ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

প্রস্তুতি সম্পন্ন ॥  রেমালে  ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলে স্থগিত থাকবে

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন কাল

​​​​​​​শরীফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০০:১৬, ২৭ মে ২০২৪

তৃতীয় ধাপের উপজেলা  নির্বাচন কাল

.

আগামীকাল মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপে  দেশের ৪৭ জেলার ১০৯ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটগ্রহণকালে বিশৃংখলা ঠেকাতে কঠোর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশে থাকবে ত্রিস্তরের নিরাপত্তা বলয়। আগের দুই ধাপের চেয়ে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসিসহ সকল অংশীজন তৎপর। এদিকে রেমালে ক্ষয়ক্ষতি বাড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচন স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংস ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। মে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৬ দশমিক শতাংশ। এটি উপজেলা নির্বাচনে সর্বনি¤œ  ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড।  এর পর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা আগের ধাপের চেয়ে কিছু বেশি। তাই ২৯ মে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে যাতে আরও বেশি ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সকল অংশীজন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের আগে রবিবার মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার। তবে এখন বিভিন্ন কৌশলে চলছে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থক স্বজনদের শেষ মুহূর্তের ভোট প্রার্থনা। তবে প্রতিটি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় এবং কোনো কোনো এলাকায় কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে মন্ত্রী এমপিদের সরাসরি সমর্থন থাকায় এসব এলাকায় নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করেছে বিভিন্ন মহল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব এলাকার প্রতি কঠোর নজরদারি রেখেছে বলে জানা যায়।

রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আগের দুই ধাপের মতো তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে দলটির বেশ জন স্থানীয় নেতা। তবে ইতোমধ্যেই তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাড়া যেসব স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রকাশ্যে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছে তাদেরও বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে রবিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, রেমালে ক্ষয়ক্ষতি বাড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রার ক্ষয়ক্ষতির ওপর নির্ভর করবে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত। আমরা মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছি। ঝড় আঘাত হানার পর ক্ষয়ক্ষতির খোজখবর নিয়ে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ভোটের দিন প্রতিটি উপজেলায় থাকবে ত্রিস্তরের নিরাপত্তা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ আনসার বাহিনী নিয়োজিত করার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ্যাব বিজিবি টহলরত থাকবে। আর সব এলাকায় সাদা পোশাকে থাকবে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার  লোকজন। যদি কেউ নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

দেশে চারধাপের উপজেলা নির্বাচন শুরু হয় মে থেকে। জুন পর্যন্ত চার ধাপে শেষ হবে ৪৯৫টির মধ্যে ৪৮১টি উপজেলার নির্বাচন। তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিটি কেন্দ্র আশপাশের এলাকায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৭জন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ঝঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের করা হবে। সাধারণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিও দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতি ইউনিয়নে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ছাড়া মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের দিন মঙ্গলবার ১০৯ উপজেলায় সাধারণ ছুটি থাকছে।

তৃতীয় ধাপে সারাদেশের ৪৭টি জেলার মধ্যে যে ১০৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ; নীলফামারী সদর; দিনাজপুর জেলার খানসামা, সদর চিরিরবন্দর; লালমনিরহাট সদর; রংপুর জেলার গংগাচড়া সদর; কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী নাগেশ্বরী; গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর সুন্দরগঞ্জ। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর, সদর শিবগঞ্জ; নওগাঁ জেলার আত্রাই রাণীনগর, রাজশাহী জেলার পবা মোহনপুর; নাটোর জেলার গুরুদাসপুর বড়ইগ্রাম; সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর (ইভিএম) চৌহালী (ইভিএম); পাবনা জেলার সদর (ইভিএম), আটঘরিয়া (ইভিএম) ঈশ্বরদী (ইভিএম)

খুলনা বিভাগের যশোর জেলার অভয়নগর (ইভিএম) বাঘারপাড়া (ইভিএম); বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ডুমুরিয়া; সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া সদর। বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার গৌরনদী আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ দুমকি; পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া (ইভিএম); ভোলা জেলার তজুমদ্দিন লালমোহন, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর কাঁঠালিয়া; বরগুনা জেলার বামনা পাথরঘাটা।

মানিকগঞ্জ জেলার সদর (ইভিএম) সাটুরিয়া (ইভিএম); ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা সদরপুর; শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা (ইভিএম) গোসাইরহাট (ইভিএম), নরসিংদী জেলার শিবপুর; টাঙ্গাইল জেলার সদর, দেলদুয়ার নাগরপুর; মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান শ্রীনগর; কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, তাড়াইল, করিমগঞ্জ মিঠামইন।

ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া, ঈশ্বরগঞ্জ ত্রিশাল; জামালপুর জেলার মেলান্দহ (ইভিএম) মাদারগঞ্জ (ইভিএম); নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, মদন খালিয়াজুড়ী। সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক দোয়ারা বাজার; মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল; হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, সদর শায়েস্তাগঞ্জ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ বাঞ্ছারামপুর; কুমিল্লা জেলার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর দেবীদ্বার; চাঁদপুর জেলার কচুয়া (ইভিএম) ফরিদগঞ্জ (ইভিএম); ফেনী জেলার সোনাগাজী, ফেনী সদর, দাগনভূঞা; নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী সদর কোম্পানীগঞ্জ; লক্ষ্মীপুর জেলার সদর; চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া চন্দনাইশ; কক্সবাজার জেলার উখিয়া (ইভিএম), টেকনাফ (ইভিএম) রামু (ইভিএম), খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি; রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ার চর, লংগদু বাঘাইছড়ি।

 

 

×