্তিমিত হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে অবকাঠামোর বিকাশ ঘটলে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে জীবনে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে।

মানুষ পাবে স্বস্তি। তবে রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়াতে হবে। স্থিতিশীল করতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাতে মুদ্রা বিনিময় হারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে দেশের নাগরিকদের নিকট থেকে সঞ্চয় ও আমানত বাড়িয়ে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে বাজারে অর্থের প্রবাহ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা হলে মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। নতুন করে উপকারভোগী বাড়ানো হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। তবে টাকার অঙ্কে প্রতিটি ভাতার পরিমাণ বাড়বে খুব কম। বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেতে পারে মাত্র ১০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিমাসে প্রাপ্ত ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৬০০ টাকা। এটা খুবই কম। প্রতিমাসে এ ভাতার পরিমাণ জনপ্রতি কমপক্ষে ১০০০ টাকা হওয়া উচিত। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে। এটা মূল্যস্ফীতির হার অনুসারে ৯ শতাংশ হতে পারে। দরিদ্র ও কম বেতনের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তা কিছু বেশিও হতে পারে। তবে বড় আকারের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবি পরিহার করা উচিত।

যাতে করে দেশের বেসরকারি খাতের কর্মচারী ও দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে সরকারি চাকুরেদের বৈষম্য আরও বেড়ে না যায়। সর্বশেষ, ২০১৫ সালে বাস্তবায়িত নতুন পেস্কেলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর চেষ্টা করা উচিত। সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা তেমন না বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। তাতে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। সমাজে স্বস্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। 
বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাতওয়ারি বরাদ্দ। উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে খাদ্য সংকট নিরসন হয়, ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, নতুন কর্মসংস্থান হয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং তা দারিদ্র্য মোচনে হয় সহায়ক। কৃষি একটি প্রধান উৎপাদনশীল খাত। এ খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে খাদ্য ও পুষ্টির সরবরাহ বাড়ে। খাদ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আসে। ফলে, খাদ্যভোগ বেড়ে যায় সাধারণ মানুষের। আমদানি হ্রাস পায়। সে কারণে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ খাতের উন্নয়ন বরাদ্দ ও ভর্তুকি দ্রুত বাড়ানো হয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তাতে কিছুটা উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে হারে মোট বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে কৃষি বাজেট বাড়ছে না। ২০১০-১১ সাল থেকে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত মোট বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪৬ শতাংশ।

কৃষি বাজেট বেড়েছে ১৮০ শতাংশ। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন উভয় খাতেই বাজেট বৃদ্ধির ধীরগতি দৃশ্যমান। দেশের মোট বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের (কৃষি-৫ অর্থাৎ কৃষি (শস্য), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বন ও পরিবেশ, ভূমি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়) হিস্যা (২০১০-১১ সালে) ছিল ১০.০৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ সালে তা ৬.২% শতাংশে হ্রাস পায়। ওই সময় কৃষি ভর্তুকির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল অনেকটা স্থবির। প্রতিবছর কৃষি ভর্তুকি প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত ছিল। গত বছর বাজেটে কৃষি ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটিতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের কৃষি ভর্তুকি খাতে এবার খরচ হয়েছে চল্লিশ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ইতোমধ্যে সারের দাম বেড়েছে, বীজের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পানি সেচের দামও বেড়েছে। তাতে কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কমেছে কৃষকের লভ্যাংশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আসন্ন বাজেটে কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিসহ মোট বাজেটের ন্যূনপক্ষে ১২ শতাংশ অর্থ বৃহত্তর কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া উচিত।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামগুলোতে ক্রমান্বয়ে শহরের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। আওয়ামী লীগের অত্যন্ত জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। একটানা দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এর বাস্তব অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে, তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। তবে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাজেটের হিস্যা খুব কম। চলতি বাজেটে ছিল ৬.৬ শতাংশ। সমগ্র কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট বাজেটের হিস্যা ছিল ১৯.৩৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৮১ শতাংশে।

স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিকল্পিত অর্থনীতির যাত্রা শুরু করেছিল কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৩১ শতাংশ আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে। ক্রমেই তা হ্রাস পেয়েছে। এখন তা বাড়ানো দরকার। মোট বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ অর্থ কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতের জন্য নির্ধারণ করা আবশ্যক।
আমাদের বাজেটের দুর্বলতা হচ্ছে উন্নয়ন ব্যয় ও পরিচালনা ব্যয়ের মধ্যে বড় ফারাক। এই পার্থক্য কমানো উচিত। ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল ৩০ শতাংশ । চলতি বছরের বাজেট নাগাদ তা কিছুটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। বাকিটা পরিচালন ব্যয়। এর অর্থ হচ্ছে সরকার পরিচালনায় খরচ অনেক বেশি। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের আকার ছোট করা। খরচ কমানো। বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহায়তা করে এগিয়ে নেওয়া। আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে উন্নয়ন বাজেট দ্রুত বাড়াতে হবে।

আরও মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে প্রতিবছর। বাস্তবায়ন করতে হবে পদ্মা  সেতুর ন্যায় আরও অনেক বড় কর্মকা-। এর জন্য সাহসী পদক্ষেপ দরকার। উন্নয়ন খাতে ক্রমাগতভাবে বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকারের পরিচালন ব্যয় সংকুচিত করা দরকার। সরকারের আমলাদের ক্ষমতায়নের কথা না ভেবে জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাজেট বড় হলে হাত খুলে খরচ করা যায়। বিভিন্ন দায় মেটানো যায়। অঙ্গীকার পূরণ করা যায়। জনবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া যায়। আরও অনেক সুবিধা। সমস্যা হচ্ছে এর অর্থায়ন। আমাদের কর আদায়ের হার কম। কর জিডিপি অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশের মতো। এটি ২০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত। আসন্ন বাজেটে এনবিআর, এনবিআর বহির্ভূত এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব থেকে মোট ৫ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

সে হিসেবে আগামী বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এর পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬.২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়ায় মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক আদায় কম হবে। আগামী বছরও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত না হলে এবং ডলার সংকটের কারণে আমদানি সংকুচিত হলে রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হতে পারে।

আমাদের রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে এখনো মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং আমদানির শুল্কের প্রাধান্য বিদ্যমান (৩৮%)। আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণের হার অপেক্ষাকৃত কম (৩২%)। মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ একই হারে পরিশোধ করে থাকে।  ব্যতিক্রম হলো আয়কর। এটি প্রত্যক্ষ কর। এটি গ্রহণ করা হয় প্রগতিশীল হারে। এর মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
একাত্তরে আমরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম, তাদের লক্ষ্য ছিল একটা শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। যাতে স্বাধীনতার সুফল সবাই সমানভাবে উপভোগ করতে পারে। দেশের প্রথম দুটো বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটেছিল। পরবর্তীকালে সে অবস্থা থেকে আমরা ক্রমেই দূরে সরে এসেছি। আশ্চর্যান্বিত হয়ে মানুষ দেখেছে কিভাবে ক্রমবর্ধিষ্ণু দুর্বৃত্তায়ন ও বৈষম্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। এই দুঃস্বপ্ন থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে চাই বিনিয়োগ। আমরা চাই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন ও উন্নয়ন। আসন্ন বাজেটে এর প্রতিফলন দেখতে চাই। 

লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা; পরিচালক, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ

×